• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ২৫, ২০১৯, ১১:৫৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৫, ২০১৯, ১২:১৬ পিএম

টিকিটের জন্য কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়

টিকিটের জন্য কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়
ঈদের টিকিটের জন্য কমলাপুর রেল স্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় -ছবি : কাশেম হারুন

ঈদ যাত্রায় ট্রেনের টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড়ে পাল্টে গেছে কমলাপুর রেলস্টেশনের দৃশ্য। গত দু’দিনের তুলনায় লাইনে সারি কয়েক ধাপ দীর্ঘ হয়েছে। অনেকেই বাস কাউন্টারে টিকিট না পাওয়ায় বাড়ি যাওয়ার শেষ ভরসা হিসেবে বেছে নিয়েছে ট্রেন যাত্রা। আর এ কারণেই রেলস্টেশনগুলোতে টিকিটি প্রত্যাশীদের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় যাত্রীচাপ বেড়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

মরিয়ম নামের এক গৃহিনী তিনি দৈনিক জাগরণকে জানান, সিলেট যাবো। বাসের টিকিট পাইনি। তাই রেলওয়ে স্টেশনে এসেছি। টিকিট পেয়ে খুব ভাল লাগছে। টিকিট না পেলে গ্রামে যেতে অনেক কষ্ট হতো।

৫ জুন ঈদের সম্ভাব্য দিন ধরে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ায় কমলাপুর স্টেশনে সবচেয়ে বেশি ৩০ ও ৩১ তারিখের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এবার কমলাপুরের ২০টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, অন্যদিনের তুলনায় শনিবার (২৫ মে) টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন দীর্ঘ। অগ্রিম টিকিট ছাড়াও নিয়মিত যাত্রীদের একই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিতে হচ্ছে। এতে কিছুটা বিরক্তবোধ করছেন প্রতিদিনের যাত্রীরা। ঈদের অগ্রিম টিকিট নিতে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় স্টেশনে আসেন ফরিদা ইয়ামিন। স্বামী কাজে ব্যস্ত থাকায় ৩ সন্তানসহ ৫টি টিকিট নিতে এসেছেন। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত, এরপরেও টিকিট নামে সোনার হরিণ নিতে অপেক্ষা করছেন। গরমে সব যাত্রীদের জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে লাইন পৌঁচ্ছেছে খোলা আকাশের নিচ পর্যন্ত। তবে লাইনের প্রথম দিকে টিকিট প্রত্যাশীরা টিকিট পেলেও, শেষে যারা আছেন তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল হক দৈনিক জাগরণকে বলেন, গত দিনের তুলনায় আজ যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তবুও লাইনে যারা দাঁড়িয়েছেন প্রত্যেকে টিকিট দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। হয়তো অনেককেই ট্রেনের বগিতে আসন দেয়া সম্ভব হবে না।

লালমনিহাট এক্সেপ্রেসের টিকিট পাওয়ার পর আজিজুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার থেকেই টিকিট কাটার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু সরকারি চাকরি করায় স্টেশনে কখনও আসা হয়নি। এমনকি যাদেরকে দিয়ে গত দুদিন টিকিট কাটার চেষ্টা চালিয়েছিলাম তারা ব্যর্থ হয়েছেন। এজন্য টিকিট পেতে আজ নিজেই কমলাপুর স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছি। পরিবার নিয়ে বগুড়ায় যাবো। সেই ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অবশেষে টিকিট হাতে পেলাম। অনেক ভাল লাগছে। তবে লাইনে না দাঁড়িয়েও ভিআইপি কোটায় অনেকেই টিকিট পাচ্ছেন বলে কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন। 

নলফামারীর জলঢাকার আরিফুর রহমান নামে একজন ছাত্র বলেন, তিনি ঢাকার একটি ভার্সিটিতে পড়াশুনা করছেন। গ্রামের বাড়িতে বাবা মার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন। গত বুধবার নীলসাগর এক্সেপ্রেসের একটি এসির টিকিট ব্যবস্থা করেন। গত দুদিন ব্যস্ত থাকায় টিকিট কাউন্টারে আসতে পারেননি। তাই আজ এসে নিয়ে যাচ্ছি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে  অফিস সহকারি পদে কাজ করেন আকবর হোসেন তিনিও টিকিট কাটতে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমার বাড়ি চট্টগ্রামে। ছোট পোস্টে চাকরি করায় ঈদ ছাড়া তেমন একটা বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয় না। ঈদের অগ্রিম টিকিটের জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকেই ইউনিক, শ্যামলী ও হানিফ বাসের টিকিট সংগ্রহে কয়েক বার যাত্রাবাড়ী, ফকিরাপুল কাউন্টারে গিয়েছি। কিন্তু টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে রেলস্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সোনার হরিণ ঈদের রেল টিকিট ভাগ্যক্রমে মিলেছে। এতো ভোগান্তির পর এই ভেবে ভালো লাগছে যে, ছেলে মেয়েসহ গ্রামে ঈদ করতে পারবো।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ঘোষণা দেয়, বুধবার (২২  মে) সকাল ৯টায় রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ঈদে গ্রামে ফিরতে টিকিট প্রত্যাশীরা মঙ্গলবার রাত থেকেই কমলাপুরসহ ৫টি স্টেশনে ভিড় করতে শুরু করেন। ঢাকার কমলাপুর থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী আন্তঃনগর, তেজগাঁও থেকে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী, বনানী থেকে নেত্রকোণাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেসের ও ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের ঈদের অগ্রিম টিকিট দেয়া হচ্ছে।


টিএইচ/একেএস