• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২১, ০৩:১৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১৯, ২০২১, ০৩:৪০ পিএম

আহমদ ছফা

একজন খাঁটি স্বাধীন লেখক

একজন খাঁটি স্বাধীন লেখক

আমাদের সৌভাগ্য এই—আমরা আহমদ ছফার [৩০ জুন ১৯৪৩—২৮ জুলাই ২০০১] যুগে জন্মেছিলাম। আর বাংলা সাহিত্যের সৌভাগ্য এই—তাঁর মতো কীর্তিমান লেখক বাংলা ভাষায় জন্মেছিলেন। বাংলা ভাষার চৌহদ্দী বিবেচনায় আনলে দেখা মিলবে, তিনি রেখে গেছেন সাহিত্য সৌন্দর্যের নানা চিহ্ন, নানা সৃষ্টি, নানা চিন্তা, নানা পথ, নানা উদ্দীপনা আর লড়াই-সংগ্রামের ভাষার অমূল্য কীর্তি। তাঁর ইহকাল ত্যাগের দুই দশক পর কথাটা আমরা কত না সহজে বললাম! বলা এত সহজ ছিল না জীবদ্দশায়। কেন? আমরা যারা মহাত্মা ছফার সামান্য সান্নিধ্য পেয়েছি, তারা অল্প-বিস্তর জানি। জীবদ্দশায় কলিকালের সমাজ আহমদ ছফার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়নি। বাংলা একাডেমি পুরস্কার তো দূরবাত, কোনো পত্রিকার সংখ্যাও আহমদ ছফার নামে হয়নি। অথচ কত খইভাজা লেখককে নিয়ে সমাজে কত কিছু হয়! আদতে ছফার পুনরুজ্জীবন ঘটেছে ইহকালের পর।

প্রশ্ন দাঁড়ায়—আহমদ ছফার রূপান্তর কীভাবে ঘটেছে? জীবদ্দশায় ভক্ত-অনুরাগী পাঠক যেমন ছিল, ঠিক তেমনি কম ছিল না সমালোচকের আধিক্য। ইহকাল ত্যাগের পর ঢাকার একদল লেখক বলতে লাগলেন ছফাকে নিয়ে অহেতু গুঞ্জন করবার কিছু নেই। কিন্তু দেশ যখন নানা সংকটের মুখে আবর্তিত হয়, তখন ছফার বুদ্ধিবৃত্তিক ভাষা হয়ে ওঠে জনগণের আশ্রয়। তখন তারা বলতে থাকেন—আহমদ ছফা একজন খাঁটি বুদ্ধিজীবী। তবে ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি বেহতর নন। আবার তিনি যখন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক বাস্তবতা, প্রকৃতির স্বভাব, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতির অবনমনের বিপরীতে প্রজ্ঞা আকারে হাজির হন, তখন উল্টো সুরে বলেন—ছফার উপন্যাস ভালো, কিন্তু কবিতা ‘বাজে’। এখন এই সব স্বর মৃদুতর হচ্ছে ক্রমশ। হয়তো কেউ কেউ বলবেন, দু-চারটে ভালো কবিতা তিনি লিখেছেন বটে! বস্তুত ছফাকে বাজালে দেখা যাবে—সমস্ত আহমদ ছফা, অনন্য এক বাংলা ভাষা। ভাষা ভাবের অর্থ শুদ্ধ কথার কথা নয়। ভাষা মানে দেশ। আর আমরা যাকে দর্শনযোগে বলি, ভাষার অপর ঠায়। মানে দেশ। আর আহমদ ছফার চিন্তায়, মননে আর সৃষ্টিশীলতায় ঠায় আস্ত একদেশ স্বপ্ন, নাম বাংলাদেশ।

 

