সন্ধ্যের আগেই শীতের এইসব ক্ষীণ দিন
ঢেকে ফেলে ডাইনীর চুলের মত আঁধার।
দু'একদিন আমাকেও তো কেমন ভুতে পেয়ে বসে
রোজ রোজ অচেনা রিক্সাওয়ালাকে চেনা পথ
চিনিয়ে চিনিয়ে ঘরে ফিরতে ভীষণ একঘেয়ে লাগে।
আমি পথ হাঁটি গন্তব্যে যাবো বলে
অথচ আজন্ম বাউল মনের সাধ
যাযাবর জীবনের পথে।
গৃহে নয়, গন্তব্যে নয়
ভাবি,পথ আমাকে নিয়ে যাক
দূরে, বহুদূরে অচেনা অন্য কোথাও।
এই পথ কোনোদিন আর না ফুরাক।
মাথার ভেতরে উদ্ভ্রান্ত চিন্তা;
অবসন্ন পায়ে আমি হেঁটে চলি
আমার পাশে বিকেলের ছুটি হওয়া বিদ্যায়তন, জনশূন্য খেলার মাঠ, মোড়ের চায়ের দোকান
সব কেমন বহুকাল আগের
স্থিরচিত্র বলে ভ্রম হয়।
মনে হয় কোনো পরিত্যক্ত ভৌতিক নগরে
আমি যেন সত্যিই হারিয়ে গিয়েছি এই শীতসন্ধ্যায়।
কুড়োনো কাগজ কিছু জড়ো করে
অদূরে পথশিশুরা আগুন জ্বেলেছে।
মনে পড়ে , এমন শীতরাতে
উনুনের আঁচে হাত সেঁকতে সেঁকতে
কত রূপকথা শুনেছি ছেলেবেলায়।
হয়তো শিশুদের দল গায়ে আলোয়ান জড়িয়ে
শরষে খেতের আলে আলে আজও
ছোঁটে ফড়িং হয়ে শীতের সকালে।
একদিন আমিও শামিল ছিলাম ওদের দলে!
কত বছর হয়ে গেল আমি শরষে ফুলের মাঠ দেখিনি।
ফুলের পাপড়ি থেকে রেনু তুলে গালে মাখিনি।
জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ভোরের শিশির,
হলুদ গাদার মৌ মৌ গন্ধ,
পানাপুকুর, ঢোলকলমির ঘাট
এমন আরও কত শত শীতের আনন্দ আমার।
এখনও এই শীতের কালে অনেকে হয়তো
খড়-কুটো জ্বেলে গল্পে গল্পে আগুন পোহায়
আমার দূর পাড়াগাঁয়ে গোল হয়ে বসে।
কিন্তু এই পাথুরে পথ, বহুতল ভবনের
বনসাই জীবন পেরিয়ে আমার আর
কোনোদিনই যোগ দেয়া হবে না ওদের দলে।