• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯, ০৯:৫৩ পিএম

ডাকসু

ভিপি ২০, জিএস ১২জন সহ প্রার্থী তালিকায় ২৯৪ জন

ভিপি ২০, জিএস ১২জন সহ প্রার্থী তালিকায় ২৯৪ জন


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২০ ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১২ জনসহ মোট ২৯৪ জনকে প্রার্থী তালিকায় বাছাই করা হয়েছে। আর তথ্যের অসম্পূর্ণতা ও ভোটার তালিকায় নাম না আসায় ৭ জনের প্রার্থিতা সাময়িকভাবে বাতিল হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় ডাকসুর ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।

কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি-জিএস ছাড়া অন্যান্য পদগুলোর মধ্যে এজিএস পদে ১৩, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ৯, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক ৯, আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পাদক ১৩, সাহিত্য সম্পাদক ৮, সংস্কৃতি সম্পাদক ১২, ক্রীড়া সম্পাদক ১১, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক ১০, সমাজ সেবা সম্পাদক ১৫ এবং সদস্য পদে ৮৮ জনকে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় বাছাই করা হয়েছে।

এদিকে তথ্যের অসম্পূর্ণতা ও ভোটার তালিকায় নাম না আসায় ভিপি পদে ১, জিএস পদে ২ এবং সদস্য পদে ৪ জনসহ মোট ৭ জনের প্রার্থিতা সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে। ভিপি পদে আব্দুল্লাহ জিয়াদ; জিএস পদে এ আর এম আসিফুর রহমান ও উম্মে হাবিবা বেনজির এবং সদস্য পদে ইশাত কাসফিয়া ইলা, হায়দার মোহাম্মদ জিতু, শাফায়াত হাসনাইন সাবিত, রাইয়ান খানের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে আসিফুর রহমানের তথ্যের অসম্পূর্ণতা এবং বাকিদের ভোটার তালিকায় নাম না আসার কারণে বাতিল হয়েছে।

‘সবঠিক থাকা সত্ত্বেও’ প্রার্থিতা বাতিল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী আসিফুর রহমান। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সকল বিধি মেনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা সত্ত্বেও জিএস পদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, শিশুসুলভ ও হাস্যকর।

হল সংসদ:

হল সংসদের মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৪৬, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ২৬, জগন্নাথ হলে ৩২, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩১, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২৩, সূর্যসেন হলে ২৬, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৩৪, স্যার এ এফ রহমান হলে ৩৩, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২৮, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৩৯, কবি জসিম উদ্দীন হলে ২২, অমর একুশে হলে ৩৯, বিজয় একাত্তর হলে ৩৬, রোকেয়া হলে ৩০, শামসুন্নাহার হলে ২৩, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ১৮, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ৩৫ এবং কবি সুফিয়া কামাল হলে ২৩ জনসহ মোট ৫৪৪ জনকে প্রার্থী তালিকায় বাছাই করা হয়েছে।

আর ভোটার লিস্টে নাম না আসা ও তথ্যগত ভুলের কারণে ও দেরিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে হল সংসদেও বেশকিছু প্রার্থী বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ১, ফজলুল হক মুসলিম হলে ২, কবি জসিম উদ্দীন হলে ৪, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৬, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৪, শামসুন্নাহার হলে ৫ এবং স্যার এ এফ রহমান হলে ৬ জনসহ মোট ৩১ জনের প্রার্থিতা সাময়িক বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে হল সংসদের বিভিন্ন পদে একের অধিক প্রার্থী মনোনয়ন না নেওয়া ও কিছু বাতিল হওয়ায় বেশকিছু প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ১৮টি হল মিলিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০।

প্রার্থী তালিকায় বাদ পড়াদের মধ্যে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর বেশ কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন। তবে তালিকার বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকলে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে লিখিতভাবে হল প্রশাসনকে জানানো যাবে। লিখিত অভিযোগ যাচাই বাছাই শেষে আগামী ৩ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর শুরু হবে প্যানেলগুলোর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা।

এদিকে এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১০টি প্যানেলের অংশগ্রহণের কথা জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বামজোট, কোটা সংস্কার আন্দোলন, জাসদ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী, ছাত্রমৈত্রী জোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার আন্দোলন। এছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে অনেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তারাও মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রার্থীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। বুধবার ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া শুনেছেন তারা। পুরো প্যানেল নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে পরিচিতি হয়েছেন প্রার্থীরা। কেউ কেউ গিয়েছেন এককভাবেই। সমর্থন আদায়ে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া শুনেছেন ছাত্রলীগ প্যানেলের ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। ক্যাম্পাসের কলা ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকায় শিক্ষার্থীদের কাছে দাবির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনী হাওয়া এখনও লাগেনি। ২ মার্চের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করবো। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের মতামত নিচ্ছি। তারা কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই সেটা জানতে চাচ্ছি। আমরা সবাই মিলে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাই। শিক্ষার্থীরা যাদেরকে যোগ্য মনে করবে তাদেরকেই ভোট দিবে। আমরা যুগোপযোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার লক্ষ্যেই নির্বাচনী ইশতেহার প্রদান করব।

অনানুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থীরা। বুধবার বেলা একটার দিকে ক্যাম্পাসের মধুর ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কলা ভবন, ক্যাম্পাস শ্যাডো, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, রেজিস্ট্রার ভবন এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তারা। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও প্রচারণা শুরু করেনি দলটি।

শুভেচ্ছা বিনিময় ও ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্রদলের অবস্থান তুলে ধরেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। ভোট ডাকাতি না হলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পুরো প্যানেলই বিজয়ী হবে বলে মনে করি।

দলীয় দাবি দাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে সমর্থন আদায়ে কাজ করেছেন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রগতিশীল ছাত্র জোটের’ প্রার্থীরা। সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট, কলাভবন, ক্যাম্পাস শ্যাডো ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন তারা।

এই বিষয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সহ-সভাপতি (ভিপি) লিটন নন্দী বলেন, আমরা দলগত দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়েছি। দাবি তুলে ধরেছি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। তবে মনোনয়নপত্র প্রাথমিক বাছাইয়ে বিভিন্ন হলের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এই ঘটনার নিন্দা জানাই।

ডাকসুর তফসিল অনুযায়ী, ১১ মার্চ সকাল ৮টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। সংশ্লিষ্ট হলের ভোটার (আবাসিক ও অনাবাসিক) তার নিজ হলের ভোট কেন্দ্রে বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট প্রদান করবেন। ভোট গ্রহণের পর গণনা শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনের তারিখ সামনে রেখে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় মনোনয়ন বিতরণ। এ প্রক্রিয়া ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট হলে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

এরপর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ২৭ ফেব্রুয়ারি হলের নোটিশ বোর্ড এবং ডাকসুর ওয়েবসাইটে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তালিকার বিষয়ে কোনো প্রার্থীর আপত্তি থাকলে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার মধ্যে হল সংসদ সভাপতির কাছে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে। ২ মার্চ দুপুর ১টা পর্যন্ত লিখিত ও স্বাক্ষরকৃত আবেদনসহ হলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে যেকোনো প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন। ৩ মার্চ বিকেল চারটায় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা হলের নোটিশ বোর্ড এবং ডাকসুর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

আরআই