• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২০, ১১:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৩১, ২০২০, ১১:৩২ পিএম

লাল গেন্দাফুল : মূল গান ও শিল্পী রতন কাহরের কিছু কথা (ভিডিও)

লাল গেন্দাফুল : মূল গান ও শিল্পী রতন কাহরের কিছু কথা (ভিডিও)
কবি ও গীতিকার রতন কাহর

বড়লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল
এমন মাথায় বেঁধে দেব লাল গেন্দাফুল...

অতি সম্প্রতি ভারতের জনপ্রিয় র‍্যাপ সিঙ্গার বাদশাহ ও কন্ঠশিল্পী পায়েল দেব-এর গাওয়া এই গানে মজেছে আধুনিক মিউজিক প্রেমিরা যা এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। সেই সঙ্গে গানের মিউজিক ভিডিওতে লাস্যময়ী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের নাচে বিমোহিত দর্শক। তবে জনপ্রিয়তা অর্জনের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক বিতর্কও চলছে গানটি নিয়ে।

লাল গেন্দাফুল গানের আধুনিক সংস্করণের ভিডিও চিত্রে বাদশা ও জ্যাকলিন- ছবি সংগৃহিত

মূলত গ্রাম্য সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী, বহুল প্রচলিত এই বাংলা গানটিকে আধুনিক মিউজিকের সঙ্গে মিশিয়ে যে ধরণের প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং গানটির স্রষ্টা ও মূল গীতিকারের প্রতি কোনো প্রকার কৃতজ্ঞতা না প্রকাশ করেই যেভাবে বর্তমান শিল্পীদের নামে প্রচারনা দেয়া হয়েছে, তাতেই সৃষ্টি হয়েছে এই বিতর্কের ঝড়। 

‘গেন্দা ফুল’ গানের বাংলা অংশ অর্থাৎ ‘বড়লোকের বেটি লো...’ প্রকৃত পক্ষে যার লেখা বলে দাবি উঠেছে সেই কবি, তথা গানের লেখক ও সুরকার রতন কাহারের প্রতি কোনো প্রকার কৃতজ্ঞা প্রকাশ করা হয়নি নতুন সংস্করণটিতে। এমন কি এর সুর উপস্থাপনে মূল গানের সুর ও গায়েকি ম্লান হয়েছে বলেও দাবি ওঠেছে।

রতন কাহারের কথা ও সুরে স্বপ্না চক্রবর্তীর কন্ঠে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে 'লাল গেন্দাফুল গানটি- ছবি সংগৃহিত

সম্প্রতি এ বিষয়ে স্বয়ং রতন সরকারের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম জি-নিউজ। সাক্ষাৎকারটি দৈনিক জাগরণ পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো। সেই সঙ্গে এই গানটি প্রথম যার কন্ঠে সুরের লহর তোলে সেই কন্ঠে শুনে নেয়া যাক আর দেখে নেয়া যাক পল্লী বাংলার কেমন পটভূমিতে এর উপস্থাপন করা হয়েছে।

‘বড়লোকের বেটি লো’ গানটি কী প্রকৃতই আপনার লেখা?

রতন কাহার: হ্যাঁ, এই গানটি আমার লেখা, সুরও আমার। এবার যদি মানুষ এভাবে বেইমানি করে আমি কী করবো বলুন তো? আমি অত্যন্ত গরিব মানুষ। অনেকেই আমাকে ব্যবহার করেছে। অথচ আমার নাম দেয়নি। অনেকেই আমার কাছ থেকে গান নিয়ে গিয়েছে, নিজের নামে চালিয়েছে। তাদের লেখার ক্ষমতা নেই। আমার গান নিজের নামে চালিয়েছে। আমি অসহায়। আমি মাটির ঘরে থাকা, মাটির গান লেখা মানুষ। কিছু বুদ্ধিজীবি মানুষ তারা অনেক কথাই বলে, আশ্বাস দেয়। কিন্তু আমাদের মতো শিল্পীকে মূল্য দেয় না। আমার এটা নিয়ে প্রতিবাদ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই।

আপনি কবে প্রথম এই গানটি লিখেছিলেন ও গেয়েছিলেন?

