• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৫, ২০১৯, ০৮:৩৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৫, ২০১৯, ০৮:৩৮ এএম

অপরাধী না হয়েও কারাগারে ৩৩৬ শিশুর বন্দি জীবন

অপরাধী না হয়েও কারাগারে ৩৩৬ শিশুর বন্দি জীবন


অপরাধী না হয়েও ৩৩৬ শিশু বন্দিজীবন যাপন করছে দেশের বিভিন্ন কারাগারে। নানা অপরাধে কারাগারে বন্দি থাকা মায়েদের সাথে তাদের রাখা হয়েছে। বন্দিজীবন যাপন করায় রুদ্ধ হচ্ছে তাদের মানসিক বিকাশ। এসব শিশু ও তাদের মায়েদের জন্য কারাগারের ভেতর আলাদাভাবে সোসাইটি সৃষ্টি করে প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।

কারা অধিদফতরের তথ্যে জানা যায়, গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের ৬৮টি কারাগারের ডে কেয়ারে ৩৩৬ শিশুর অবস্থান ছিল । বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে বন্দি থাকা মায়েদের সঙ্গেই এসব শিশু থাকছে। এদের প্রত্যেকের বয়স ছয় বছরের কম। নিয়ম অনুযায়ী, কারাগারের ভেতরে থাকা কোনও শিশুর বয়স ছয় বছর পেরিয়ে গেলে তাকে বাইরে থাকা স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর যাদের কোনও স্বজন থাকে না, তাদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়। তারা ওই শিশুকে সরকারি শিশু পরিবারে রেখে লালন পালন করে থাকেন।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, অনূর্ধ্ব ছয় বছর বয়সী যেসব শিশু মায়ের সঙ্গে কারাগারে অবস্থান করে, তাদের কারা কর্তৃপক্ষই লালন-পালন করে থাকে। প্রথমেই কারাগারে আগত শিশুর নাম রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। শিশুকে ডে-কেয়ারে পাঠানোর প্রয়োজন হলে সেখানে পাঠানো হয়। একজন সহকারী সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুর খাবার-দাবার ও পথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করে থাকেন। শিশুদের খাবার-দাবারের পাশাপাশি শিশুবান্ধব পরিবেশে কাপড়-চোপড়, খেলাধুলার সামগ্রী ও চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। একজন মহিলা ডেপুটি জেলার সার্বক্ষণিক এসব বিষয় তদারকি করে থাকেন।

কারা অধিদফতরের ডিআইজি প্রিজন্স (ঢাকা বিভাগ) টিপু সুলতান জানান, বৃহস্পতিবার (২৩ মে) পর্যন্ত সারাদেশের কারাগারগুলোতে নারী বন্দি রয়েছেন ৩ হাজার ৮৩ জন। তাদের সঙ্গে ৩৩৬ শিশু কারাগারগুলোতে অবস্থান করছে। ছয় বছর বয়স পার হওয়ার পর ওইসব শিশুকে নিকটবর্তী স্বজন কিংবা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়।

তিনি জানান, কারা অধিদফতরের অধীনে ঢাকা বিভাগের কারাগারগুলোতে ১০৪৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫৪৭ জন, রংপুর বিভাগে ২৬৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৯৬ জন, সিলেট বিভাগে ১০৮ জন, খুলনা বিভাগে ৩২০ জন এবং বরিশাল বিভাগের কারাগারগুলোতে ৯৫ জন নারী বন্দী রয়েছেন। এসব নারীর সঙ্গে রয়েছে ৩৩৬ শিশু। তাদের কারও বয়সই ছয় বছরের ঊর্ধ্বে নয়। আর ১৮ বছরের নিচের অপরাধী শিশুদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ছয় থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী কোনও শিশুকে কারাগারে রাখা হয় না।

এসব শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে টিপু সুলতান বলেন, যেসব মা তাদের সন্তানদের রাখতে চান, তাদেরকেই রাখা হয়। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তবে শিশুরা যাতে সুন্দর পরিবেশে থাকতে ও খেলাধুলা করতে পারে । সেজন্য আমরা সব সময় মনিটরিং করছি। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মনোচিকিৎসা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ জানান, এটা স্বাভাবিক যে, কারাগার তো আসলে কোনও সুন্দর জায়গা নয়। জীবনের শুরুতেই ক্রিমিনাল পরিবেশে বড় হলে তার মধ্যে একটা প্রভাব পড়তে পারে, যা পরবর্তী জীবনেও থেকে যেতে পারে। তাদের জন্য আলাদা স্কুলিং ও সোসাইটি গড়ে তোলা যায় কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসাও দিতে হবে।

এইচএম/আরআই