• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২, ২০১৯, ১০:৩২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২, ২০১৯, ০৭:০২ পিএম

ধেয়ে আসছে ‘ফণী’

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত

খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার (৩ মে) সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’-এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।

‘ফণী আরও ঘণীভূত ও উত্তর বা উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কাল শুক্রবার বিকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল ১০টা দিকে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে দেয়া আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ক্রমিক নম্বর ২৮ (আটাশ)-এ এসব সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে। 

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের (কি. মি.) মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৬০ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পশ্চিম মধ্য-বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৬.০ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪.৫ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।

এটি আজ সকাল ৯ টায় (২ মে, ২০১৯) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৬৫ কিলোমিটার (কি. মি.) দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ২৫ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯’শ ১৫ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯’শ ২৫ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ (ছয় ) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৯০ থেকে ১১০ কি. মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

নৌযান চলাচল বন্ধ 
ফণী এগিয়ে আসায় প্রতিকূল আবহাওয়ার শঙ্কায় সারা দেশে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)।

আবহাওয়া অফিস জানায়, দেশের নদী বন্দরগুলোতে ১ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। অতি প্রবল এ ঘূর্ণিঝড় ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে শুক্রবার ভারতের পুরীর কাছে গোপালপুর ও চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সন্ধ্যার দিকে ফণী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে পৌঁছাতে পারে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে।

বাংলাদেশে এখনও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব তেমন একটা দেখা না গেলেও শুক্রবার সকাল থেকেই ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলে দেখা যেতে পারে।

জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস
ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। 

‘ফণী’ মোকাবেলায় ১৯ জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ এখনও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ে যে কোনো ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি।

প্রস্তুত ২৭৩৯ টি আশ্রয়কেন্দ্র

ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সারাদেশে প্রস্তুত ২ হাজার ৭৩৯ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এছাড়া সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ ও হাতিয়া রুটে নৌচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

বুধবার (১ মে) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

জরুরি সভা হয়েছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে। এখানকার উপকূলীয় চার উপজেলায় লাল পতাকা উত্তোলন এবং মাইকে জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। হাতিয়ায় সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন প্রশাসন। লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন চর থেকে মানুষ ও গবাদি পশু সরিয়ে নেয়া হবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। 

খুলনায় ১০টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আড়াইশো সাইক্লোন শেল্টার ও ১১৪টি মেডিকেল টিম। স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করতে উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে। প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বরগুনা, বাগেরহাটসহ উপকূলের অন্যান্য জেলায়ও।

বাগেরহাটে ২৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, সরকারি ছুটি বাতিল

বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় বাগেরহাটের ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

বুধবার (০১ মে) বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
 
জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন- পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন, ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক সরদার মাসুদসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।

জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা সদরসহ ৯টি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং ১০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সরকারি কর্মকতা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলসহ রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার দূরুল হুদা বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সর্বত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর জেটি ও আউটার অ্যাংকরেজে অবস্থানরত জাহাজগুলো নিরাপদে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত ৫ নম্বরে উঠলেই বন্দরের পণ্য বোঝাই ও খালাসের কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে। জাহাজগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দেয়া হবে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, সুন্দরবন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ নিরাপদে থাকতে নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করমজল ও হারবাড়ীয়া পর্যটন কেন্দ্রের পর্যটকদের সরিয়ে আনা হচ্ছে।

একেএস/এসএমএম