• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২০, ০২:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৯, ২০২০, ০২:০৭ পিএম

আমাদের নদীয়া ও তার পুনর্জন্ম

আমাদের নদীয়া ও তার পুনর্জন্ম

নদীয়া যে এভাবে নিজেকে আমার কাছে মেলে ধরবে; তার জীবনের একটা অমোচনীয় আর কালো ঘটনা সবিস্তার বর্ণনা করবে আমি তা ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি। আজ হঠাৎ কি মনে করে নদীয়া তার বুকে চেপে থাকা কালো ক্ষতটা ব্যান্ডেজের মতো খুলে ফেলে বাতাসে উড়িয়ে দেয়। আমি আর নদীয়ার পরিবার আমেরিকার ওয়াশিংটনের সিয়াটেল সিটিতে থাকি; কাকতালীয়ভাবে পাশাপাশি নেইবারহুডে। প্রথমদিন ওকে দেখে চমকে উঠেছিলাম, এই দূরদেশে প্রায় আট বছর পর নদীয়াকে আবিষ্কার করা! নদীয়ার সাথে আমার পরিচয়টা হয়েছিল বাংলাদেশে থাকতেই।

আমাদের দুজনের বাবার সরকারী চাকরীসুত্রে আমরা একই কলোনিতে থাকতাম। ঘোড়াশালে। আমি গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলাম না। নেহায়েতই ছিলাম গোবেচারা টাইপের গুডবয়। ওর বাবা ছিল আমাদের সার কারখানার শীর্ষ ব্যক্তি আর আমার বাবা স্রেফ একজন ছাপোষা কারখানা মেকানিক। নদীয়ার রূপ-মাধুর্যের কথা না বললেই নয়; তাকে এক পলক দেখলে মনে হবে বিধাতা কতটা সৌন্দর্য প্রিয়, কতটা নিপুন কারুশিল্পী! একই কলেজে একই ক্লাসে পড়ার সুবাদে নদীয়ার সাথে প্রায়ই দেখা হত। আর দেখতাম কলেজের ছোটবড় নির্বিশেষে সব ছেলেদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল যেন নদীয়া; এমনই অনিন্দ্য তার মুখচ্ছবি। সে এসবে পাত্তা দিত বলে আমার মনে পড়ে না! নদীয়া’কে প্রায় সবাই নাদিয়া বলে ভুল করত আর নদীয়া তার নামের মানে ধৈর্য নিয়ে বুঝাতে বুঝাতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে নদীয়া আর নাদিয়া নাম একাকার হয়ে যেত।

পড়াশোনায় সে বিশেষ সুবিধার ছিল না! সে ছিল দারুন চঞ্চল, সারাক্ষণ ফুরফুরে যেন পাহাড় ছাড়িয়ে দূর আকাশে মেঘের ডালে ডালে বসার কসরত করছে অচেনা কোন পক্ষী! আর আমি ছিলাম শান্ত-শিষ্ট। একেবারে নিস্তরঙ্গ নদীর মতো! তো এতসব বৈপরিত্য সত্ত্বেও আমাকে সে পাত্তা দিত আমি ক্লাসের ফার্স্টবয় আর সম্ভাবনাময় তরুণ ছিলাম বলে। খানিকটা কি পছন্দ করত? আমি ভুলেও সে প্রশ্ন মনের মধ্যে আনার সাহস করতাম না। সে তার বাবা-মার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাঝেমধ্যেই আমাদের বাসায় আসত আমার কাছে পড়াশোনা বুঝতে। অস্বীকার করছি না আমি তার অপার্থিব সঙ্গ মনের অজান্তে উপভোগ করতাম। টের পেতাম একটা অব্যক্ত পবিত্রতায় মনটা ভেসে যেত। তারপর হঠাৎ একদিন টের পাই নদীয়া অনেকদিন ধরে কলেজে আসছে না। আমি দ্বিধা ঝেড়ে লজ্জা ঠেলে তার বাসায় গিয়ে হাজির হই। দরজা খুলে আমাকে বাসার প্রবেশমুখে দাঁড় করিয়ে রেখে তার মা খুব অসহায়ভাবে আমাকে শুধু বলেছিলেন, নদীয়া ভাল কলেজে পড়াশোনা করার জন্য বিদেশে চলে গেছে। মনে হল ভদ্রমহিলা খুব অনিচ্ছাসত্ত্বেও কিছু একটা লুকাচ্ছেন। ছল ছল চোখ ঢাকতে ঢাকতে দরজা লাগিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। আমি অনেকক্ষণ যন্ত্রণায় ভেজা কাকের মতোন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি।