মনীষী আহমদ ছফাকে নিয়ে নানাজন নানা রূপে কাজ করেছেন। করছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। ভবিষ্যতে নতুন নতুন চিন্তায় আর বিশ্লেষণে নতুনভাবে সাহিত্যে আবির্ভূত হবেন তিনি। কারণ তিনি আমাদের সাহিত্য আর সংস্কৃতিতে জাতীয় সম্পদ হয়ে গেছেন। তবে তাকে নিয়ে সবচেয়ে বড় কাজ করেছেন আহমদ ছফার গুণধর ভ্রাতুষ্পুত্র ও কথাসাহিত্যিক নুরুল আনোয়ার। ছফার ৫৮ বছরের প্রায় লেখাজোখা আর কথামালার সঞ্চয় একত্র করেছেন তিনি। অনেকটাই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন নুরুল আনোয়ার। কারণ ছফার জীবন খুব গোছানো ছিল, তা হলফ করে বলা যাবে না। লেখায়, চিন্তায়, লড়াইয়ে আর সৃষ্টিশীলতায় ছফা যত না সংহত, ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন খানিক অগোছালো। তবে ব্যক্তিগত জীবনে বস্তুগত সহায়-সম্পদের হাতছানি থেকে নিজের দূরে রেখেছেন তিনি। বলা বাহুল্য, আজ প্রথাগত জীবনের বাইরে এক অলঙ্ঘনীয় সাহিত্যের রাজপথ পাড়ি দিয়েছেন ছফা। সত্যিকার অর্থেই অকৃতদার আহমদ ছফা এক বর্ণাঢ্য লেখকজীবন পার করেছেন। সমাজের ক্লেদ, অন্যায়, অবিচার আর অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে জীবনের শেষ আয়ু ত্যাগ করেছেন তিনি। খোদ বাংলাদেশে, এমনকি—বাংলা সাহিত্যে তাঁর মতো এমন চরিত্র বিরল।

আহমদ ছফাকে নিয়ে অপর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কাজটি করেছে আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা। সভার অন্যতম প্রধান মশহুর লেখক ও চিন্তাবিদ সলিমুল্লাহ খান। রাষ্ট্রসভার সভ্যগণ বছর বছর সেমিনার করে আহমদ ছফার সাহিত্যচিন্তাকে নানাভাবে বিচার করেছেন। পাঠকের পুনর্মূল্যায়নের প্রশ্ন সামনে এনেছেন। নতুন ভাবনার খোরাক জুগিয়েছেন। এমন ফলপ্রসূ উদ্যোগ বাংলাদেশে হয় না বললে চলে, সচরাচর। তুলনামূলক বিচার করলে দেখা যাবে, ইহকাল ত্যাগের পর বাংলাদেশে বেশির ভাগ কথিত প্রধান সাহিত্যিক ‘নাই’ হয়ে যান। কিন্তু আহমদ ছফার বেলায় ঘটেছে নিয়মের অতিক্রম। তিনি জনপ্রিয় সাহিত্যিকরূপে আবির্ভূত হন ইহকাল গতের পর। এটার প্রধান কারণ ছফার সাহিত্যচিন্তা আর সৌন্দর্যের গুণ। অন্য গুণ সহজ ভাষায় জটিল চিন্তার বয়ান। অপর কারণ আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা আন্দোলন। হয়তো কোনো কোনো প্রশ্নে কেউ কেউ একমত না-ও হতে পারেন, তবে সত্য এই—আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভার আন্দোলন দিয়েছে তার সাহিত্যের পুরুজ্জীবনের প্রশস্ত পথের নব দিশা। 

 

জগতে একবার যিনি স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছেন, তার পক্ষে অন্যের দাসত্ব গ্রহণ করা সম্ভব নয়! দাসত্ব মানেই অপরের অধীন কালযাপন। কারণ ব্যক্তির স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতার সূত্র অপরের স্বাধীনতার সমান। কিন্তু মানব সন্তানের চিন্তার স্বাধীনতা অবারিত। অবারিত চিন্তার স্বাধীনতা ব্যক্তির সৃষ্টিশীল পথ প্রশস্ত করে। কীর্তিমান আহমদ ছফার সৃষ্টিশীল কর্মের বেলায়ও তাই ঘটেছে। ফলে তিনি আমাদের কাছে আনকোরা। একেবারেই নতুন চিন্তার আকর। কেননা তিনি কথায় টগবগে, বচনে সহজ, যাপনে সরল, চিন্তায় দার্ঢ্য আর সাহিত্যকে অন্তর্গত সত্যের দুয়ারের সামনে হাজির করেছেন। তার নিষ্ঠ পাঠকমাত্র সেই পরকীয়া সূত্র টের পাবেন। বলতে দ্বিধা নেই, লেখক হিসেবে ছফা তাঁর সময়কে অতিক্রম করেছিলেন। কারণ মত প্রকাশের সততার ক্ষেত্রে তার কোনো পিছুটান ছিল না। তিনি কারো মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেন না, বলতেন সত্যের দোহাই রূপে। তাঁর বলার ভেতরে ব্যক্তিগত ক্ষতি-বৃদ্ধির ব্যাপার নেই। ফলে বুদ্ধিবৃত্তির ব্যবসায়ে তিনি জীবদ্দশায় কারো কারো অস্বস্তির কারণও ছিলেন। কিন্তু যত ছুতোই থাকুক না কেন—আজ তার সৃষ্টিশীল পর্যবেক্ষণকে অস্বীকার করবার কোনো জো নেই।

