• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০১৮, ০৪:০৯ পিএম

ছয় বছরেও শেষ হয়নি তাজরীন ট্র্যাজেডির বিচার

ছয় বছরেও শেষ হয়নি তাজরীন ট্র্যাজেডির বিচার
আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর তাজরিন কারখানা

 

ছয় বছরেও সম্পন্ন হয়নি ২০১২ সালে ঘটে যাওয়া তাজরীন ট্র্যাজেডির বিচার।মামলার সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলাটি দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট বিচারিক কর্তৃপক্ষ।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানায় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুনে পুড়ে মারা যান ১১২ জন শ্রমিক। আহত হন অর্ধশতাধিক।

অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম একটি মামলা করেন। ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত। অভিযোগ আছে

এরপর থেকে আসামিপক্ষের লোকজনের আর্থিক প্রলোভনের কারণে সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছেন না। ফলে মামলার বিচারিক কার্যক্রমও এগুচ্ছে না।

মামলায় এ যাবত ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। বাকি সাক্ষীদের দুইজন মালিকের পক্ষেই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক নেতাদের মতে, ভুক্তভোগী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে অনেক অনিয়ম হয়েছে। অনেকে কম পেয়েছেন, কেউ বেশি পেয়েছেন। তবে আহত শ্রমিকদের বেশিরভাগই এখনো  কোনো প্রকার সহায়তা ছাড়া ভয়াবহ অসুস্থতা নিয়ে বসবাস করছেন। অথচ সুচিকিৎসা হলে তারা আগের মতো অনেকটাই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারতেন। এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন গার্মেন্টস শ্রমিক নেতারা।

রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলী কাজী শাহানারা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, মামলায় সাক্ষীদের প্রতি অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ মামলায় অধিকাংশ সাক্ষীরা হলেন ওই তাজরীন ফ্যাশনের কর্মচারী। আর তারা ছিলেন ওই এলাকার ভাড়াটিয়া। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যখন তদন্ত করেছেন, তখন তিনি সাক্ষীদের বর্তমান ঠিকানা লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা নেননি। যে কারণে বর্তমান ঠিকানায় অর্থাৎ সাভারের ঠিকানায় কোনো সমন গেলে পুলিশ তাদের খুঁজে পায় না। এজন্য আমরা কিছু সাক্ষী আনতে পারিনি। তবে যাদের স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে, তাদের পর্যায়ক্রমে আমরা সাক্ষ্য দিতে আদালতে নিয়ে আসবো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানো না হলেও কিছু আর্থিক প্রলোভন দেখানো হয়েছে। আদালতে সাক্ষী নেওয়ার সময় সাক্ষীরা মালিক পক্ষের কথা বলেছেন। ঘটনার পর গার্মেন্টস মালিক দেলোয়ার বেশকিছু সাক্ষীদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। আর সেই ক্ষতিপূরণের কারণেই অনেকে আদালতে সাক্ষী দিতে চান না। আর সাক্ষী দিলেও তারা মালিকপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছেন।তারা ক্ষতিপূরণ পাওয়া বা প্রলোভনে পড়া শ্রমিক। সাতজনের মধ্যে এ রকম দুজন সাক্ষী ছিলেন যারা মূল কথা বলতে চাননি।

উল্লেখ্য ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১১ জন পোশাক শ্রমিক ও কর্মী নিহত হন। আহত হন ১০৪ জন শ্রমিক। গার্মেন্টস কারখানাটিতে এক হাজার একশ’ ৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতে। তবে দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। নিহত ১১১ জনের মধ্যে তৃতীয় তলায় ৬৯ জন, চতুর্থ তলায় ২১ জন, পঞ্চম তলায় ১০ জন, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যান ১১ জন। লাশ শনাক্ত হওয়ায় ৫৮ জনকে তাদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি ৫৩ জনের লাশ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের অশনাক্ত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারা যুক্ত করা হয়। মামলাটি তদন্তের পর ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পুলিশের ইন্সপেক্টর একেএম মহসীনুজ্জামন।

ভবনটির নকশায় ত্রুটি ও জরুরি নির্গমনের পথ না থাকায় এবং আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা অগ্নিকাণ্ডকে অগ্নিনির্বাপন মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন-প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল।

আসামিদের মধ্যে মো. শহিদুজ্জামান দুলাল, মোবারক হোসেন মঞ্জু, মো. রানা ওরফে আনোয়ারুল ও মো. শামিম মিয়া পলাতক রয়েছেন।

মাআ/আরআই