• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২২, ২০১৯, ০৯:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২২, ২০১৯, ০৯:৩৮ পিএম

সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে

সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে

বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বন্যপ্রাণীদের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাংলাদেশের সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের বাসিন্দা বাংলার রাজা বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। পৃথিবীর বাঘ প্রজাতির মধ্যে যে চারটি উপপ্রজাতি বর্তমানে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা হিসেবে বিবেচিত বাংলার বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির এই রাজা বাঘ। তবে সাম্প্রতিক এক জরিপে পাওয়া তথ্য মতে জানা গেছে সুন্দরবনে বৃদ্ধি পেয়েছে বাঘের সংখ্যা।
 
বেঙ্গল টাইগার কনসার্ভেশন অ্যাক্টিভিটি (বিটিসিএ) প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত এক বাঘ শুমারি কার্যক্রম (দ্বিতীয় পর্যায়) শেষে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ বন বিভাগ। 'সেকেন্ড ফেইস স্ট্যাটাস অব টাইগার ইন বাংলাদেশ সুন্দরবন্স ২০১৮' শিরোনামের একটি জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে মঙ্গলবার (২১ মে) বন বিভাগের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সুন্দরবনের পশুর নদীতে লোকালয় থেকে আটক করা একটি বাঘকে অবমুক্ত করছে বন বিভাগের কর্মকর্তারা - ছবি: ফাইল ফটো

সূত্রটি জানায়, ২০১৫ সালের জরিপ মোতাবেক সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬ টি। তবে সম্প্রতি ক্যামেরা ট্যাপিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘের অস্তিত্ব চিহ্নিত হয়েছে। সে হিসেবে তিন বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ৮ শতাংশ।  

বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে USAID BAGH প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা কার্যক্রম শুরু করা হয়।

১ ডিসেম্বর ২০১৬ থেকে ১৪ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের ১২০৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দুইটি সেশনে ২৫৩ গ্রীডে ক্যামেরা বসিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। পুনরায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে খুলনা রেঞ্জের ১৬৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় একটি সেশনে ৯৬টি ক্যামেরা বসিয়ে জরিপ তৃতীয় ধাপের জরিপ পরিচালনার কাজ চলে। একইভাবে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে ১০ মে ২০১৮ পর্যন্ত শরণখোলা রেঞ্জের ২৮৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দুইটি সেশনে ১৮৭ গ্রীডে ক্যামেরা বসিয়ে চতুর্থ ধাপের জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

চোরা শিকারীদের হাতে প্রায়ই মারা পড়োছে সুন্দরবনের বিলুপ্ত প্রায় রাজা বাঘ - ছবি: ফাইল ফটো 

এভাবে মোট চারটি ধাপে তিনটি ব্লকে ১৬৫৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ক্যামেরা বসিয়ে ২৪৯ দিন ধরে পরিচালিত ওই জরিপে ৬৩টি পূর্ণ বয়স্ক বাঘ, ৪টি জুভেনাইল বাঘ (১২-১৪ মাস বয়সী) এবং ৫টি বাঘের বাচ্চার (০-১২ মাস বয়সী) সর্বমোট ২৪৬৬টি ছবি পাওয়া যায়। যেহেতু সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের বিচরণক্ষেত্র ৪৪৬৪ বর্গ কিলোমিটার সে ক্ষেত্রে বাঘ গবেষণা ও জরিপে সর্বাধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি SECR মডেলে প্রাপ্ত এই তথ্য বিশ্লেষণ হয়। আর তাতে দেখা যায়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে ১১৪তে পৌছেছে। 

এর আগে ২০১৫ সালে USAID BAGH প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পরিচালিত জরিপে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব চিহ্নিত হয়েছিল। তিন বছরের ব্যবধানে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪টি হওয়ায় সুন্দরবনে বাঘ গড়ে ৮ শতাংশ হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের বন অধিদপ্তরের সঙ্গে চলতি বাঘ শুমারিতে অংশ গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের 'ওয়াইল্ড টিম' এবং 'স্মিথসোনিয়ান কনসার্ভেশন ইনস্টিটিউট'। গবেষণায় সামগ্রিক তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

বাংলাদেশের মত ভারতের সীমান্তবর্তী সুন্দরবনেও  প্রায়ই বাঘ হত্যা করা হয়য় - ছবি: ইন্টারনেট

বন বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, এবারের বাঘ জরিপ কার্যক্রমে প্রাপ্ত তথ্য আরো নিশ্চিত হতে জরিপের একটি খসড়া Wildlife Institute of India -তে পাঠানো হয়। পরে বাংলাদেশের তৈরি বাঘ শুমারি বিষয়ক জরিপ প্রতিবেদনটি সঠিক বলে মতামত দেয় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি। 

বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষজ্ঞদের মতামত

২০১৫ সাল থেকে বন বিভাগ বাঘ গণনার ক্ষেত্রে ক্যামেরা ট্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করে।  USAID BAGH (ইউএসএইড বাঘ) প্রকল্পের আওতায় এবারের গবেষণায়ও একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। 

কিন্তু ক্যামেরা ট্যাপিং পদ্ধতিটি কতটা নির্ভরযোগ্য, এমন এক প্রশ্নের ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বাঘ বিশেষজ্ঞ ড.মনিরুল এইচ খান বলেন, “বাঘ গণনার ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তারমধ্যে ক্যামেরা ট্যাপিং পদ্ধতিই সবচেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক । তাছাড়া সুন্দরবনের যেসব এলাকায় বাঘ বাস করে সেখান থেকে সঠিক তথ্য বের করতে পায়ের ছাপের চেয়ে ক্যামেরা ট্যাপিংই সবচেয়ে কার্যকর।

খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসা বাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করে শরণখোলার একদল গ্রামবাসী - ছবি: ফাইল ফটো 

বাঘ বৃদ্ধির বিষয়ে ড. খান বলেন, বাঘের সংখ্যা বেড়েছে তারচেয়ে যুক্তিযুক্ত কথা হচ্ছে বাঘ কমে যায়নি। সুন্দরবনের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এটা বেশ আশার কথা। যদিও এটা ঠিক যে বাঘের সংখ্যা ১০৬টি মানে একেবারে ১০৬টিই বা ১১৪টি মানে একেবারে ১১৪টিই, বিষয়টি এমন নয়। তবে ক্যামেরা ট্যাপিংয়ের মাধ্যমে উঠে আসা এ সংখ্যাটি মোটামুটি বাস্তব সংখ্যার কাছাকাছি।

গত শতকের নব্বই দশক পর্যন্ত বাঘ কেবল সুন্দরবনের বাওয়ালী বা বনজীবিদের আতঙ্কের কারণ ছিল। কিন্তু চলতি শতকের শুরুর দিকেই বন উজাড়, চোরা শিকারের ফলে হরিণ কমে যাওয়া, নতুন এলাকার খোঁজ বা খাদ্য সংকটের ফলে প্রায়ই লোকালয়ে হানা দেয় বাঘ। বাঘের আক্রমণে বেশ কয়েকজন নিহত হবার পাশাপাশি গৃহপালিত পশু হত্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সঙ্গে শুরু হয়য় বাঘেদের বৈরীতা। ফলে চোরা শিকারি, বাওয়ালী-বনজীবিরা ছাড়াও লোকালয়ের মানুষ বাঘ হত্যা করতে শুরু করে। 

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩৫টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে মাত্র ১০টি বাঘ। বাকী ২৫টির মধ্যে ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মেরেছেন স্থানীয় জনতা, ১০টি নিহত হয়েছে শিকারিদের হাতে এবং একটি বাঘ নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সিডরে।

এসকে