• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০, ১১:২২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০, ১১:২২ এএম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

প্রাণের উৎসব শুরু আজ

প্রাণের উৎসব শুরু আজ

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। এর পর দ্বার খুলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর। প্রাণের উচ্ছ্বাসে বই উৎসবে মেতে ওঠার সব আয়োজন চূড়ান্ত। নতুন বইয়ের অমোঘ ঘ্রাণ আর প্রিয় লেখকদের সান্নিধ্য পেতে উন্মুখ হয়ে আছেন লাখো পাঠক। এখন শুধু উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতার পালা। 
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় ভাষাশহীদদের স্মরণে আয়োজিত মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০ এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এবারের মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির উদ্দেশে। এ কারণে এবারের মেলাজুড়ে থাকবেন বঙ্গবন্ধু। তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত থাকবে মেলার ডিজাইন, আলোচনা, সেমিনার, চিত্রাঙ্কনসহ অনেক কিছুই। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকছে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু রচিত তৃতীয় নতুন বই ‘আমার দেখা নয়াচীন’। উদ্বোধনী মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। 

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী দৈনিক জাগরণকে বলেন, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলা একাডেমি। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী রয়েছে। এ সময়কালে বঙ্গবন্ধুর ওপর নানা বিষয়ে ১০০টি গ্রন্থ প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি।

বইমেলা উপলক্ষে সারাদেশ এবং বিদেশ থেকেও ছুটে আসবেন বইপ্রেমীরা। প্রাণোচ্ছল এই মেলাকে কেন্দ্র করে ফেব্রুয়ারিজুড়ে উৎসবে উদ্বেলিত থাকবে রাজধানীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেয়া এক বাণীতে বলেন, বাঙালির জাতিসত্তা ও অস্তিত্বের শিকড় ভাষা আন্দোলনের মধ্যে প্রোথিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম গ্রন্থের আলোয় আলোকিত হয়ে সমস্ত অজ্ঞানতা, অন্ধকার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। বাংলাদেশকে সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করে জাতির পিতার সোনার বাংলায় পরিণত করবে।

মেলা উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ১০ জনের হাতে পদক তুলে দেবেন। তারা হলেন- মাকিদ হায়দার, ওয়াসি আহমেদ, স্বরোচিষ সরকার, রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, খায়রুল আলম সবুজ, ফারুক মঈনউদ্দীন, নাদিরা মজুমদার, রতন সিদ্দিকী, রহীম শাহ এবং সাইমন জাকারিয়া।

মেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ, ২০০০ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রকাশিত একাডেমির বই ৭০ শতাংশ এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করবে। 

একাডেমির প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে বাংলা একাডেমির ৫টি বিক্রয় কেন্দ্র থাকবে। এর একটি সম্পূর্ণ সাজানো হবে একাডেমি প্রকাশিত শিশু-কিশোরতোষ গ্রন্থ দিয়ে।

সিটি নির্বাচনের কারণে এবার একুশের গ্রন্থমেলা একদিন বিলম্বে শুরু হলেও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর প্রস্তুতির কারণে সময় বাড়ানো হবে না। ২৯ ফেব্রুয়ারিই শেষ হবে গ্রন্থমেলা।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী দৈনিক জাগরণকে বলেন, মেলা একদিন পেছালেও আগামী ৩ মার্চ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুতি অনুষ্ঠান আছে। তাই এবারের বইমেলা ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই শেষ করতে হবে, পেছানোর কোনও সুযোগ নেই। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা পরিদর্শন করবেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এর স্বাগত বক্তব্য রাখবেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

মেলার পরিসর

বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় আট লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি ইউনিট ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি ইউনিটসহ মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো ‘লিটলম্যাগ’ কর্নার নেয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

প্রবেশ বহির্গমন পথ

টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও একাডেমির উল্টো দিকের কালী মন্দির এবং তিন নেতার মাজারের পাশ দিয়ে থাকবে প্রবেশ ও বহির্গমন পথ। শিশু চত্বরের আয়তনও বেড়েছে। শুধু বইয়ের মেলা হিসেবে এই মেলা আয়োজন হলেও এবার যুক্ত হচ্ছে ফুডকোর্ট। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের দুই প্রান্তে দু’টি ফুডকোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ফুডকোর্টে ২০টি করে খাবার দোকান থাকবে।

উৎসর্গ

একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এবারের গ্রন্থমেলা সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারের মেলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা হচ্ছে। মেলা মঞ্চের আলোচনার বিষয়ও হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শুধু বাংলা একাডেমিই প্রকাশ করছে ২৬টি বই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আগামী দুই বছরে মোট ১০০টি বই প্রকাশ করবে একাডেমি। মেলার উদ্বোধনী দিনে বাংলা একাডেমি থেকে বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় গ্রন্থ ‘আমার দেখা নয়া চীন’ প্রকাশিত হবে। ওইদিনই মেলা মঞ্চ থেকে বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিদিনের মেলা মঞ্চের আলোচনা-সেমিনার, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, গান, আবৃত্তি, নৃত্যসহ সবকিছুই আবর্তিত হবে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে। গ্রন্থমেলা হবে সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত।

নিরাপত্তা অন্যান্য বিষয়

যে কোনও ধরনের নাশকতা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে পুলিশ, র্যাব, আনসার ছাড়া একাডেমির নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী। থাকছে র্যাব, পুলিশ ও আনসারের একাধিক কন্ট্রোল রুম। গত বছর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন এক হাজার পুলিশ সদস্য। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজারে। সে সঙ্গে আনসার সদস্যের সংখ্যাও বেড়েছে। মেলায় আগতদের শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলায় এ রাস্তায় গাড়ি পার্কিং না করতে আহ্বান জানানো হয়েছে  বাংলা একাডেমি ও ডিএমপির পক্ষ থেকে।অস্থায়ী দোকান, হকার উচ্ছেদ, ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণ ও বৃষ্টি হলে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ও করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করবে। এফএম রেডিওগুলোও মেলার তথ্য প্রচার করবে। মেলার খবরাখবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। 

মেলার সময়সূচি 

রোববার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র-শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে মেলার দ্বার খুলবে সকাল ১১টায়। চলবে একটানা রাত ৯টা পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারির দিন মেলার দ্বার খুলবে সকাল ৮টায়। চলবে একটানা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। 

এসএমএম