• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৩, ২০১৯, ০৭:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৩, ২০১৯, ০৭:৪৩ পিএম

যাত্রীর চাপে বাস কাউন্টার বন্ধ, কমলাপুরে দীর্ঘ লাইন

যাত্রীর চাপে বাস কাউন্টার বন্ধ, কমলাপুরে দীর্ঘ লাইন

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাস, ট্রেন ও লঞ্চঘাটে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আর এ ভিড়ের কারণ একটাই সোনার হরিণ নামক টিকিট সংগ্রহ করতে। মানুষের এই ভিড় সামাল দিতে না পেরে বন্ধ করে দিয়েছেন বাসের টিকিট কাউন্টার। তবে ভিন্নতা দেখা যায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। রেলের সিট ফাঁকা না থাকলেও স্ট্যান্ডিং (দাঁড়িয়ে) টিকিট পেতে  লাখো মানুষের লাইন। টিকিটের আশায়  স্টেশনে রাত পার করছেন প্রত্যাশীরা। কেউ তার কাঙ্খিত টিকিট পেলে হাফ ছেড়ে বাঁচেন। মহা আনন্দে স্টেশন ত্যাগ করেন।

সরেজমিন দেখা যায়, কমলাপুর স্টেশনে বিছানা-বালিশ নিয়ে শুয়ে আছেন লাখো মানুষ। তাদের সবার উদ্দেশ্য একটাই নিশ্চিন্তে গ্রামে ফিরতে ট্রেনের টিকিট চাই। আর যাত্রাবাড়ী ও ফকিরাপুলে টিআর ট্রাভেলসসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাস কাউন্টার বন্ধ। যে কয়টি বাস কাউন্টার খোলা সেখানে নেই কোনো যাত্রী। 

ফকিরাপুল ইউনিক বাস কাউন্টারে রাজ্জাক মোল্লাহ বলেন, বাসের টিকিট নেই। বাসে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কোনো টিকিট বিক্রি হয় না। তাই কাউন্টারে যাত্রী আসলেও টিকিট না পেয়ে চলে যাচ্ছেন। তবে ভিন্ন দৃশ্য লঞ্চঘাটে। দুই একটি কাউন্টার বাদে অধিকাংশগুলো খোলা রাখা হয়েছে। খোলা কাউন্টারের সামনে হাজার হাজার টিকিট প্রত্যাশীরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে কেবিনের টিকিট কালোবাজারিদের হাতে তুলে দিয়ে কয়েকগুণ বাড়তি দামে বিক্রি করা হয়েছে বলে লঞ্চযাত্রীদের অভিযোগ।

বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয় গত শুক্রবার (১৭ মে) থেকে। তিন-চার দিনের মধ্যে এসি ও নন এসি কাউন্টার সার্ভিস বাসগুলোর টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। এজন্য যাত্রীদের সঙ্গে অতিরিক্ত কথা ও ঝামেলা এড়ানোর জন্য গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও ফকিরাপুল হানিফ, ইউনিক, এনা, শ্যামলীর সোহাগের কাউন্টার ফাঁকা। কয়েকটি কাউন্টার পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। আর ২০ মে থেকে লঞ্চের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। লঞ্চঘাটে গিয়ে টিকিট প্রত্যাশীরা টিকিট পাচ্ছেন না। লঞ্চ টার্মিনালে টিকিটের আশায় এসেছেন আব্দুর রহিম। 
 

কমলাপুরে টিকিট সংগ্রহে মানুষের দীর্ঘ লাইন- ছবি: কাশেম হারুন 

তিনি বলেন,শুনেছি লঞ্চের টিকিট আগেভাগেই কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে। এরপরও বরিশাল যাওয়ার আশায় টিকিট কাটতে এসেছি। গোপনে খোঁজ-খবর রাখছি ভাগ্য যদি ভাল হয় বেশি টাকা দিয়ে হলেও কালোবাজিরদের কাছ থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে চান তিনি।

গাবতলী সোহাগ কাউন্টারে আলমগীর হোসেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, বাসের টিকিট বিক্রি শেষ। এখন শুধু কাউন্টারগুলো রুটিন মাফিক খোলা রাখা হচ্ছে। ঢাকা থেকে যেসব গাড়ি ছাড়া হচ্ছে সেগুলোর যাত্রী ঠিকমত উঠেছে কিনা তা মনিটরিং করছে কাউন্টারের লোকজন। তবে গত ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে সুশৃঙ্খল ভাবে টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
 
