• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ০৪:৫৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ০৪:৫৫ পিএম

মনসুর হেলালের কবিতা 

মনসুর হেলালের কবিতা 

স্থিরচিত্র
এই রাত দীর্ঘ নয়
তবু দীর্ঘয়িত হয় তোমায় ছায়ায়। 
ক্ষয়িষ্ণু স্মৃতির ভাঁজে ধুন্ধুমার বেজে ওঠে 
বোধের নূপুর।

এই রাত মৌণতার নয়
নিস্পৃহ শয্যারও নয়;
কোনো এক কালোত্তীর্ণ শিল্পের মতন ব্যাপকতা নিয়ে
এই রাত অনিমেষ তোমাকে দেখার। 

তোমাকে দেখার মানে প্রাকৃতিক চারুকলা
নৃতত্তে¡র নান্দনিক প্রবাহকে দেখা। 
ধিকৃত অন্ধতা আর তিক্ত গ্লানির বিরুদ্ধে 
কোমল ধিক্কার। 

এই রাত কুসুমিত নয় 
তবু বিচ্ছুরিত হয় তোমায় প্রভায়। 
স্থির জলে সুদূরের গ্রহণ দেখার মতো
এই রাত নির্ণিমেষ তোমাকে দেখার।  


নিষিক্ত প্রণালী 
তখন নিরব ছিল বিরিঞ্চিত উপত্যকা
বিবর্ণরাজিতে ঢাকা নিথর সন্ধ্যায়
তোমার নিভাঁজ অস্তিত্বকে ঘিরে
কেঁপে ওঠে কতিপয় ছায়ার শরীর।

অন্তিম¯^রের মতো কেঁপে ওঠে মাটি
কেঁপে ওঠে ধুন্ধুমার নিষিক্ত প্রণালী।
তবুও তোমার কণ্ঠ থেকে
একটি শব্দও নিঃসৃত হলো না
তাকালে না একবারও।

সীমান্তবিহীন নির্বিরোধ যাতায়াতে
যে তুমি নির্ভয়ে প্রকম্পিত কর
নিদ্রাহীন রাতের প্রহর। 
কিন্তু এই আপতিক শূন্যতায় 
অপার শায়িত হলে তুমি
কেন তুমি আচ্ছাদিত হলে নিস্তরঙ্গ
জলের শয্যায়?

প্রশ্ন নেই প্রশ্ন নেই, পূবেতে সাগরনিধি
পশ্চিমে পাহাড়।

নিষিক্ত পরাগ
রক্ত রসে মঞ্জরিত নিষিক্ত আঙুর 
বিষাদের তরুছায়া ক্ষমা কর। 
তাপিত অঙ্গার জুড়ে ভীষণ তাড়িত 
তিক্ত মেঘের গর্জন। 
কার্বনের বিষবাষ্পে পরিত্যাজ্য সমূহ বসতি
দু’চোখের জলাধারে বোধ-ক্রোধহীন সিঞ্চনের দায় 
পূর্ণগ্রাসে নাড়া দেয় সীমাবদ্ধ জলে। 

করতলে কীটদষ্ট সিসার প্রলেপ
অবরুদ্ধ হাওয়ায় আচম্বিতে থেমে যায়  
রক্ত কলরোল; দেহ থেকে খসে পড়ে 
বোধের অতীত। কাঠ-কয়লার পোড়া ক্ষতে 
দ্বগ্ধীভূত অন্ত্যজ প্রণয়। 

দুর্র্বিনীত তরুছায়া নিষিক্ত পরাগ
দিগন্তের ভাঁজ খুলে তোমাদের পেতে চাই 
বুকের নাগালে। 
তবু কেন এই অভ্যূদয় এই চেতনা বিলাস 
দূর হস্তে প্রসারিত হয় কালিক উনুনে?  

বিব্রত আঁধার 
বিদায় বিদায় বলে, প্রস্থানে উদ্যত যতই পা
না, না চীৎকারে ততই উঠছে মেতে 
পাত্র সভাসদ। 

নিঃসঙ্কোচ প্রকাশে যতই বলি 
আর নয়, আর নয় 
ততই উঠছে ফুঁসে পথের দ্রাঘিমা। 
ধীর লয়ে ওঠে আসে অব্যর্থ পীড়ন
কেউ গতি রোধ করে
কেউবা খামচে ধরে সমূহ বসন। 

মঞ্চের পর্দা নেমে আসলেই
কুশীলবরা ছুটে যাবে যে যার গন্তব্যে। 
বিব্রত আঁধারে ছেয়ে যাবে প্রতিটি আসন
মিলনায়তন জুড়ে শুরু হবে লোকশূন্য  
শোকের মচ্ছব। বন্ধ হবে তার প্রতিটি দুয়ার
তীব্র হুইসেলে দ্রুত বিদায়ের তাড়া দিবে 
বয়স্ক প্রহরী।

নিঃসঙ্গ আক্রোশে যতই বলি না, না 
স্থিতি স্থাপকের বাহুল্যতা ছুঁবেনা তোমাকে
গমনাগমন নির্ধারিত; 

তোমাকে যেতেই হবে।               

বৈরীতার নুন 
নগ্ন নধর দেহে হাঁটুজল ভেঙে
কাঁধে নিয়ে বিশ্বাসের ঝাঁপি
রক্তঘামে সিক্ত পাললিক মৃত্তিকায়
সংবর্ধিত ফসলের শস্যকণা 
ছড়িয়ে ছিটিয়ে তুমি এইখানে এলে। 

কেন এলে? 

প্রাকৃতিক বর্ণবাদ, পাহাড়ের ধস
প্রাক্কলিত জোয়ারের নোনা 
এই বুক দিয়ে তুমি কতটা ঠেকাবে? 

নিঃশ্বাসের ভাঁজে ভাঁজে বৈরীতার নুন
আর অমীমাংসিত সত্যের দীর্ণ প্রাচীর পেরিয়ে 
হাতে নিয়ে রক্তজবা কেন তুমি এলে।