• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৩, ২০১৯, ১০:৩৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৩, ২০১৯, ১০:৫৩ এএম

প্রাণহানি রোধে

আয়োজন করে যাকাত দিতে জানাতে হবে পুলিশকে

আয়োজন করে যাকাত দিতে জানাতে হবে পুলিশকে

রাজধানীসহ সারাদেশে আয়োজন করে যাকাত দিতে হলে পুলিশকে জানাতে হবে। পুলিশের অনুমোদন ব্যতীত এ ধরনের আয়োজন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। যাকাত প্রদানে দুঃস্থ মানুষের প্রাণহানি রোধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত গরীব-দুঃস্থদের নতুন কাপড় বিতরণ শেষে দৈনিক জাগরণকে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, পুলিশকে না জানিয়ে কোনো ব্যক্তি আয়োজন করে যাকাত অনুষ্ঠান করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ ওই সকল আয়োজনে মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। 

ময়মনসিংহের উদাহরণ টেনে কমিশনার বলেন, পুলিশের সহযোগিতা নিলে সেখানে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না। তাই ঢাকা শহরে প্রাণনাশের আশঙ্কা ঠেকাতে যেকোনো বড় ধরনের যাকাত প্রদান অনুষ্ঠানে পুলিশের অনুমোদন লাগবে। আর পুলিশের অনুমোদন ব্যতীত এ কাজ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কমপক্ষে একদিন আগে যাকাত প্রদানের বিষয়টি থানা পুলিশকে জানাতে হবে। পুলিশের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের আয়োজনে প্রাণ ঝরলে তার দায়দায়িত্ব যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তিকেই নিতে হবে।

এদিকে ময়মনসিংহে যাকাত নিতে এসে পদদলিত হয়ে ২৭ জন নিহতের ঘটনার রাজধানীসহ সকল জেলায় যাকাত প্রদান ও অনিয়ন্ত্রিত জনসমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি নেয়ার কথা বলা হয়।

জানা গেছে, ময়মনসিংহে পৌর এলাকার নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরির মালিকের বাসায় যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে শিশুসহ অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক নারী ও পুরুষ। আহতদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ময়মনসিংহ থানার ওসি কামরুল ইসলাম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে প্রায় প্রতি বছরই ঘটে মৃত্যুর ঘটনা। তবু কাপড় দেয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করে না যাকাতদাতারা। নানা ঘটনায় শতাধিক মৃত্যু হলেও কারও বিচার হওয়ার ঘটনা বিরল। 

একইভাবে বরিশালে গত বছর ২৫ জুলাই যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা যান ৩ নারী। নগরীর কাটপট্টি রোডের খান সন্স গ্রুপের কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। আগের দিন মানিকগঞ্জে শহরের গার্লস স্কুল রোড এলাকায় পদদলিত হয়ে মারা যান ২ জন। শহরে, গ্রামে এমনকি সেনানিবাস এলাকাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এমন মৃত্যুর ঘটনায় যেসব মামলা হয়, তা তেমন এগোয় না। কঠোর সাজার বিধানও নেই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (অপরাধ) আবদুল বাতেন বলেন, এ সব ঘটনায় হত্যা মামলা হলেও তা হয় দণ্ডধির ৩০৪ ধারায়। এই ধারায় সাজা তুলনামূলক কম। কারণ যারা মারা যান তাদের তো আর ওই ব্যক্তি ইচ্ছে করে ক্ষতি করতে চান না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যাকাত দেয়ার আগে তাকে নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবনায় নিতে হবে। এছাড়া পরিকল্পনা করতে হবে দীর্ঘমেয়াদী। যেহেতু এটা ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়। তাই যাকাতের বিকল্প হিসেবে কমসংখ্যক গরীব লোক হলে তাদের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা যায় কী না সেটা বিবেচনায় নেয়া দরকার।

জানা গেছে, ১৯৮০ সালের রমজান মাসে যাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে ঢাকার জুরাইনে ভিড়ের চাপে শিশুসহ ১৩ জন পদদলিত ও নিহত হয়। ১৯৮৩ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যাকাতের টাকা ও কাপড় গ্রহণ করতে গিয়ে ৩ শিশু গুরুতর আহত হয়। ১৯৮৭ সালের ২৩ মে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণের বিপরীতে একটি খোলা চত্বরে যাকাতের কাপড় বিলি করার সময় বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম হয়। এক পর্যায়ে লোকজন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ৪ জন নিহত হয়। ১৯৮৯ সালের ৫ মে চাঁদপুর শহরে যাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হয়। পদদলিত হয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ১৯৯০ সালের ২৬ এপ্রিল। চট্টগ্রামের ঢাকা ট্রাংক রোডের পাশে পাহাড়তলীর আবুল বিড়ির কারখানায় সেদিন মারা যায় ৩৫ জন। ১৯৯১ সালের ১৩ এপ্রিল ঢাকার নবাবপুর রোডে যাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে মারা যান ২ জন।

এইচ এম/একেএস