রতন কাহার: একদম ঠিকঠাক মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে ১৯৭২ সালে লিখেছিলাম। গানটা আমি প্রসার ভারতীতে প্রথম গেয়েছিলাম। পরে আমি গানটি ‘আনন’ গোষ্ঠীর রাজকুমার সাহাকে দিয়েছিলাম। ওনারা কোরাস গাইতেন। সেখান থেকেই গানটা ছড়িয়ে পড়ে। স্বপ্না চক্রবর্তী গানটি লিখে নিয়ে গিয়েছিল আমার খাতা থেকে।

পরে ১৯৭৬ সালে স্বপ্না চক্রবর্তী গানটা রেকর্ড করেন। কিন্তু সেখানেও গানটি আমার লেখা ও সুর বলে কোনওভাবে স্বীকার করা হয়নি। তবে গানটি রেকর্ড হওয়ার বহু আগেই আমি আকাশবাণীতে গানটি গেয়েছিলাম। তখন ওই অনুষ্ঠানের পরিচালক যতদূর মনে পড়ছে মলয় পাহাড়ি, আর্য চৌধুরীও ছিলেন। পাহাড়ি সান্যালই আকাশবাণীতে নিয়ে গিয়েছিলেন।

‘বড়লোকের বেটি লো’ গানটি যে আপনার, অথচ আপনার নাম না দিয়েই রেকর্ড হয়ে গেল বলছেন। আপনি প্রতিবাদ করেননি কেন?

রতন কাহার: বহুবার বলেছি। কিন্তু আইনি লড়াই লড়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই। কেউই মূল্য দেয়নি। কলকাতায় এমন অনেকেই আছেন যারা আমার থেকে গান নিয়ে গিয়েছেন। শিলাজিৎও আমার কাছ থেকে গান নিয়ে গিয়েছেন। অনেকেই ঠকিয়েছে। তবে আমার লড়ার ক্ষমতা নেই। তবে কেউ স্বীকৃতি না দিক মানুষ আমায় স্বীকৃতি দিয়েছে।
স্বপ্না চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে?

রতন কাহার: ওনার সঙ্গে আমার খুব যে ভাব ছিল তা তো নয়। ও আমাকে বঞ্চিত করেছে। তবে এখন মাঝে মধ্যে কথা হয়।
আপনার সংসার চলে কীভাবে?

রতন কাহার: বিড়ি বেঁধে সংসার চলতো। গান গেয়ে বিশেষ কিছুই করতে পারিনি। তবে এখন আর কিছু করি না। আমার দুই ছেলে আর এক মেয়ে রয়েছে।

আপনাকে প্রকৃত সম্মান ও মূল্য দেওয়া হয়নি দাবি করে কিছু মানুষ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন, প্রতিবাদ করছেন। তাদেরকে কী বলবেন?

রতন কাহার: তারা আমায় ভালোবাসেন। তাই কথা বলছেন। কিন্তু ঠিক বুঝি না আমাকে এত মানুষ ঠকিয়েছে যে এখন আর ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। তবে গান গেয়েই আমি বেঁচে আছি।

ভিডিও: আবহমান গ্রাম বাংলার পটভূমিতে 'গেন্দাফুল' মূল গানে দৃশ্যায়ন- সা রে গা মা মিউজিকের সৌজন্যে

মূল গানের কথা-

বড় লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল, এমন মাথায় বেঁদে দেবো লাল গেন্দা ফুল ।
বড় লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল, এমন মাথায় বেঁদে দেবো লাল গেন্দা ফুল ।
এমন মাথায় বেঁদে দেবো লাল গেন্দা ফুল ।
দেখে ছিলাম শরানে ওরে শরানে,
দেখে ছিলাম শরানে ওরে শরানে
আমার সাথে দেখা হবে বাবুর বাগানে ।
আমার সাথে দেখা হবে বাবুর বাগানে ।
ও বড়লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল,
এমন মাথায় বেঁদে দেবো লাল গেন্দা ফুল ।
ওরে লাল দুলান শরানে ওরে শরানে, ভালোবাসে দাঁড়িয়ে ছিল মাথার সিঁথানে ।
ভালোবাসে দাঁড়িয়ে ছিল মাথার সিঁথানে ।
বড়লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল,
এমন মাথায় বেঁদে দেবো লাল গেন্দা ফুল ।
ওরে যাকিনে কোথাই যাবি ওরে ও যাবি,
যাকিনে কোথাই যাবি ওরে ও যাবি,
২দিন পর আমার ছাড়া আর কার বা হবি ।
২দিন পর আমার ছাড়া আর কার বা হবি ।
বড়লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল,
এমন মাথায় বেঁদে দেবো লাল গেন্দা ফুল।

এসকে