আমার চারপাশ কেন জানি শূন্যতায় ভরে যায়। পরক্ষণে নিজেকে প্রবোধ দেই, নদীয়ার তো আমাকে বলে যাওয়ার কথা ছিল না। আমাদের তো ক্লাসমেট -এর বাইরে অন্য কোন মীমাংসিত সম্পর্ক ছিল না কোনকালেও! আমার ভেতরটা পুড়তে থাকলে নিজেকে সান্ত্বনা দেই, মনে মনে নদীয়াকে শুভকামনা জানিয়ে ফিরে আসি। নদীয়ার এভাবে না-বলে দেশ ছাড়া নিয়ে আমাদের পাড়ায়-কলোনিতে অনেক গুজব রটে। নানান কথায় নানান গুঞ্জনে চারপাশ বিষাক্ত হয়ে উঠে। এর মধ্যে একটা গুজব ছিল ভয়াবহ, তাকে নাকি কোন এক (সরকারি অথবা অজানা, লোকে বলতে ভয় পেত) ক্যাডার বাহিনী গুম করে ফেলেছে। আমি শুনে শিউরে উঠি। তার নিরপরাধ জীবনে কেন এমন কিছু ঘটবে? এই প্রশ্নের কোথাও কোন সুরাহা খুঁজে পাই না। আমাদের কি পতঙ্গ পাখীর জীবন? চাইলেই কেউ শিকার করবে অথবা ধরে নিয়ে খাঁচায় পুরে পোষ মানাবে? আমেরিকায় পড়াশোনা শেষ করে সময়ের পরিক্রমায় আমি এখন চাকরী নিয়ে সিয়াটেল সিটিতে। এমনি এক উইকেন্ডে রবিবারের নিঃসঙ্গ বিকেলে বাসার পাশের পার্কে হাঁটতে বেরুলে আমার চোখ আটকে যায় একটু দূরের এক বাঙালী দর্শন নারীর দিকে। আমি হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে তার কাছাকাছি হই। আমাদের নিয়তি যেন নির্দিষ্ট ছিল, আমার সামনে আমি যাকে দেখতে পাই, সে আর কেউ নয় আমাদের নির্মল নদীয়া। আহ, নদীয়া! আমাকে দেখে হতবাক ও।

