• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০১৯, ০৭:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৭, ২০১৯, ০৭:২৯ পিএম

ওয়াসার পানি ফোটাতেই পোড়ে ৩৩২ কোটি টাকার জ্বালানি

ওয়াসার পানি ফোটাতেই পোড়ে ৩৩২ কোটি টাকার জ্বালানি

ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা পানি ফুটিয়ে পান করে। এজন্য ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬২০ টাকার জ্বালানি পোড়ানো হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। একইসঙ্গে ওয়াসাকে অধিকতর কার্যকর ও সেবাধর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে ১৩ দফা সুপারিশ দিয়েছে।

“ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক” এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আজ রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল,  নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা- নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রণয়ন ও উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহ্নূর রহমান এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম। 

গবেষণায় দেখা যায়, আগের তুলনায় ঢাকা ওয়াসার উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক অর্জন ও উদ্যোগ রয়েছে। যেমন- সিস্টেম লস কমিয়ে আনা; রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি; ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিলের তথ্য জানা এবং মোবাইল ফোন ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ ব্যবস্থার পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল বিলিং সিস্টেম চালু করা; সার্বক্ষণিক অভিযোগ গ্রহণে হটলাইন স্থাপন; কমিউনিটি প্রোগ্রাম ও কনজ্যুমার রিলেশন বিভাগ গঠন; ৮০টি ওয়াটার এটিএম বুথের মাধ্যমে খুচরা পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা; ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমাতে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প গ্রহণ ইত্যাদি। তবে প্রতিষ্ঠানটির নানা কার্যক্রম পরিচালনায় এখনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতির পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি বিদ্যমান। এছাড়া অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ওয়াসা বোর্ডের কার্যকারিতায়ও ঘাটতি, ওয়াসা সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিতে সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি আইনের কার্যকর প্রয়োগে ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পানির চাহিদা পূরণ, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানি উৎপাদন ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতে সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। 

ঢাকা ওয়াসার জন্য অনুমোদিত পদের তুলনায় সার্বিকভাবে ৩১% পদ খালি আছে। নিয়োগ, পদায়ন ও বদলি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণসহ ক্রয় প্রক্রিয়া, প্রকল্প বাস্তবায়ন, মিটার রিডিং নেয়া এবং সর্বোপরি গ্রাহক সেবায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা, জনঅংশগ্রহণে ঘাটতি ও গণশুনানিতে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান না হওয়া এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ইত্যাদি প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। 

টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানির উৎপাদন ব্যবস্থায় ঘাটতির কারণে গত ১০ বছরে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে পাম্পের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৪৮২টি থেকে ৯০০টি হয়েছে। এখনো ভূগর্ভস্থ পানির উপর ৭৮% নির্ভরতা রয়েছে। অতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর ২ থেকে ৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। 

পয়ঃনিষ্কাশন সেবায় সক্ষমতা ও কার্যকারিতার ঘাটতির কারণে প্রতিদিন ১৩ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত পয়বর্জ্য বিভিন্ন খাল হয়ে পার্শ্ববর্তী নদীগুলোয় পড়ে। এতে নদী দূষণে ঢাকা ওয়াসারও দায় থেকে যায়। ১৯৯০ সালের পর ঢাকা ওয়াসা নতুন কোনো পয়ঃলাইন তৈরি করেনি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ট্রিটমেন্ট প্লান্ট আছে মাত্র একটি, যেটিও আবার সক্ষমতার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ ব্যবহার করে। 

১৩ দফা সুপারিশ :
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঢাকা ওয়াসার বিবেচনার জন্য ১৩ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- পানি ও পয়নিষ্কাশন সেবার মূল্য নির্ধারণে স্বতন্ত্র রেগুলেটরি কমিশন গঠন, ওয়াসা বোর্ডের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন, জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা একটি একক কর্তৃপক্ষের নিকট ন্যস্ত করা, শূন্য পদগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানির উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিতে বৃষ্টির পানি ধারণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা, ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রণোদনার ব্যবস্থা চালু করা এবং অসাধু কর্মচারীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, সেবার মান যাচাই ও উন্নতিকল্পে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেবার মান মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, যা নিয়মিত গণশুনানির মাধ্যমে করা যেতে পারে। 

উল্লেখ্য, এপ্রিল ২০১৮ হতে মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত পরিচালিত এ গবেষণায় ২ হাজার ৭৬৮ জন সংযোগ গ্রহণকারীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

জেডএইচ/ এফসি