নানা পত্রপত্রিকায় এখনো ছড়ানো আছে আহমদ ছফার অমূল্য বয়ান। তাই আমরাও মনীষী আহমদ ছফাকে নতুনভাবে পরখ করার অবসর নিয়েছি। চালু বাংলায় অবসর মানে কর্মমুক্তি। তবে অবসরকে আমরা জিরানো অর্থে নিলাম। অবসর নিলাম আহমদ ছফার লেখার ওপর একটু দম ফেলার। মানে চিন্তার অবসর আকারে। আমরা মনীষী ছফার কয়েক টুকরো সাক্ষাৎকার একত্র করেছি। নাম জারি করেছি ‘আহমদ ছফার বাছাই জবাব’। কেন বাছাই জবাব? প্রথমত, আহমদ ছফাকে নতুন রূপে পড়া আর বোঝার জন্য সাক্ষাৎকারের বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, যেকোনো প্রশ্নের উত্তরে একজন লেখক কীভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। তৃতীয়ত, লেখার বিষয় অতিক্রান্ত যেসব চিন্তা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, সেসব প্রশ্নের জবাব সামনে হাজির করা। চতুর্থত, আহমদ ছফার জীবদ্দশার নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট পরিস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের অন্তর্দৃষ্টির একটা অবলোকন। যেকোনো সাক্ষাৎকার মাত্রই একজন লেখকের অন্তর্দৃষ্টির তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণ। তাতে বান্তর আর অবান্তর দুই ধরনের কথার সমাহার থাকে। থাকে কল্পনা আর জ্ঞানের সম্বন্ধ। তবে যেকোনো প্রশ্নই তার উত্তরের সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সাক্ষাৎকার হলো লেখার অপূর্ণ বিষয়ের শূন্যস্থান পূরণ। ফলে একজন আহমদ ছফাকে বুঝবার আর জানবার ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার এক অনন্য উপায়।

‘আহমদ ছফার বাছাই জবাব’ বইয়ের প্রচ্ছদ

আমরা যখন ‘আহমদ ছফা : বাছাই জবাব’ সম্পাদনায় হাত দিয়েছি, তখন মহামারিকবলিত দুনিয়া স্থবির। সংকটকবলিত মানব প্রজাতি আপন অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে রত। সে অনির্বচনীয় মহামারি মোকাবেলা করতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। বস্তুত এই সময় মানুষ যার মতো একা হয়ে যায়। ফলে ছফার অগ্রন্থিত সাক্ষাৎকার উদ্ধার করতে ঊন-কাঠখড় পোহাতে হয়। তবে আমরা সংকলনে গ্রন্থিত সাক্ষাৎকারের সকল গ্রহীতার শরণাপন্ন হয়েছিলাম। আমাদের সৌভাগ্য—আলাপচারীগণ খুবই সানন্দে প্রকাশের সম্মতি দেন। সম্পাদনার তথ্য ঘাটতি, সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রেক্ষিত আর সময়ের অপরাপর বিষয়াবলির কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। নানা সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন। তাদের সার্বিক পরামর্শ ও ভালোবাসার কারণে দ্রুততম সময়ে সম্পাদনা সম্পন্ন হয়। আমরা সবার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ। ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারে প্রকাশিত আহমদ ছফার সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন লেখক সামসুদ্দোজা সাজেন। আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভার সজ্জন লেখক আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান ও সামসুদ্দোজা সাজেনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নানা তথ্যের নিরীক্ষার ক্ষেত্রে হাত বাড়িয়েছেন সর্বজন লেখক নাসির আলী মামুন, সলিমুল্লাহ খান, নূরুল কবীর, মারুফ রায়হান, সাজ্জাদ শরিফ, রাজু আলাউদ্দিন, আলতাফ পারভেজ, জুলফিকার হায়দার, আহমাদ মোস্তফা কামাল, বিপ্লব রহমান, মিল্টন আনোয়ার ও শেখ মামুনুর রশিদ। দুটো অগ্রন্থিত সাক্ষাৎকারের সন্ধান দিয়েছেন লেখক হামীম কামরুল হক ও লোক সম্পাদক অনিকেত শামীম। সম্পাদনায় শিরোনামের ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা স্বাধীনতা নিয়েছি। আগের প্রচারিত শিরোনামের বদল করেছি। যাতে নতুন রূপে আহমদ ছফাকে দৃষ্টিপাত করা যায়। আমাদের ইচ্ছে ছিল আরও দু-একটি সাক্ষাৎকার সংকলন ভুক্ত করার। কিন্তু অনুমতি প্রার্থনা করে পাইনি। ফলে সংকলন ভুক্ত হয়নি। আহমদ ছফার আরও কিছু অগ্রন্থিত সাক্ষাৎকারের গুজব শুনেছি, কিন্তু অক্ষরে দেখিনি। ভবিষ্যতে হয়তো দেখা মিলবে।