সে এতটাই বিস্মিত তার মুখে অনেকক্ষণ কোন কথা জোগায় না। নীরবতা ভেঙে বিস্ময়তা কাটিয়ে জিজ্ঞেস করি, তুমি এখানে? কবে থেকে? নদীয়া তার হাঁটা থামায়। জোরে জোরে নিঃশ্বাস টানতে টানতে বলে, সে অনেক কথা। তোমাকে পেয়ে কি যে ভীষণ ভাল লাগছে। অভাবনীয়! সময় হলে সব বলব তোমাকে। নদীয়া আকুল হয়ে আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। আমাকে তার বর হাসনাতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমি খানিকটা নিরাশ হই তার বরকে দেখে। এক অতীব সাধারণ দর্শন বেচারা টাইপের যুবক। তবে ভদ্রলোক বেশ আমুদে আর বন্ধুসুলভ। আমি অপলক চোখে তাদের সংসার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি; মনে হল ছিমছাম, গোছানো আর আভিজাত্যে তাদের সংসার বেড়ে উঠছে। কোথায় যেন কিসের একটা ঘাটতি প্রকট হয়ে ধরা পড়লো চোখে।কিন্তু ঘাটতিটা কিসের, চট করে বুঝে উঠতে পারলাম না। ঠিকানা আর টেলিফোন নাম্বার বিনিময় হলো। বিদায় বেলায় দরজা পর্যন্ত এগিয়ে এলো নদীয়া, ঠোঁটে ম্রিয়মাণ একটা হাসি। যেতে যেতে পেছন ফিরে আমি তাকে যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম, আজ এতকাল পরে কেন জানি মনে হল, নদীয়া নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে ভাবত। ধনী-গরীব এইসব বুনিয়াদি বৈষম্যের প্রাবাল্যে আমাদের ইচ্ছাগুলো চাপা পড়ে থেকেছে কলেজের সময়টাতে।

নদিয়ার বাসা থেকে একদিন ডিনারের আমন্ত্রণ এলো। গেলাম। ডিনার শেষে হাসনাত সাহেব আমাকে বললেন, আপনি তো নদীয়া’র ক্লাসমেট; কাজেই আপনার সাথে বন্ধুত্ব না জমার কোনও কারণ নাই। চলেন বাইরে একটু হাঁটতে যাই। আমি তাঁর কথা শোনে কৌতুহলী হয়ে বলি, চলেন যাই। বাইরে বেরিয়ে এসে হাসনাত সাহেব বলেন, সিগারেটের অভ্যাস আছে? আমি বিনীত স্বরে বললাম, না। হাসনাত সাহেব একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, নেশা দ্রব্য হিসাবে সিগারেট কেন এতো জনপ্রিয় জানেন? ছোট্ট করে আমি বললাম, না। ভেতরের অস্থিরতাকে বাইরে এনে পুড়িয়ে মারার এমন প্রতীকী অস্ত্র সিগারেট ছাড়া আর দ্বিতীয়টি নেই। এই যে তামাক পুড়িয়ে কেমন দিব্যি উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে ধোঁয়া। মুক্তিই মুক্তি। বলেই হা হা করে হেসে উঠেন হাসনাত সাহেব। হাসনাত সাহেবের এইসব কথা শুনে আমি পুরোই ধন্দে পড়ে যাই।

বেশ কয়েকমাস পর নদীয়ার ফোন। আমিই বললাম, কেমন আছো? কোন ভনিতা ছাড়াই নদীয়া বললো, চলো একদিন লং ড্রাইভে যাই, পাশের মাউন্ট রেইনিয়ারে; অসাধারণ সুন্দর জায়গা। যেতে যেতে বলবো কেমন আছি। যাবে? ‘একাই যাবে না-কি?’ ‘ভয় পাচ্ছো?’ নদীয়া আমাকে পড়তে চায় যেনো। আমতা আমতা করে বললাম, হাসনাত সাহেব যাবেন না? নদীয়া বলে, সত্যি করে বলো তো, হাসনাত সাথে গেলে ভাল্লাগবে তোমার? তার এই বিনীত আর বন্ধুসুলভ আবেদন আমি উপেক্ষা করতে পারিনি, বলি, দেন, লেটস গো টুমরো। আমরা যখন মাউন্ট রেইনিয়ারে পৌছি তখন কটকটে দুপুর। সবুজ আর তুষারপাতে ঘেরা পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে নদীয়ার মন যেন খানিকটা নির্ভার হয়। আমরা পাহাড়ের দুরন্ত পথ ধরে কিছুদূর হাইকিং করে ক্লান্ত হয়ে পড়লে গাছের ছায়ায় বসি। নদীয়া যেন এই মনোরম প্রকৃতির অংশ হয়ে যায়। পাশে দাঁড়িয়ে আমি বললাম, বললে না তো কেমন আছো? লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নদীয়া বললো, আমার নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়াকে কিভাবে নিয়েছিলো ঘোড়াশাল? ‘জানোই তো, গুজবের কতো ডালপালা হয়! নানান ধরণের কথা শুনতাম আমরা।’ নদীয়া বলে, জানো সাজিব, মানুষের জীবনে এমন কিছু অকথিত ব্যাপার থাকে যা মানুষটি আর বিধাতা ছাড়া কেউ জানে না। আমি অবাক চোখে নদীয়ার দিকে তাকাই, তাকে খুব মায়াময় লাগে। ‘জুনায়েদের কথা তোমার মনে আছে? ঘোড়াশালের গডফাদার?’

আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই নদীয়া বলতে থাকে, একদিন বাবার কাছে কি এক কাজে জুনায়েদ বদমাশটা আমাদের বাসায় এসেছিল। কোন এক ফাঁকে সে আমাকে দেখে। আমাকে দেখার পর থেকেই উঠে পড়ে লাগে আমার পিছনে। জীবনের শান্তি আমার হারাম হয়ে যায় সাজিব। আমাকে নানানভাবে প্রপোজ করে, আমাকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করে। আমি এসবের জন্য মোটেও তৈরি ছিলাম না, আমি তাকে নির্দয়ভাবে প্রত্যাখ্যান করলে সে আমার বাবাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করে। বাবার কাছে প্রশ্রয় না পেয়ে আমাকে একদিন কিডন্যাপ করে হারামজাদা। এই বলে নদীয়া বিশাল পাহাড়টার দিকে তাকায়, মনে হয় প্রকৃতির এই বিশালতার মাঝে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করছে। ‘তিনমাস ছিলাম আমি তার কব্জায়। গুলশানের এক বাড়িতে। একটাই শর্ত ছিলো তার। তাকে বিয়ে করলে সে আমার কোন সর্বনাশ করবে না। আমি তাকে বিয়ে করিনি। কেন জানো? একজন নারীর মনের ভাষা যে বুঝতে পারে না, পছন্দ অপছন্দের যে মূল্য দিতে শেখেনি কোনওদিন, জানে কেবল প্রতি পলে পলে তার স্বপ্ন ভেঙে দিতে, সে কি করে পুরুষ হয় সাজিব! আমি তো শুধু একজন পুরুষকে বিয়ে করতে পারি। জেনে শুনে একজন কাপুরুষকে তো আমি বিয়ে করতে পারি না। বলো, পারি?

’ নদীয়া আমাকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলে কি জবাব দেবো আমি নিজেও বুঝে পাই না। ‘নিংড়ে ফেলা আখের ছোবড়াতেও রস থাকে। তার কবল থেকে মুক্তি পেয়ে একমাস আমি অসাড় পড়েছিলাম হাসপাতালে। সব অপকর্ম সে ভিডিও করে রেখেছিলো। থানা পুলিশ করলে সেইসব ফাঁস করার হুমকি দিচ্ছিলো জুনায়েদ। আমার বাবা-মা লোকলজ্জার ভয়ে, আমার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে থানা পুলিশ করেননি। এমনকি কাউকেও জানতে দেননি। তাঁরা বলেন, থানা-পুলিশ-লবিং করে এইসব কেসের কয়টার সুরাহা হয়েছে।’ অপ্রত্যাশিতভাবে বাবা একদিন আমাকে পাসপোর্ট রেডি করতে বললেন আর মিনতি করে বললেন, তুই আমেরিকায় তোর খালার ওখানে যাচ্ছিস; ওখানে গিয়ে তুই আবার নতুন করে জীবন শুরু করবি। বাবা-মার প্রতি আমার প্রচণ্ড জেদ হয়, আমার মনে হতে থাকে ওইসব পশুদের শাস্তি দেওয়া ছাড়া আমি দেশ ছাড়ব না। একসময় বাবা-মার কথা মেনে নেই; এই দেশ না ছেড়ে, তাদের কথা না-মেনে আমার আর কিইবা করার ছিল। নদীয়া আকাশ–বাতাস ম্লান করে আমাকে বলে যেতে থাকে, আপাতঃ ভালোই তো আছি এখানে হাসনাতের সাথে। দেশ ছেড়েছি বটে তবে সেই অমোচনীয় দুঃসহ ঘটনায় আমার ভেতরটা ভোঁতা হয়ে গেছে, কোন অনুভূতি কাজ করে না; পৃথিবীর কোনকিছুকে আর আমার স্বাভাবিক মনে হয় না; আমার বরটা এতো ভাল মানুষ তারপরও তাঁর সাথে আমি স্বাভাবিক আচরণ করতে পারি না। মাঝে মাঝে কোন কারণ ছাড়াই তাকেও অন্যসব পুরুষের মতো পাশবিক মনে হয়।

