• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২০, ০৮:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৫, ২০২০, ০৮:০৭ পিএম

জোবায়দা জবা’র কবিতা 

জোবায়দা জবা’র কবিতা 

অনাবাদী 

প্রেমিক চলে গেছে।অনেক গুলো অসুখ দিয়ে গেছে। 
যেগুলো নিয়ে সামনে এগোতে আমার হোঁচট খেতে হবে। 

যৌবন চলে যায় অস্থির আবেগ সুস্থির বাস্তব হয়
মাঝে শুধু আমি বোঝা হয়ে প্রেমিকের বুকের জমিন খুঁজি। 

না, কোন জমিন আমার জন্য নয়। প্রত্যেকটা ভূমি 
অদৃশ্য ফসলের ঘ্রানে ম ম করেছিল
আমি ছিলাম এক ঋতুর ফশল।
সময় শেষে উপড়ে ফেলা হয়েছে বৃক্ষ সমেত।

অসুখের সীমাহীন গন্তব্য আমার শহরে 
প্রেমিক সুখের যত আসবাব সব জমা রেখেছে 
অসীম হাহাকার ধ্বনি উপচে পড়ে আমার রিক্ত 
গৃহের সাজানো প্রতিটা কবিতার চরনে।

হে নারী তুমি মহিয়ষী হও।প্রেমিকা হতে চেও না
রূদ্রের প্রেম অবশেষে তোমাকে  তসলিমা করবে
নাসরিন হারিয়ে যায়, প্রতারকের নিষ্ঠুর অভিসম্পাতে।

জীর্ন কুটিরে আহত আমি হাঁটতে চাই, অনেক প্রস্তুতি
ভঙ্গুর শরীরে এতটুকু শক্তি নেই। স্মৃতি নামক শক্ত
পুনরাবৃত্তি মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটায়।নিউরনের সব ক্ষমতা 
অকেজো প্রায়।

সবই জ্ঞাত ছিলাম তারপরও বিখ্যাত আমি 
এক কঠিন ব্যামো গেঁথে নিলাম। ইচ্ছাকৃত যে
 সুখের মাশুল আপন হস্তে সৃষ্ট 
আপনাকেই তার মূল্য 
নির্ধারনের দায়িত্ব দিলাম।


সাহিত্যিক

সে ছিল ছদ্মবেশ সে লেখক
কল্পনার রাজ্যে সে আমার দখলে ছিল
উন্মুক্ত কলমের দোহাই দিয়ে সে 
উলঙ্গ করেছে আমার আবেগ। 

সে নাস্তিক, মুক্ত চিন্তার আড়ালে মস্তিষ্ক ধর্ষক।
সাহিত্য নামের কলঙ্ক লেপ্টে দিয়ে 
ছন্নছাড়া করেছে আমার জীবনবেগ।

সে পুরুষ, যৌবনের তারুণ্যে সে প্রেমিক
ভালবাসার অস্ত্রে নষ্ট করেছে 
আমার সতীত্বের সুখ।

সে কবি,সে  প্রতারক উপমার বেড়াজালে 
অনাবৃত করেছে আমার ভিতর, আমার বাহির 
সৃষ্টি করেছে প্রণয়ের অসুখ। 

সে অলীক, তুচ্ছ মায়াজাল!
 ভর্ৎসনা তার ভন্ড লেখার উপর!
 যে সাহিত্যে তারে ছোঁয়া যাবে, পাওয়া যাবে না।
আর পেলেও সে আমার হবে না।

নব্য জমিনের সম্ভাষণ 

সময়ের নিষ্ঠুর পরিহাস সে বয়ে যাবে
জীবনের অদ্ভুত নিয়তি সে ছুটবে
পরিক্রমার পরিসমাপ্তি দূরে থাকে
সীমাহীন গন্তব্য শহরের শেষ স্টেশন
অধরা সুখের মতনই স্পর্শ হীন রয়।

হাত বাড়ালে যতটা স্পষ্ট মনে হয়
চোখের পলকে সে অস্পষ্ট হয়ে যায় 
এক সহস্রাব্দ পশ্চাতে ফেলে
নতুন শতাব্দীর আগমনী হৃদয়ের গহীন 
অরন্যে পুলকিত আবেগের টানাপোড়েন 
স্পন্দিত বদলে যাওয়া দিন শোনায়
 স্পন্দন সৃষ্ট নব্য জমিনের সম্ভাষণ। 

হে নববর্ষ

পুরাতন বায়না নতুনের আগমনে
জীবনবৃত্তান্ত দিশা খুঁজে পায় না
এক বৃত্ত দুই প্রান্ত কেন্দ্র পরিসমাপ্ত
যা ছিল অশান্ত মনের ভাবনা
নতুনেও সে ক্লান্ত হবে না।

ছুটে চলা সময়ের স্বার্থপর হিসেব
একবিন্দু থমকে যায় না
নিয়মিত জীবন, নিয়মের বেড়াজালে
চলছে, চলবে তারে শৃঙ্খল মুক্ত করা হয় না।
বিশৃঙ্খল হৃদয়ের জমানো অভিমান নিয়ে
তবুও বলছি.. হে নববর্ষ! তোমায় স্বাগতম।

 

বিজয় মিছিল


স্বাধীনতা তোমার ভাজ খুলে আমি দেখেছি
প্রতিটা কোনায় কোনায় দীর্ঘশ্বাস।
প্রতিটি ভাজের উন্মুক্ত দ্বারে রয়েছে রক্ত স্রোত

প্রথম ভাজটার আড়ালে রয়েছে
সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ!
তার অপর পৃষ্ঠ রক্তিম স্বামী নিখোঁজ সংবাদে!

দ্বিতীয় ভাজ দেখে আমি শংকিত
এক অনাগত শিশু জন্মেই পিতৃ হারা
উল্টো পাশটায় ভাই হারানোর চিৎকার!

 

তৃতীয় স্তরের ভাজের ঠিক মাঝখানে
বীরাঙ্গনার ভয়ার্ত আন্দোলিত শরীর
এরও অপর ভাজে আছে পঙ্গুত্ব
শত শত জনগোষ্ঠীর হাত নেই, পা নেই
এমনকি কারও স্মৃত শক্তি নেই।

চতুর্থ ভাজটায় আমি বাস্তুহারা
প্রিয় স্বদেশ জ্বলে পুড়ে অঙ্গার
এর উল্টো ভাজে দেখেছি দুর্ভিক্ষ।

সবগুলো ভাজ পেরিয়ে অবশেষে
শেষ ভাজটা খুলে মুক্তিসেনার জ্বলজ্বলে
চোখের বিজয় মিছিল আমি আবিস্কার করেছি।