• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২১, ২০১৯, ০৯:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২১, ২০১৯, ০৯:৫২ পিএম

সংসদ সদস্যরা যে সব সুযোগ-সুবিধা পান

সংসদ সদস্যরা যে সব সুযোগ-সুবিধা পান


আইন-প্রণয়ন আর নির্বাচনি এলাকার জনগণের পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য সংসদের ৩০০ আসনে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন দেশের সাধারণ জনগণ। পরবর্তীতে দলীয়ভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অনুপাত অনুসারে বিভিন্ন দল থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন আরও ৫০ জন। সব মিলিয়ে জাতীয় সংসদের গর্বিত সদস্য হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন মোট ৩৫০ জন। 

এই সব গর্বিত সংসদ সদস্যরা দায়িত্ব পালনের বিপরীতে রাষ্ট্র থেকে কী কী সুযোগ-সুবিধা পান? জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া রোববার (১৯ মে) দৈনিক জাগরণকে জানান, আইন-প্রণয়ন ও জনগণের পক্ষে ভূমিকা রাখতে একজন সংসদ সদস্য দিন-রাত একাকার করে কাজ করে চলেন। এ জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে একজন সংসদ সদস্যকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সম্মানিত করা হয়ে থাকে।

সংসদ সচিবালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য মোটামুটি ১২ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।  সেগুলো হলো- ১. মাসিক বেতন ৫৫ হাজার টাকা, ২. নির্বাচনি এলাকার ভাতা প্রতিমাসে ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ৩. সম্মানি ভাতা প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা, ৪. শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা, ৫. মাসিক পরিবহন ভাতা ৭০ হাজার টাকা. ৬. নির্বাচনি এলাকায় অফিস খরচের জন্য প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা, ৭. প্রতিমাসে লন্ড্রি ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা, ৮. মাসিক ক্রোকারিজ ও টয়লেট্রিজ পণ্য কেনার ভাতা ৬ হাজার টাকা, ৯. অভ্যন্তরীণ বার্ষিক ভ্রমণ খরচ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ১০. স্বেচ্ছাধীন তহবিল বার্ষিক ৫ লাখ টাকা ১১. বাসায় টেলিফোন ভাতা বাবদ প্রতিমাসে ৭ হাজার ৮০০ টাকা এবং ১২. সংসদ ভবন এলাকায় এমপি হোস্টেলে ফ্ল্যাট-বাসা। সব সুযোগ-সুবিধাগুলো যোগ করলে একজন সংসদ সদস্য প্রতিমাসে প্রায় দেড় লক্ষাধিক আর্থিক সুবিধা উপভোগ করেন।

একই সূত্র আরও জানান, উপরোক্ত সুযোগ-সুবিধার বাইরেও ২০১৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত একজন সংসদ সদস্য প্রতিবছর ৪ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ পাবেন। এই থোক বরাদ্দের পরিমাণ আগে ছিল ২ কোটি টাকা। থোক বরাদ্দের টাকা একজন সংসদ সদস্য তার নির্বাচনি এলাকায় নিজের পছন্দ মতো উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করতে পারেন। কোন প্রকল্পে তিনি এ টাকা খরচ করবেন, সেটি সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার।

জানা গেছে, এর বাইরেও বিভিন্ন সময় নানা প্রকল্পে প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা অগ্রাধিকার পান। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত বেতন-ভাতা ছাড়াও একজন সংসদ সদস্য তার নির্বাচনি এলাকায় সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), বয়স্ক ভাতা, নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা-বেষ্টনীসহ প্রায় ৪০ ধরনের প্রকল্পে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারের অলিখিত ক্ষমতা পেয়ে যান এই আইনপ্রণেতা সংসদ সদস্য হওয়ার সুবাধে। এছাড়া এলাকার শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ততা থাকে। স্থানীয় পর্যায়ে কোনও চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রেও অনেক সংসদ সদস্যদের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকে। আর স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের ওপর সংসদ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ তো সবারই জানা। 

নিকট ভবিষ্যতে সংসদ সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া দৈনিক জাগরণকে বলেন, সংসদ সদস্যদের আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, পরিকল্পনাও নেই।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ৩ হাজার ৫৬ জন। এর মধ্যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ৩০০ জন। এরমধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন ২৯৯ জন। আর দলীয় আসনের ভিত্তিতে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে শপথ নেন আরও ৪৯ জন। সব মিলিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৩৪৯ জন। 

এইচএস/এসএমএম