আমি অকারন শিউরে উঠি, বাচ্চা নেওয়ার কথা মনে হলে মাথাটা গুলিয়ে যায়। অথচ যে জীবনের দগদগে ক্ষত জানে না হাসনাত, সে জীবনের নিষ্ঠুর বোঝা বইছে সে। আমাতে উপগত হতে গেলেই সে, জুনায়েদকে দেখতে পাই আমি, আর অবশ লাশের মতো হয়ে যাই। কতবার বলেছি তাকে, আমাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে তুমি সংসার পাতো গিয়ে। একজন মন-মৃত মানুষের পক্ষে কাউকে সুখী করা অসম্ভব। সে কোনোদিনই সেই কথার জবাব দেয়নি। গতকাল সে একটা জবাব দিয়েছে। এই কথা বলতে গিয়ে নদীয়া কান্নায় চুরমার হয়ে যায়। তার ভেতরটা কি হালকা হল! আমি জানি না; আমার ভেতরটাও আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ে; আমি জানি না তাকে কি বলে সান্ত্বনা দেব। আমি ব্যাকুল হয়ে জানতে চাই, কি সেটা? ‘জুনায়েদের মতো একজন পাপিষ্ঠের ক্ষতকে মনে ধরে রেখে যদি হাসনাতের ভালবাসাকে বুঝতে অক্ষম থাকো, তাহলে তুমি নিজেও কিন্তু নিষ্পাপ থাকো না নদীয়া।’ নদীয়ার কথা শুনতে শুনতে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলি, ওই ঘটনার কথা ওকে বলেছিলে তুমি? ‘না বলিনি।

কিন্তু বিয়ের আগেই জুনায়েদের ঘটনা ও জেনে যায় সামহাউ। কোনদিনই আমাকে তা বলেনি সে। আচার আচরণেও কখনো বুঝতে দেয়নি, সে সেসব জানে। গতকালই প্রথম বললো।’ বাহিরে টুপ করে কমলা-লাল চেহারা নিয়ে সন্ধ্যা নামে, যেন নদীয়ার কষ্টে পৃথিবী সব আলো নিভিয়ে দিয়ে অন্ধকারে হাহাকার করার জন্য আয়োজন করছে। আমি লজ্জায় তার দিকে তাকাতে পারি না, মাথা নিচু করে বিষণ্ণ মনে বলি, তুমি তখন কি করলে? নদীয়া নিজেকে সামলে নেয়, বলে, জগতের সব পুরুষকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি সাজিব। একজন জুনায়েদকে খুব বেশী মূল্য দিয়ে ফেলার অপরাধে হাসনাতকে জাপটে ধরে কেঁদেছি সারা রাত আর নতুন জীবন শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তার এই কথা শুনে আমার দীর্ঘদিনের চাপা পড়ে থাকা হাহাকার নদীয়ার চঞ্চলতার মতন মেঘ হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকে।