• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০১৯, ০৪:২৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৬, ২০১৯, ০৬:২৬ পিএম

ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব ছুটছে রোহিঙ্গারা

ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব ছুটছে রোহিঙ্গারা


মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাড়ি জমাচ্ছেন। কৌশলে বিভিন্ন এলাকার ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে ম্যানেজ করে এবং প্রভাবশালীদের সহায়তায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গারা। তারপর সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে ছুটছেন তারা।  

বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদি আরব পাড়ি জমানোর সময় সম্প্রতি শতাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এই আটকের ঘটনা ঘটে। শনিবার (২৫ মে) রাতেও শাহজালাল বিমানবন্দরে ৩ নারীসহ ৭ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।

জানা গেছে, বিদেশে গিয়ে রোহিঙ্গারা চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর এর নীতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে জনশক্তি রফতানি ও বিদেশে কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস সৌদি আরবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ও জনশক্তি রফতানি আশাতীত কমে গেছে। এতে প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রেরণও কমে যাচ্ছে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন ও শিক্ষার পর্যাপ্ত মসজিদ ও মাদ্রাসা নেই দাবি করে সৌদি আরব সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের নেতাদের কাছে মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থাপনের নামে মোটা অংকের চাঁদা বাণিজ্য করছে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব যাওয়া রোহিঙ্গারা।

অবশ্য এসব অভিযোগের ব্যাপারে রোহিঙ্গা বস্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক জানান, কিছু রোহিঙ্গা বিদেশে থাকা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় সৌদি আবর যাচ্ছেন এ কথা ঠিক। তবে তা সংখ্যায় সামান্য।

জানা গেছে, এ সব রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কৌশলের আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ভুয়া নাম, ঠিকানা দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট কর্মকর্তা ও থানাকে ম্যানেজ করে পাসপোর্ট বানিয়ে রোহিঙ্গাদের পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ঠিকানা ব্যবহার না করার পেছনে জানা গেছে, এজেন্সি ও দালালরা এ দুই জেলায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ ছাড়পত্র প্রাপ্তি ও পাসপোর্ট অফিসগুলো রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও তৎপর বিধায় ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় এত সব ঝামেলায় পড়তে হয় না। এছাড়াও কোন এজেন্সি যদি অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ১৫ জন রোহিঙ্গাও বিদেশে পাঠাতে পারে এবং তারা যদি ফেরত নাও আসে তাতে ক্ষতি নেই। কেননা বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ও ফিরতি এয়ার টিকেট ওই সব দালাল ও এজেন্সির লোকেরা সংগ্রহ করে ফেলে। এ সব পাসপোর্টে ছবি পাল্টিয়ে আগে থেকে সৌদি আরবে অবস্থানকারী (অবৈধভাবে) বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গাদের নিকট মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এয়ার টিকেটসহ বিক্রি করে থাকে। 

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সৌদি আরব গমনের ব্যাপারে শরণার্থী ফজল করিম, আজিজুল হক, আবদুর রহমানসহ অনেকে বলেন, এরইমধ্যে বিভিন্ন দাতা দেশের সহায়তায় প্রায় ১৩০০ জনের মত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে বা আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে পুর্নবাসন করা হয়েছে। এ সব পুনর্বাসিত রোহিঙ্গাদের প্রেরিত অর্থে তাদের নিকট আত্মীয়রা স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে হজ ও ওমরাহ হজের নামে সৌদি আরবে পাচার হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া রোহিঙ্গাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার শহরসহ বন বিভাগের রক্ষিত বনভূমি ও উপকূলের চরাঞ্চলের খাস জমির দখল কিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। অন্যদিকে বিদেশে অবস্থান করলেও এখানে শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর প্রদত্ত যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা তাদের পরিবারের অন্যান্যরা ভোগ করছে বলে একাধিক রোহিঙ্গা জানান।

ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের উগ্রপন্থী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন বা আরএসওসহ বেশ কয়েকটি উগ্রপন্থী রোহিঙ্গা সংগঠনের নেতারা এখনও বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাদের অশুভ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ সব সংগঠন দালালদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ঢাকার ফকিরাপুল, পুরানা পল্টন, চট্টগ্রাম, নয়াপল্টনসহ সিলেটের জিন্দাবাজারস্থ কিছু রিক্রুটিং অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে ওমরাহ হজের নামে সৌদি আরব পাচার করে দিচ্ছে ।

এ ব্যাপারে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ইনচার্জ সামসুদ্দোজা বলেন, তালিকাভুক্ত শরণার্থীদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে সৌদি আরব গমন সম্পর্কে আমার জানা নেই।

এইচএম/এসএমএম/আরআই