একই অবস্থা সদরঘাটের লঞ্চে। আগেভাগেই সিটে বসা যাত্রীদের টিকিট বিক্রি শেষ। এখন যারা টিকিট সংগ্রহ করছেন তারা স্ট্যাডিং (দাঁড়িয়ে) যেতে পারবেন। এ বিষয়ে পারাবা-১২’র সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক জাগরণকে বলেন, গত দুই দিন লঞ্চঘাটে দীর্ঘ লাইন ছিল। এখনো যাদেরকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে দেখছেন তারা সিট পাবেন না। লঞ্চে শুয়ে কিংবা দাঁড়িয়ে যেতে হবে। টিকিট প্রত্যাশীদের চাপের কারণে লঞ্চ মালিকরা মাঝে মাঝে কাউন্টার বন্ধ রাখছেন।
 
বাংলাদেশ রেলওয়ে ঘোষণা দেয়, বুধবার (২২ মে) সকাল ৯টায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ঈদে গ্রামে ফিরতে টিকিট প্রত্যাশীরা মঙ্গলবার রাত থেকেই ভিড় করতে শুরু করেন কমলাপুরসহ পাঁচটি স্টেশনে। ৫ জুন ঈদের সম্ভাব্য দিন ধরে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ায় কমলাপুর স্টেশনে সবচেয়ে বেশি ৩০ ও ৩১ তারিখের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এবার কমলাপুরের ২০টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কমলাপুল স্টেশনে লাইনে দাঁড়ান ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন বেলা ১০টা কিন্তু টিকিট হাতে পাইনি। আরো এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে টিকিট হাতে পেতে। তবে সিট ছাড়াই তাকে টিকিট নিতে হবে এমন নিশ্চয়তা জেনেও তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তার ভাষ্য মতে, বাস যাত্রায় রংপুরের সড়কের অবস্থা নাজুক, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হবে। এজন্য একটু কষ্ট হলেও রেল পথেই নিশ্চিন্তে গ্রামে পৌঁছাতে চান। আরেক টিকিট প্রত্যাশী লায়লা আক্তার তার ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে রাত ৩টায় স্টেশনে এসেছেন। তিনিও বাসা থেকে বিছানা নিয়ে এসেছেন। স্টেশনে রাত কাটিয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে তখনও তিনি প্রায় দেড়শ মানুষের পেছনে। লায়লা আক্তার বলেন, দিনাজপুরের টিকিট কিনতে এসেছি। টিকিট ধীরগতিতে দেয়া হচ্ছে। এজন্য এখন পর্যন্ত টিকিট পাইনি। কাউন্টারের লোকজন দ্রুতগতিতে টিকিট দিলে চাপ কমে যেত। টিকিট হাতে পেলেই কষ্ট লাঘব হবে।

টিকিটের ধীরগতি এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল হক দৈনিক জাগরণকে বলেন, আগে ৫ মিনিটে ২টি টিকিট দেয়া হতো এখন একই সময়ের মধ্যে ৪-৫টি টিকিট দেয়া হচ্ছে । এরপরও যদি ধীরগতির কথা বলা হয়ে সেটি কোনোভাবেই বিশ্বাস করা যাবে না। 

লাইনে দাঁড়ানো বেশিরভাগ টিকিট প্রত্যাশীরা এসির টিকিট পাচ্ছেন না এ ব্যাপারে আমিনুল হক বলেন, গাড়িতে সীমিত সংখ্যক এসির ব্যবস্থা থাকে। আর এসির টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় দ্রুতই টিকিট শেষ হয়ে যায়। এই কারণে সবাইকে এসির টিকিট দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। 

প্রসঙ্গত, এ বছর অঞ্চলভেদে কমলাপুর স্টেশনসহ পাঁচটি স্থান থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট দেয়া হচ্ছে। ঢাকার কমলাপুর থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী আন্তঃনগর, তেজগাঁও থেকে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী, বনানী থেকে নেত্রকোণাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেসের ও ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট দেয়া হচ্ছে।

টিএইচ/বিএস