• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২০, ০২:১২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৮, ২০২০, ০২:১২ পিএম

সিনেমা আলোচনা

কিম কি দুকের ‘মবিয়াস’: নিষ্কাম হওয়ার গল্প

কিম কি দুকের ‘মবিয়াস’: নিষ্কাম হওয়ার গল্প
‍‍`মবিয়াস‍‍` ছবির অভিনশিল্পীদের সাথে পরিচালক কিম কি দুক (ডানে)

“মবিয়াস” ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি দক্ষিণ কোরিয় সিনেমা। কিম কি দুক পরিচালিত এই ছবিটি যারা দেখেছেন, তারা জানেন, কি অদ্ভুত এই সিনেমার উপস্থাপনা।

 “মবিয়াস” সিনেমাটি আইএমডিবিতে থ্রিলার হিসেবে গণ্য করা হলেও একে ব্ল্যাক কমেডি বলা যায়। ব্ল্যাক কমেডির আক্ষরিক বাংলা করা না গেলেও একে সোজাসাপ্টা বলা যায়, সাধারণত মানুষ সমাজে যে বিষয়গুলো নিয়ে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, সে ধরনের কোনো বিষয় বস্তুর মাধ্যমে কোন উপস্থাপনা। এটা হতে পারে সহিংসতা, যৌনতা কিংবা মৃত্যু।

ছবির গল্পে দেখা যায় একজন নারী তার স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতায় ক্ষিপ্ত হয়ে তার পুরুষত্ব কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু স্বামীর বাধার মুখে ব্যর্থ হন। ক্ষিপ্ততার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ওই দম্পতির একমাত্র ছেলে সন্তানের পুরুষাঙ্গকে একটি ধারালো ছুরির মাধ্যমে কেটে নেন এবং পালিয়ে যান। ছেলের দুরাবস্থার জন্য বাবা নিজেকে দায়ী করেন এবং যেকোন উপায়ে তার পৌরুষ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতে থাকেন সিনেমা জুড়ে। এই ঘটনা প্রবাহের এক পর্যায়ে দেখা যায় ছেলেটি যখন লিঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন সেটা সে আর চায়না। তার উপলব্ধি আসে সে আসলে কাম থেকে মুক্তি পেতে চায়, অনেকটা মোক্ষলাভের মত। সে বুঝতে পারে মানুষের আদিম কামনাবাসনাগুলো মানুষের দুঃখ-দুর্দশার মূল কারণ। সিনেমাটির শেষ দিকে দেখা যায় ছেলেটি গৌতম বুদ্ধের কাছে নিজেকে সমর্পণ করছে এবং সে এখন আর তার কামবাসনার দাস নয়, সে মুক্ত, শারীরিক বাসনাগুলো তাকে আর তাড়িত করে না।

এই সিনেমার আরেকটি বিষয় হলো এর কাহিনী উপস্থাপনার ভঙ্গি। এখানে পরিচালক কিম কি দুক তার চরিত্রদের কোন ডায়ালগ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করেননি, বরং নৈশব্দের ভাষায় তুলে ধরেছেন পুরো ঘটনা, যা দর্শককে আরো বেশি তাঁর গল্পে বুঁদ হয়ে যেতে সাহায্য করে। ছবির চরিত্রগুলো এখানে যে শব্দ মুখ থেকে বের করে, তা ভাষা সৃষ্টির আগে, আদিম মানুষের আকস্মিক আনন্দ বেদনার বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের শব্দ উপস্থাপনা মানুষের আদিকাম বা  বাসনার একটি রূপক বলে প্রতীয়মান হয়। আরো একটি বিষয় না বললেই নয়, এই গল্পের চারটি চরিত্রের মধ্যে দুটো নারী চরিত্রই একজন অভিনয়শিল্পীর দ্বারা উপস্থাপিত যা মানুষের আদিম সভ্যতার একটি  রূপক উপস্থাপনা বলে মনে হয়। এটি  ফ্রয়েডের তত্ত্ব ইডিপাস কমপ্লেক্সের মিলে যায়।

সম্প্রতি কিম কি দুক মারা গেছেন করোনাক্রান্ত হয়ে। কিন্তু “মবিয়াসে”র মতো ব্যতিক্রমী সৃষ্টির জন্য তিনি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে থাকবেন দীর্ঘদিন ধরে।