• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০১৯, ০১:০৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৩, ২০১৯, ০১:০৫ এএম

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিয়ানমারের গণহত্যা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ‘অন্তর্ঘাতমূলক সংঘাতের’ শঙ্কায় সার্ক অঞ্চল

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ‘অন্তর্ঘাতমূলক সংঘাতের’ শঙ্কায় সার্ক অঞ্চল

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন বাংলাদেশে সংঘটিত বর্বর গণহত্যা বিষয়ে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয় আলোচিত রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুটি।

এ প্রসঙ্গে সম্মেলনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে দাবি করা হয় যে, রোহিঙ্গা সমস্যা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সমাধান করা না হলে তা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সদস্যদের মাঝে ‘অন্তর্ঘাতমূলক সংঘাত’ হিসেবে দেখা দেবে।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর বাংলা একাডেমিতে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে।

"রোহিঙ্গা সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান নিশ্চিত করা না হলে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে শিগগিরই বিভিন্ন অন্তর্ঘাতমূলক সংঘাত তৈরি হবে। এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠী যে সকল সহিংস কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়বে তার ভোগান্তি থেকে ভারত, বাংলাদেশ কেউ বাদ পড়বে না।"

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের লেখক, ইতিহাস গবেষক ও ভাষাতাত্ত্বীকদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী আসরে উপস্থিত মাননীয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, 'এই জাদুঘরের বিস্তারে যত ধরণের সহযোগিতার প্রয়োজন আমরা করব।'

উক্ত সম্মেলনের আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক হাশেম খানের স্বাগত বক্তব্যের পর গণহত্যা বিষয়ে বক্তব্য দেন ভারতের স্বনামধন্য সাংবাদিক হিরন্ময় কর্মকার।

সম্মেলনে গণহত্যা প্রসঙ্গে বক্তব্য উপস্থাপনকালে জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান নিশ্চিত করা না হলে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে শিগগিরই বিভিন্ন অন্তর্ঘাতমূলক সংঘাত তৈরি হবে। এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠী যে সকল সহিংস কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়বে তার ভোগান্তি থেকে ভারত, বাংলাদেশ কেউ বাদ পড়বে না। সার্কের স্বার্থেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।

সম্প্রতি এই ইস্যুতে জাতিগত নিপীড়নের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে গাম্বিয়া, তার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আজকে আমরা যদি ঘাতক-খুনিদের বিচার করতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাই, তবে আমার বিশ্বাস, আমরা পাকিস্তানিদেরও বিচার করতে পারব। পাকিস্তানিদের বিচার করতে পারলে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এই কাজের সাহস পেত না।'

ভাষাতাত্ত্বীক ও ইতিহাস গবেষক মাসুম খান 

উদ্বোধনী দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে, এক একান্ত আলাপচারিতায় সম্মেলনে উপস্থিত তরুণ ইতিহাস গবেষক ও ভাষাতাত্ত্বীক মাসুম খান দৈনিক জাগরণকে বলেন, '১৯৭১ সালের ইতিহাস স্মরণে রেখেই মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি উদার মানবিকতা প্রদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গাদের সংকটাপণ্ণ পরিস্থতি বিবেচনা করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের জনগণ ও তার সরকারের এই উদার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা উচিত বিশ্ব বিবেকের।'

সম্প্রতি ভারতের প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস সংক্রান্ত এক গবেষণায়- উপমহাদেশীয় সভ্যতার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ম্যাক্স মুলারের 'আর্যতত্ত্ব' অগ্রহণযোগ্য দাবি করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের এই তরুণ গবেষক। তার মতে, বহিরাগত কোনো জনগোষ্ঠী নয়, বরং সিন্ধু সভ্যতার মত সুবিস্তৃত ও সমৃদ্ধ একটি প্রাচীন মানব সভ্যতার- উত্থান, বিকাশ ও বিস্তারের অবদান এ অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীরই।

"নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি উদার মানবিকতা প্রদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গাদের সংকটাপণ্ণ পরিস্থতি বিবেচনা করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের জনগণ ও তার সরকারের এই উদার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা উচিত বিশ্ব বিবেকের"

এই বাংলাদেশি ইতিহাস গবেষক বলেন, 'বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে এক অপার সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিটি পদক্ষেপে এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও স্বকীয় ঐতিহ্যের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ এই রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের মাধ্যমে সেই সমৃদ্ধ ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে। যা বাঙালি জাতিস্বত্তার অবমাননা।' 

এক প্রশ্নের জবাবে মাসুম খান বলেন, 'উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধ প্রবণতা, বিঘ্নিত হচ্ছে সে অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবন। এতে করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও উপকূলীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন হুমকির মুখে রয়েছে, তেমনি আঞ্চলিক সংকট সৃষ্টির সম্ভাবনাও বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে তাদের নিজভূমে নিরাপদ জীবনের সুযোগ করে না দিলে এই বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী এক সময় উগ্রবাদীদের ইন্দনে বিপথগামী হবে যা মোটেও কাম্য নয়। বিষয়টি সমাধানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সর্বোচ্চ তৎপরতা কাম্য। শান্তি প্রিয় বাংলাদেশের উদারপন্থী মনোভাবের প্রতি সারা বিশ্বের শ্রদ্ধাশীল হওয়াটা একান্ত কাম্য।'

সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া সফরে যায়। তারা ভিক্টরি মিউজিয়াম দেখতে গেলে সেই জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান এল্ডার ইয়ানি বকেভ খুলনায় প্রতিষ্ঠিত ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সম্প্রসারণে কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দেন।

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প হিসেবে থাকা এ জাদুঘরটি এখন স্থায়ী অবয়ব পেতে চলেছে। এ নিয়ে ‘কনস্ট্রাক্ট অব আর্কাইভ অ্যান্ড মিউজিয়াম-১৯৭১: জেনোসাইড-টর্চার’ শিরোনামে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পও রয়েছে।

যুক্তরাজ্য, মিয়ানমার,কম্বোডিয়া, ইতালি,ভারত ও বাংলাদেশের অর্ধ শতাধিক লেখক, ইতিহাস গবেষক ও ভাষাতাত্ত্বীকগণ দুই দিনের এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এসকে