• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০১৯, ০৬:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২১, ২০১৯, ০৬:৩৯ পিএম

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

রেশাদ মাহমুদ : নিভৃতচারী এক নক্ষত্রের  নাম

রেশাদ মাহমুদ : নিভৃতচারী এক নক্ষত্রের  নাম

নব্বই দশকের শুরুর দিক, তখন থেকেই তাঁর নামটার সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছি খুব ভালো মতো। ঢাকা শহরের দাপুটে জিঙ্গেল স্রষ্টা, রক গায়ক এবং প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে তাঁকে চিনতাম। ঘটনাক্রমে গুরুজি নীলুফার ইয়াসমিনের বাড়ির সামনে তাকে দেখেছিলাম বেশ কয়েকবার। আরো একবার প্রয়াত সুরকার এবং আমার শৈশবের গুরুজি পারভেজ রবের সঙ্গে গিয়েছিলাম এলভিসে ফুয়াদ নাসের বাবু ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে ও একটা অডিও এলবামের বিষয়ে কথা বলতে। সেখানে রেশাদ মাহমুদের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো।তাঁর সঙ্গে যোগসূত্রটা হয়ত সেখান থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছিলো।

সেও তো কতোকাল হয়ে গেলো, কিন্তু অন্তর্জালের পৃথিবীতে নতুন করে পুরোনো মানুষগুলোকে খুঁজে পেতে শুরু করলাম যখন তখন দেখা হলো অন্য এক রেশাদ মাহমুদের সঙ্গে ততদিনে যিনি খ্যাতনামা শেফ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন রন্ধন শিল্পে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাঁর সঙ্গে যুক্ত হবার সুযোগ করে দিলো দু’দশক পরে, সময় পেরিয়ে গেছে কিন্তু তিনি থমকে আছেন তারুন্যে। মুখবইয়ের কল্যাণে নিবিড় ভাবে তাঁর কাজগুলো পর্যবেক্ষন করতে শুরু করলাম। মুগ্ধ এবং বিস্মিত হলাম তাঁর সৃজনশীলতার পরিধি দেখে। 

সঙ্গীতের পথকে সঙ্গে নিয়েই তিনি হেঁটে চলেছেন অন্য এক পথে, প্রশিক্ষন নিয়েছেন কালিনারী আর্টসে সিটি এন্ড গিল্ড, লন্ডন ইন্সটিটিউট থেকে। তিনি বিশ্বাস করেন সঙ্গীত এবং রন্ধনশিল্প দুটোরই ভিত্তি এক কেননা সৃষ্টিশীল না হলে কোনটাই করা সম্ভব নয়। ফুড ফর থটস্ নামে একটি এশিয়ান রন্ধন আয়োজনে বিগত কয়েকবছর ধরে তিনি উপস্থিত থাকছেন, কাজ করেছেন বুচার সহ অনেক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে এবং কাজ করছেন রন্ধন পরামর্শক হিসেবে। বাংলাদেশে আয়োজন করছেন রন্ধন প্রতিযোগিতা ।

রেশাদ মাহমুদ হংকংয়ের টম লি মিউজিক স্কুল থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন সিনথেসাইজারে। বাংলা সঙ্গীত জগতে তিনি কাজ করছেন সঙ্গীত আয়োজক এবং সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে। তিনি লিড ভোকাল ছিলেন ওয়ারফেজ ব্যান্ডে, যুক্ত ছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীতদল ফিডব্যাকের সঙ্গেও। তাঁর প্রথম এলবাম ‘আর নয় সন্ত্রাস’ সে সময়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। গ্রহান্তরি ভালোবাসা, ইচ্ছে করে, জন্ম, অজান্তে হঠাৎ নামে এমন অসংখ্য জনপ্রিয় এলবাম উপহার দিয়েছেন একে একে আমাদেরকে। এমনকি বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন শিল্পে তিনি একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন একটা সময়ে, সেজন্য তিনি জিঙ্গেল কিং নামেও খ্যাত।  এই শিল্পীর সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায় , তার সাফল্যের পেছনে সবচাইতে বেশি অবদান রেখেছেন তাঁর জননী, যিনি তাঁকে প্রথম ইন্সট্রুমেন্ট কিনে দেন, বাইরে পড়তে যেতে উৎসাহিত করেন এমনকি এখনও পর্যন্ত রেশাদের সব কাজে উৎসাহ যোগান তিনি। মায়ের নিরবিচ্ছিন্ন অনুপ্রেরণা রেশাদ মাহমুদকে এগিয়ে নিয়ে যায় আরো সমুখে। এক কণ্যা সন্তানের জনক রেশাদ মাহমুদ স্বতন্ত্র্য তাঁর প্রতিটি কর্মে। তিনি সৌন্দর্যকে ধারন করেন অন্তরে তাই তাঁর সকল কাজে ভিন্ন মাত্রার দ্যুতি ছড়ায়।

রেশাদ মাহমুদ অনন্য এক অনুপ্রেরণার নাম, যিনি নিরবে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন আমাদের জন্য। কদিন পরেই (২৭ অক্টোবর) পালিত হবে তার তাঁর জন্মদিবস, তাঁর কর্মের বিশেষ অনুরাগী এবং ভক্ত হিসেবে তাঁকে  শুভকামনা, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জানাতেই এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। কামনা করি তাঁর সামনের পথগুলো আরো উজ্জ্বলতর হোক, তিনি আপন মহিমায় উদ্ভাসিত থাকুন আমৃত্যু এবং তাঁর কল্যাণ হোক। শুভ হোক জন্মদিন প্রিয় রেশাদ মাহমুদ।