• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২০, ০৩:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৮, ২০২০, ০৩:৪১ পিএম

জিয়া উল করিমের নির্বাচিত কবিতা

জিয়া উল করিমের নির্বাচিত কবিতা

কবরে রোদ নাই
  জি য়া উ ল ক রি ম

কি অদৃশ্য শক্তি!
তাইনা!
পুরো বিশ্ব যার কাছে বাক্স বন্দী
কোথাও কেউ নেই, 
আমার বাসার সামনেই ছিলো "শেষ ঠিকানা"
ঐযে যেখানে সৎকার করার জিনিস-যাবতীয় পাওয়া যায়!
ইদানীং নাকি ফুরসৎ নেই বললেই চলে।
জিনিসপত্রের দামও নাকি বেশী!
হুর হুর করে বাড়ছে
বাজারে চাহিদা নাকি প্রচুর
সামাল দেয়া হিমসিম ব্যাপার!

পাশের বাসায় ডাক্তার সাহেব
তাকে নাকি আট-দশ দিন আগে দেখা গিয়েছিল।
শুনেছি ইদানীং ঘরে ফেরেন না খুব একটা,
ওনার বৌ নাকি এই সংসার আর রাখবেন না!
তাকে সময় আগে থেকেই খুব একটা দিতেন না,
ইদানীং একেবারেই দেন না!
রাস্তা-ঘাট বন্ধ, না হয় ঠিকই গিয়ে হয়তো ঢুঁ মারতেন, আর দেখতেন কি এমন করে তার জামাই।
উনি নিজে আবার মেট্রিক ফেল,
উঁচু দরের কথা উনি কানে তোলেন না।

জীবন-জীবিকা থমকে গেছে।
শব্দদূষণের রাজধানী বলে পরিচিত শহর আজ কোন আওয়াজ করেনা।
শুধু ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে।
কোন কোলাহল নেই, মাছির আওয়াজ ইদানীং নাকি অনেক দূর থেকেও শোনা যায়।
কারখানার যন্ত্রপাতিগুলোতে এখন নাকি ধুলোর স্তর জমে।
সেগুলোতে হাত দেয়ার লোক নেই।
সভ্যতার অগ্রগতির নামে সবুজ মেরে যারা কংক্রিটের জঙ্গল বানালো, তারাও নাকি ইদানীং ভেন্টিলেটর খোঁজে, সামান্য নির্মল বাতাসের আসায়।

এতোদিন ভীড়ের ঠেলায় অশান্তিতে ভোগা শহরটাও
আজ ভীষণ একা।
একঘেয়েমি ধরে গিয়েছে।
সে নিজেও নিজের এমন রূপ দেখেনি কোনদিন।
তবে পাখিদের ফিরে পেয়ে সে নাকি বেজায় খুশি,
বাতাসের ফুরফুরা মেজাজ দেখে শহরতলি ভাবে, "ভালোইতো, চলুকনা আর কিছুদিন, মন্দও লাগছে না"
এইযে শহুরে নদীগুলোর পানিতে নতুন একটা চাকচিক্য,
এটাইবা কয়দিন দেখেছে এই প্রজন্ম
ওরাও একদিন অন্তত বলতে পারবে, "বুড়িগঙ্গার জলের রঙ পরিষ্কার দেখেছি"
তাদের নাতিনাতকুরেরা সে কথা না হয় নাইবা বিশ্বাস করলো। 

এই উত্তাল থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া শহরটা,
কিছুদিন জিরিয়ে নেয়ার ফুরসৎ আবার কবে পাবে কে জানে!
রাস্তার রাতজাগা কুকুরের দল,
ওরা আজকাল চোর দেখে হঠাৎ ডেকে উঠেনা,
মাঝরাতে ক্ষুধার তাড়নায় কেমন করে যেন কাঁদে।
মনে হয়, আমাকে সামনে পেলে হয়তো খেয়েই ফেলতো।

শুনেছি রাতের রেলষ্টেশনে ইদানীং আর ট্রেন আশে না।
শুধু একদল লোক আসে, ঝাঁকে ঝাঁকে আসে
ঐযে, যাদের কুলকিনারা নাই, তারা
এটাই তাদের শোবার ঘর, এটাই তাদের আশ্রয়।

শহুরে গাছগুলোর একটা নতুন পোশাকি ভাব ফুটে উঠেছে
ইদানীং, গায়ের নোংরা ধুলার স্তরটা আর নাই।
দুর থেকেও ওদের আসল রং টের পাওয়া যায়।
কার রং গাড়ো সবুজ, কার রং হালকা ইত্যাদি।
হাতে খুব একটা কাজ নেই,
বেকারই বলা চলে,
তাই ইদানীং ওদের দিকে তাকাবার সুযোগ পাই।
বারান্দা থেকে নাকি ভালোই দেখা যায়।
ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে, কিন্তু এতো দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম এতোদিন
যে নাগাল পাওয়া দুষ্কর।

কবরে শুয়ে আছি বেশ কয়েকদিন হলো
এখানে রাতদিন টের পাওয়া যায় না
কবরে রোদ নাই, ছায়াও নাই 
শুধু অন্ধকার নিয়েই আছি
অপঘাতে মরা প্রেতাত্মারা রাতে এই শহরতলীর অলিগলিতে ঘোরে,
আর সকাল হবার আগেই কবরে ফিরে আসে।
ওরা এলেই বুঝি সকাল হয়েছে।
ওদের সাথেই চলে আড্ডা। 
এই শহরের ফিরিস্তিগুলো ওদের থেকেই শুনি।
কিন্তু বিশ্বাস হয়না, আমি ভাবি, "কি এমন হলো যে সব থমকে গেল আচমকা!"

আমার পাশের কবরের লোকটা জৈববিজ্ঞানী ছিলেন।
তিনি বললেন, ইদানীং বিশ্বযুদ্ধ নাকি ল্যাবরেটরিতে হয়।
কি জানি বাপু, আমিতো আর অতশত বুঝিনা।
মরার আগে টুকটাক খাতা-কলম নিয়ে থাকতাম।
মরার পরে এই সব ভেবে আমার কি লাভ!
আমার এখন অন্য হিসাব-নিকাশের ধান্দা।
দাড়িপাল্লায় ভালো খারাপের হিসাব হবে, সেটা নিয়েই আছি।
কবরে রোদ নাই, পৃথিবীর আলো আধার খেলায় আমি আর নাইবা জড়ালাম।
তবু ওরা ভালো থাকুক।

 

• কবি ও লেখক