সবচেয়ে দুঃখের বিষয়—এতদ সময়ে ভারতের কবি সৌম্য দাশগুপ্তের সঙ্গে বাঙালি পণ্ডিত ও লেখক সুধীর চক্রবর্তীর সম্পাদনা সাক্ষাৎকার গ্রন্থভুক্ত বিষয়ে আলোচনা হয়। সৌম্য আমাদের হয়ে অনুমতি প্রার্থনা করেছেন তার কাছে। কিন্তু অল্পদিন গতে তিনি পরলোক যান। তার হাতে সংকলনটি তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ভারতের ‘স্বাধীন বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদক ও লেখক কেশব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছেন বন্ধু রবীন গুহ। উদারচিত্তে তিনি সম্পাদনায় সহযোগিতা করেছেন। শিলাপাঠ পত্রিকায় প্রকাশিত লেখক মিজান রহমানের নেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের অনুমতি নিয়েছেন চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী চৌধুরী ফাহাদ। মহামারির এই সংকটময় সময়ে বই প্রকাশের ঝুঁকি গ্রহণ করার জন্য চন্দ্রবিন্দু পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই। বইয়ে সাক্ষ্য মিলবে—চিন্তায় আর কথায় আহমদ ছফা একজন স্পষ্টবাদী লেখক। কারণ অপ্রিয় সত্য বলতে তার কোনো দ্বিধা ছিল না। ছিল না ট্যাবু কিংবা পিছুটান। ছিল সৎ সাহস আর ভাষার পরিমিতি বোধ। ছিল জটিল বিষয়কে সহজভাবে ব্যাখ্যা হাজির করবার অসাধারণ ক্ষমতা। তিনি ছিলেন মেরুদণ্ড বর্গা দেওয়া বুদ্ধিজীবীদের সম্পূর্ণ বিপরীত। আদতে আহমদ ছফা একজন আপাদমস্তক খাঁটি লেখক ও সহজ চিন্তাবিদ। আমাদের আশা, তার রচনাবলি আর কথামালা আরও অধিক পাঠক সমাদৃত হবে।  

বড়ই আনন্দের বিষয়—সংকলনে আমরা আহমদ ছফার পনেরোটি প্রতিকৃতি সন্নিবেশ করেছি। শিল্পের বিভিন্ন ফর্মে প্রতিকৃতিগুলো এঁকেছেন সমকালীন পনেরোজন তরুণ শিল্পী। তা সম্ভব হয়েছে শিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ্য ও আবীর সোমের দৌলতে। বইয়ের সুন্দর প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। অত্যন্ত দরদ দিয়ে ছফাকে এঁকেছেন শিল্পীরা। বলা যায় স্বল্প সময়ে অসাধ্যকে সাধ্য করেছেন তারা। তাদের জন্য অটুট ভালোবাসা আর সাধুবাদ। আমরা ছফাকে নানা দিক থেকে জানা, দেখার ও বোঝার চেষ্টা করেছি। সংকলনভুক্ত আহমদ ছফা সাক্ষাৎকারে সাহিত্য থেকে সংস্কৃতি, ধর্ম থেকে দর্শন, রাজনীতি থেকে ইতিহাস, প্রকৃতি থেকে মানুষ, কৃষি থেকে শিল্প, লড়াই সংগ্রাম থেকে মুক্তির প্রশ্ন, জনসমাজ থেকে মানব প্রকৃতির অন্তর্গত স্রোতোধারার বিশ্লেষণ জারি আছে। মতাদর্শিক তাড়না নয়, বাস্তবতার নিরিখে সত্যাদর্শে কলম সঁপে দিয়েছিলেন তিনি। তার লেখার বড় আদর্শ দৃষ্টিভঙ্গিতে সমকালীন থাকা। তাতেই রচিত হয়েছে অতীত আর ভবিষ্যতের অমূল্য মেলবন্ধন। বাংলা সাহিত্যে সত্যিই তাঁর মতো প্রজ্ঞাবান লেখক বিরল।

 

(আহমদ ছফার বাছাই জবাব বইয়ের ভূমিকা)