• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২০, ০৬:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৭, ২০২০, ১০:২৩ পিএম

আলস্য জড়ানো ভোরে রসের মেলা

আলস্য জড়ানো ভোরে রসের মেলা
রস্ আস্বাদনের পাশপাশি ছিল নেত্রকোনার মিলন পালাকারের গাজী কালুর কিসসা পরিবেশনা -ছবি : মোহাম্মদ আসাদের সৌজন্যে

শীত আর খেজুরের রস যেন এক সুতোয় বাঁধা। শীত ছাড়া বছরের অন্য কোনও সময়ই এ দুই মেলে না। এ সময় খেজুরের রসের সুঘ্রাণে ভরে ওঠে বাংলার প্রকৃতি। গ্রাম-গঞ্জে শুরু হয় খেজুরের রস আর গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা খাওয়ার ধুম। রাজধানী ঢাকার নাগরিক জীবনে খেজুর রস মেলা ভার। তবে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় মিলেছিল সেই সুযোগ। খেজুর রসের গন্ধে ম ম করেছে গোটা প্রাঙ্গণ।

কুয়াশায় ঢাকা গ্রাম। পথের ধারেই নজর দিলে চোখে পড়ে সারি সারি খেজুর গাছ। ঋতুচক্র পার করে যেই শীত আসে, এ দৃশ্য যেন পরিচিত হয়ে উঠে গ্রাম বাংলায়। মুখের স্বাদও তখন খুঁজে বেড়ায় খেজুরের রসের। কংক্রিটের ঢাকা শহরে যা খুঁজে পাওয়া দায়। রঙ্গে ভরা বঙ্গ এর আয়োজনের কল্যাণে সেই দৃশ্যের দেখা মিললো চারুকলায়।

প্রাণদায়িনী যখন আলো ছড়াতে শুরু করেছে তখন লোকগানের ছন্দে এক নতুন আবেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায়। খই-মুড়ি-গুড়ের সঙ্গে খেজুরের রস পরিবেশন। ছোট বড় সবার আগ্রহ চোখে মুখে।

মিষ্টি রোদের ভোরে চারুকলায় বসেছিল রসের মেলা। খেজুরের টাটকা রসে রাজধানীবাসী মেতে উঠেছিল গ্রামীণ আমেজে। ‘রঙ্গে ভরা বঙ্গ’ নামের সংগঠনের আয়োজনে এই ‘রসের মেলা’য় শীতের ভোরে গ্রামীণ নির্মল আনন্দের টানে ভিড় করে নগরের রসের রসিকরা।

খেজুর রসের সঙ্গে ছিল শুকনো কাঁঠাল পাতায় তৈরি বাটিতে মুড়ি-মুড়কি ও খেজুর গুড়ের আতিথেয়তা। পাশাপাশি ছিল নেত্রকোনার মিলন পালাকারের গাজী কালুর কিসসা। 

মাটির হাঁড়ি থেকে প্লাস্টিকের গ্লাসে টাটকা খেজুরের রস পান করতে ভোর হতে না হতেই ছুটে আসেন অনেকে। শিশুদেরও নিয়ে এসেছিলেন অনেকেই।

ছুটির দিন শুক্রবার সকালে পরিবারের ছোট সদস্যদের নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। স্মৃতিচারণ করেন মধুর শৈশবের। জানান, দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সন্তানকে পরিচয় করিয়ে দিতেই ছুটে আসা।

সপরিবারে মেলায় এসেছিলেন সরকারি কর্মকর্তা মোল্লা আহমদ কুতুবদ্বীন। অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনেকদিন পর খেজুরের রস খেলাম, খুবই ভালো লেগেছে।

মেলা আগত তালিব হাসান জানালেন, ছোটবেলা নিজের রস থাকলেও পরের রস চুরি করে খেতাম।

চারুকলার বকুলতলার মঞ্চে সকাল ৮টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এবারের রসের মেলা। এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ইমরান উজ-জামান। এর আগে মেলার উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভী ও মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক শাহজাহান মৃধা বেনু। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন চিত্রশিল্পী নিসার হোসেন, বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক ড. শাহিদা খাতুন, ফটো সাংবাদিক মোহাম্মদ আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন পণ্ডিত হায়াৎ মামুদ।

স্মৃতিচারণ করে বক্তারা বলেন, নাগরিক পরিমণ্ডলে খেজুরের রস নিয়ে এই আয়োজন খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। খেজুর রসের ঐতিহ্য গ্রামও হারাতে বসেছে। এ ধরনের আয়োজনে রস পানকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য তৈরি হবে। এভাবেই গড়ে উঠবে মানবিক বাংলাদেশ।

হায়াৎ মামুদ বলেন, আমরা শেকড় ভুলে যাচ্ছি। এ ধরনের অনুষ্ঠানে এলে শেকড়ের কথা আমাদের মনে পড়ে। মা, মাতৃভূমি ও সংস্কৃতি একই সঙ্গে জড়ানো। এগুলোর ভেতর দিয়ে আমরা মানুষ হয়েছি।

নবমবারের মতো এই আয়োজন নিয়ে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ইমরান উজ-জামান বলেন, ‘আমরা ডেমরায় মেলাটি করতাম। নগরবাসীকে এ ধরনের একটি মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে এবার কিছুটা বড় পরিসরে এখানে আয়োজনটি করেছি।

এমএইচবি/এসএমএম

আরও পড়ুন