সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়াতে সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উঠছে আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া একাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ঢাকা-৮ আসনের এমপি রাশেদ খান মেনন এই প্রস্তাবটি সংসদে তুলবেন। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে সংসদের আইন শাখা-২ এ সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি জমা দিয়েছেন তিনি। সংসদে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি গৃহীত হলে এ নিয়ে সরকারের কাজ করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে।
জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ পার করা দেশের বিপুল সংখ্যক বেকার তরুণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের লক্ষ্যে সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়স সীমা বাড়াতে সংসদের এ অধিবেশনে সিদ্ধান্ত প্রস্তাব আনা হচ্ছে। এই প্রস্তাবে সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬২ বছর করার প্রস্তাব করবেন রাশেদ খান মেনন।
জানতে চাইলে সাবেক সমাজ কল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়স সীমা বাড়ানোর দাবি তরুণ সমাজের দীর্ঘদিনের। এটি আমার কাছে একটি যৌক্তিক দাবি বলে মনে হয়। এজন্য সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি আনার চেষ্টা করছি। তিনি জানান, আমার সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি হল- ‘সংসদের অভিমত এই যে, সরকারি-বেসরকারি চাকুরিতে ঢোকার বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬২ বছর করা হউক।’ এছাড়া আমি আরো দু’টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব আনছি। এগুলো হল- ‘সংসদের অভিমত এই যে, গ্রামীণ ক্ষেত-মজুর নির্মাণ কর্মীসহ সকল স্তরের শ্রমজীবী মানুষের জন্য পেনশন স্কীম চালু করা হউক।’ আরেকটি হল- ‘সংসদের অভিমত এই যে, ব্যাংকিংখাতে আর্থিক নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দুরীকরনার্থে উপায় উদ্ভাবন ও সুপারিশ গ্রহণের জন্য ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হউক।’
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন ২৪ এপ্রিল বিকাল পাঁচটায় শুরু হবে। এই অধিবেশন মাত্র পাঁচ কার্যদিবস চলতে পারে বলে সংসদের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তবে সংসদ অধিবেশন শুরুর এক ঘণ্টা আগে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সংসদ চলাকালীন বৃহস্পতিবার বেসরকারি দিবস হিসেবে রাখা হয়। এদিন মন্ত্রী নয়- শুধু এমপিদের বিল ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাব আনা হয়। এজন্য এটিকে সংসদের বেসরকারি দিবস বলা হয়।
সংসদের আইন শাখা-২ এর সূত্র জানায়, এমপিদের আনা সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে মন্ত্রী একমত না হলে তিনি ব্যাখ্যা করে সেই সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। আর গ্রহণ করার হলে গ্রহণ করেন। তবে সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান-দুটোই হ্যাঁ বা না ভোটে দিয়ে পাস করে নিতে হয়। ফলে এটি এক ধরনের আইনও বলা যায়।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর সংসদে এমপিদের ভোটে ২৩টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হলেও এগুলো বাস্তবায়ন তেমন হয়নি। বিগত দশম সংসদে চারটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু যত সমারোহে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হয়, তত গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইন করা বা ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি ১৪৩ এর (২) ধারা অনুযায়ী, গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনো ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পরে সংসদে তা জানাবেন। কিন্তু দশম সংসদে চারটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব পাস হলেও এ সম্পর্কে মন্ত্রীরা কে কী করেছেন- তা সংসদে জানানো হয়নি।
এইচএস/আরআই