• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০১৯, ০৯:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০৩:৫৫ এএম

দায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তি কম, মামলাজট বাড়ছেই

দায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তি কম,  মামলাজট বাড়ছেই

গত পহেলা অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলা দায়ের ও পুনর্জীবিত / প্রাপ্ত হয়েছে দুই হাজার ৭৫১টি। একই সময়ে এখানে মামলা নিস্পত্তি হয়েছে এক হাজার ৯২৮টি। অর্থাৎ মামলা দায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তি কম।

সুপ্রিম কোর্টের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৮ সালের ত্রৈমাত্রিক প্রতিবেদন অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগ ও অধস্তন আদালতের চিত্রও একই। অর্থাৎ মামলা দায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তি কম।

প্রতিবেদন অনুসারে ওই সময়ে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা দায়ের ও পুনর্জীবিত / প্রাপ্ত মামলার সংখ্যা ২৫ হাজার ২৬৩টি। সে সময়ে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল ১৬ হাজার ৩০৬টি।

আর অধস্তন আদালতে (সব জেলা ও দায়রা  জজ আদালত এবং অধীনস্থ আদালতসমূহ, ট্রাইব্যুনাল এবং সিএমএম ও সিজেএম আদালত এবং অধীনস্থ আদালতসমূহ) দায়ের ও পুনর্জীবিত / প্রাপ্ত মামলার সংখ্যা চার লাখ ১৯ হাজার ৮৪০টি। আর নিস্পত্তি হয়েছে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮৯৭টি মামলা।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার পর হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলা ছিল ২০ হাজার ৫৬৭টি। ৪৬ বছরের ব্যবধানে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৬৫২টি। আপিল বিভাগে ২০ হাজার ৪৪২টি। আর নিম্ন আদালতে ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৬টি। সব মিলে ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫০টি।

তবে মামলাজট হ্রাসে অধস্তন আদালতের বিচারকদের সুপ্রিম কোর্ট হতে নানা নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে সময়ে সময়ে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নিজেও মামলাজটের পেছনে চারটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে— জনসংখ্যা ও মামলার সংখ্যা অনুপাতে বর্তমানে দেশে বিচারক সংখ্যা অপর্যাপ্ত; অবকাঠামোগত সমস্যার ফলে অনেক স্থানে বিচারকদের এজলাস ও খাস কামরা (চেম্বার) শেয়ার করতে হয়। ফলে কর্মঘণ্টার অপচয় হয়; সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আদালতের কর্মঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহার না করার প্রবণতা এবং আইনজীবীদের পক্ষ হতে বারবার মামলার শুনানি মুলতবির আবেদন করা। ফলে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও নিষ্পত্তির হার সেভাবে বাড়ছে না।

গত আট বছরে দেশের আদালতসমূহে এক কোটি ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৬২টি নতুন মামলা দায়ের হয়েছে। এ সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ৯১ লাখ ৯২ হাজার ৬৩৪টি মামলা। অনিষ্পন্ন রয়েছে ২২ লাখ ২২ হাজার ১২৮টি মামলা। অর্থাৎ গড়ে প্রতি বছরে প্রায় তিন লাখ মামলা নিষ্পত্তি হয়নি।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৮ সাল শেষে দেশের আদালতে বিচারাধীন মামলা ছিল ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৮৯৮টি। ২০০৯ সালে ১০ লাখ ২৭ হাজার ১৩১টি নতুন মামলা দায়ের হয়। অর্থাৎ মোট মামলা দাঁড়ায় ২৮ লাখ ৫ হাজার ২৯টি। এ সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৫৪২টি। পরের বছর দায়ের হয় ১২ লাখ ১৭ হাজার ৯২৭টি এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ১১ লাখ ১ হাজার ৫৩৩টি। ২০১২ সালে দায়ের হয় ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৫৮৯টি এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ লাখ ৩২ হাজার ১৮৯টি। পরের বছর ১৫ লাখ ৫ হাজার ১৬৭টি মামলা দায়ের এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ১১ লাখ ১৯ হাজার ২৯৪টি। ২০১৪ সালে ১৬ লাখ ৭ হাজার ২৫৫টি মামলা দায়েরের বিপরীতে ১৩ লাখ ৪ হাজার ৫৪৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। পরের বছর ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫০২টি মামলা দায়ের এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ১৪ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬টি। ২০১৬ সালে ১৪ লাখ ৫ হাজার ২টি মামলা দায়ের হয়। আর নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৩টি। পরের বছর ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ১৮৯টি মামলা দায়ের হয় এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ১১ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৩টি মামলা।

বছর শেষে গিয়ে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০।

দেশে কর্মরত বিচারক রয়েছেন ১ হাজার ৬৪৭ জন। এর বিপরীতে মামলা রয়েছে ৩৪ লাখ। অর্থাৎ বাংলাদেশে ১০ লাখ লোকের বিপরীতে ১০ জন বিচারক রয়েছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তিন কোটি মামলার বিপরীতে বিচারক রয়েছেন ২৩ হাজার জন। কিন্তু আমেরিকায় প্রতি দশ লাখে বিচারক রয়েছেন ১০৭ জন, কানাডায় ৭৫ জন, ইংল্যান্ডে ৫১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ জন এবং ভারতে ১৮ জন।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ভারতে একজন বিচারকের বিপরীতে ১ হাজার ৩৫০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে এবং ওই বিচারক বছরে ৫১৬টি মামলা নিষ্পত্তি করছে। বাংলাদেশে একজন বিচারকের বিপরীতে ২ হাজার ১২৫টি মামলা বিচারাধীন। গত বছরে আমাদের একজন বিচারক বছরে নিষ্পত্তি করছেন ৭০০ মামলা।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জনসংখ্যার আধিক্যের কারণেই দেশে আদালতগুলোতে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। যদি আইনজীবী ও বিচারকগণ সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন তাহলে মামলাজট হ্রাস করা সম্ভব।

মাআ/এসএমএম