• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ০২:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ০২:৩৩ পিএম

 রক্তমাখা যুদ্ধকথা: মুক্তির ইতিহাসের অনন্য পাঠ

 রক্তমাখা যুদ্ধকথা: মুক্তির ইতিহাসের অনন্য পাঠ

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জন্ম জরুল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি পায় স্বাধীন সার্বভৌম একটি ভূখন্ড, একটি মানচিত্র,একটি পতাকা । তার জন্য তাকে লড়তে হয়েছে নয় মাস। প্রশিক্ষিত পাকিস্তানী বর্বর বাহিনীর সঙ্গে লড়েছে ভুখা-নাঙ্গা  বীর বাঙালি ।  দেশমাতৃকার সেই দুদিনে স্কুল -কলেজ বিশ্ববিদ্যিালয় থেকে এসেছিলো ছাত্র- মাঠ থেকে ক্ষেতের কিষাণ-কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক , হাসপাতাল থেকে ডাক্তার, উকিল, প্রকৌশলী, শিল্পী- সাংবাদিক, পুলিশ ,মিলেটারি,ইপিআরসহ বিভিন্ন বাহিনী থেকে দেশ মাতৃকা্র টানে ছুটে এসেছিলো দেশপ্রেমিক জনতা। সর্বস্তরের মানুষের জনযুদ্ধ শুরু হয় দেশে।

পার্শ্ববর্তী বন্ধুদেশ ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে জনযুদ্ধ তীব্র আকার ধারন করে। যে মানুষ কোনদিন অস্ত্র দেখেনি,স্বপ্নেও শত্রু মোকবিলার কথা ভাবেনি- সেই মানুষ হাতে তুলে নিয়েছিলো প্রতিরোধের অস্ত্র। তারপরে ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের নহর ও ২ লক্ষ মা-বোনের আত্মদানের বিনিময়ে আসে আমাদের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে এই গণবিপ্লব ১৯৭৫ সালের একটি প্রতিবিপ্লবের মধ্য দিয়ে নস্যাৎ হয়ে যায়। স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে একটি পাকিস্তানপন্থী সরকার অধিষ্ঠিত হয়। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয স্বাধীনতা বিরোধীরা । হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যায়। বার বার সেনাশাসন, অস্থিতিশীল রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশাকে বিনষ্ট করে দেয়। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা অনাদর অবহেলার নির্মম শিকার হন।

মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা ক্ষমতায় থাকোর কারনে যাদের জন্য মুক্ত হলো দেশ, জীবন বাজি রেখে যারা মরণপন যুদ্ধ করেছে তারা থাকলো অবহেলিত। এদের বীরগাথা কেউ জানতে চায়নি .তা্ই সেইসব মরণপন যুদ্ধদিনের ইতিহাস আজও রচিত হয়নি। সালেক খোকন একজন লেখক ও গবেষক। তিনি মাঠে ঘুরে মরণপন লড়াইয়ের সব সৈনিকদের যুদ্ধ দিনের বীরগাথা সংগ্রহ করেন। তার এই সংগ্রহ হয়ে উঠছে মুক্তিযুদ্ধের অনবদ্য ইতিহাস। প্রতিনিয়তহ তিনি করে যাচ্ছেন এ কাজ। তার আবিস্ক আমাদের দেশের জন্ম ইতিহাসের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। প্রত্যহ করা কাজের অংশ হিসাবে তার নতুন যে গ্রন্থটি হাতে এসেছে সে বইয়ের নাম ১৯৭১: রক্তমাখা যুদ্ধকথা। এই বইয়ের মুখবন্ধে তিনি তার অন্তর্গত কথাটি বিধৃত করেছেন।‘ মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কিংবা স্বাধীনতার জন্য হারিয়েছেন নিজের অঙ্গটি সেসব আত্মত্যাগী ও সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ও বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার কথাগুলো সংগ্রহ করছি প্রায় আট বছর ধরে।

আমার কাছে একেকজন মুক্তিযোদ্ধার জীবনের গদ্যই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একেকটি ইতিহাস। তাই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধদের ভাষ্য থেকে ইতিহাস সংগ্রহের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রেকর্ড করেছি মুক্তিযুদ্ধও দেশ নিয়ে তারে না বলা কথাগুলো’(লেখকের কথা)সুতরাং তিনি যে কাজটা করছেন তা জানান দিয়েই করছেন। বিশেষত তার আবিস্কার গুলো সত্যি ইতিহাসের একেকটি অধ্যায়। তাদের কথা শুনলে শরীর হিম হয়ে আসে। অথচ গত ৮৯ বছরে এমন কত ইতিহাস অবহেলা অনাদরে-রোগে -শোকে ভুগে শেষ হয়ে গেছে তা আমরা খবর রাখিনি। যুদ্ধাহত মক্তিযোদ্ধা পুলিশ কনস্টেবল শাজাহান মিয়া যিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে প্রথম ওয়ারলেস মেসেজ পাঠান । তার যুদ্ধস্মৃতি শুিনলে দম বন্ধ হয়ে আসে অথচ আজ তারা কোথায়? “আঘাত পেয়েছি, প্রথমে টের-ই পাইনি।

দাঁড়াতে যাব, পায়ে হঠাৎ খট করে একটা শব্দ হয়। উল্টে পড়ে যাই। ডান পা ভেঙে আমার বুকের ওপর উঠে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার চোখে-মুখে ছিটকে আসে নিজের শরীরেরই লাল রক্ত। যন্ত্রণায় আমি কাতরাচ্ছিলাম। পাশ থেকে মোস্তফা চিৎকার করে বলে, ‘ভাই, আমার চোখ নাই।’ মান্নানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর রানের মাংসও উড়ে গেছে। সে আল্লাহর নাম জপছে। ভেবেছিলাম মরে যাব। মায়ের কথা শুধু মনে হচ্ছিল। চোখের সামনে ভেসে ওঠে মায়ের মুখটা। ক্রমেই তা ঝাপসা হয়ে আসে। এরপর আর কিছুই মনে নেই। ওই অপারেশনে আমাদের ৩০জন সহযোদ্ধা শহীদ হন।

আহত হয়েছিলেন ৬৬ জন।” (গণ্ডগোল নয় মুক্তিযুদ্ধ পৃষ্ঠা-১৬২) কিংবা  খুলনার সোনা্ডাঙ্গার সন্তান লিবিও কীর্ত্তনিয়ার যুদ্ধ কথা , যিনি বলেছেন বঙ্গবন্ধুর তুলনা শুধু বঙ্গবন্ধু্। পুরো বইয়ের সব কজন মুক্তিযোদ্ধাই দেশের বীর সন্তান। দেশের এই সব বীর সন্তানদের আখ্যানই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বইটি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মুক্তির ইতিহাসের পথ দেখাবে। সুখপাঠ্য এ বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অংশ ।বইটির সফল প্রচার কামনা করি।

১৯৭১: রক্তমাখা যুদ্ধকথা
সালেক খোকন
প্রকাশক: সময়
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
মূল্য:৩৬০ টাকা