• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০১৯, ০৯:৪৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২০, ২০১৯, ০৯:৪৪ পিএম

রমজানের জুজু

চড়া হচ্ছে চিনি পেঁয়াজ ছোলার দাম

চড়া হচ্ছে চিনি পেঁয়াজ ছোলার দাম


রমজানের আগে সাধারণত বাজারে নিত্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। এই চাহিদাকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মূল্য বাড়িয়ে দেন। যদিও এসব বিষয় স্বীকার করেন না কোনো ব্যবসায়ী। মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোয় নিত্যপণ্য স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি রমজানের আগে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয় ভর্তুকিতে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ উল্টো। এই রমজানের পণ্য নিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মেতে ওঠেন কিছু ব্যবসায়ী। বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এরইমধ্যে সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে। 

রাষ্ট্রয়াত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, রমজানের প্রয়োজনীয় ৫ পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে তাদের কাছে। কিন্তু বাজারে এর প্রতিক্রিয়া ব্যতিক্রম। ধীরে চড়া হচ্ছে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য চিনি, পেঁয়াজ, ছোলার দাম। আগে বাড়তো একধাপে, এখন বাড়ে ধাপে ধাপে। আর রমজানের আগেই বাড়িয়ে দেয়া হয় এসব পণ্যের দাম। যার কারণে রমজানে দাম না বাড়লেও সারা রমজান নিত্যপণ্য কিনতে হয় চড়া দামে। শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কারওয়ান বাজার, মেরাদিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

সরেজমিনে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানের আগেই সরকারের নানা পদক্ষেপ ও কঠোর হুশিয়ারি বার্তা অসাধু ব্যবসায়ীদের কান পর্যন্ত পৌঁছেনি। রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এরইমধ্যে চড়া হতে শুরু করেছে। চিনির দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে প্রায় ১শ টাকা। বেশ কিছুদিন ধরে প্রতি বস্তা চিনি ২ হাজার ৪২০ টাকায় বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে দাম বেড়েছে ১শ টাকা। তবে বাজারভেদে এখনও সাদা চিনি ৫২ টাকা এবং আখের চিনি ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রমজানের আরেকটি প্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ নিয়ে প্রতিবছর সক্রিয় থাকে কারসাজি চক্র। আমদানির অজুহাতে বাড়ানো হয়ে থাকে দাম। এবারো এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এরইমধ্যে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু করেছে। পণ্য সরবরাহ ও আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও বাজারে এরইমধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি পাল্লায় (৫ কেজি) ২০ টাকা করে। দেশি পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১শ টাকা। এরইসঙ্গে পাইকারি বাজারে বেড়েছে আলুর দামও। কারওয়ান বাজারে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। যা আগের সপ্তাহে ছিল ৬৫ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পাল্লাপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ টাকা। 

ছোলার দাম ধীরে ধীরে বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সরকারের তীক্ষ্ণ নজর থাকায় এক্ষেত্রে এগোনোর সুযোগ হয়নি। তবে বিক্রেতারা বলছেন, এখন পর্যন্ত ছোলার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ভালো মানের ছোলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। কিন্তু রমজান পর্যন্ত এই দাম থাকবে কি না সেটাই দেখার বিষয়। এছাড়া মশুর ডাল কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, বুট ৮০ টাকা, এ্যাংকর ৪৫ টাকা।
 
তবে খেজুরের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। বাজারে মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭৫০ টাকা, কালমি ৬৫০ টাকা, ডাব্বাস ২৬০ টাকা, নূর খেজুর ৬শ টাকা, ইরানি মরিয়ম ৭শ টাকা, তিউনিশিয়া ৩শ টাকা করে। এছাড়া মানভেদে খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। আখের গুড় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০ টাকা এবং খেজুর গুড় প্রতি কেজি ১০০ টাকা।

রমজানের আগে বেশি চড়া হয়েছে সবজির দাম। ক্রেতাদের নাভিশ্বাস সবজি বাজারে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে বেগুনের। বাজারভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুনের দাম বেড়েজে কেজিপ্রতি প্রায় ৩০ টাকা। মূলা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৩০ টাকা। বরবটি, পটল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, আগের সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া করলার দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে। এছাড়া বেড়েছে লাউ, সিম, পেঁপে, পাকা টমেটো, শশা ও গাজরের দাম। সব ধরনের সবজিতে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে বাজারভেদে ৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।

বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহে ঘাটতি থাকায় সবজির দাম বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে কথা হয় যাত্রাবাড়ীর সবজি ব্যবসায়ী নঈমুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি বাজারে বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে তাদের। বাজারে সবজি কম। তাই দাম বেশি। এখানে আমাদের কী করার আছে। আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দেশের অনেক জেলা থেকেই সবজি আসছে না। তাই পাইকারি মোকাম থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যখন কমে কিনব, তখন আবার দাম কমবে। তবে রমজানের আগে দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এআই/এফসি