• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৩, ২০১৯, ০৮:৩৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৩, ২০১৯, ০৮:৩৩ এএম

নিমতলী ট্র্যাজেডির ৯ বছর 

আতঙ্ক কাটেনি, সরেনি কেমিক্যালের কারখানাও

আতঙ্ক কাটেনি, সরেনি কেমিক্যালের কারখানাও

 


আজ ৩ জুন, সোমবার। ভয়াবহ নিমতলী ট্র্যাজেডির ৯ বছর। ২০১০ সালের আজকের এই দিনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মানুষ প্রাণ হারান। দিবসটিকে কেন্দ্র করে নিহতদের জন্য দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করেছে স্থানীয়রা। 

ঠিক ৯ বছর আগে এদিন আনুমানিক রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়। অল্পসময়ে মধ্যেই সেই আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের বেশ কয়েকটি ভবনেও। এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিমতলীর ১২৪ জন মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন অর্ধশতাধিক। পুড়ে যায় ২৩টি বসতবাড়ি, দোকানপাট ও কারখানা।


গুদামে থাকা কেমিক্যাল পণ্যের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চোখের নিমিষেই। যে ভবনগুলোতে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল সেগুলোর একটিতে চলছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। যেখানে আনন্দের বাদ্য-বাজনা চলছিল, মুর্হূতেই সেখানকার পরিবেশ হয়ে উঠে মৃত্যপুরীতে। কান্নার রোল আর বাঁচার আকুতিতে ভারি হয়ে উঠেছিল সেদিনকার নিমতলীর আকাশ-বাতাস। প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু ততক্ষণে ঝড়ে যায় ১২৪টি প্রাণ। 

তারপর থেকেই এ অপমৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে নিমতলীবাসীর একটি দাবি ছিল আবাসিক ভবন থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেয়া। কিন্তু গত ৯ বছরেও সরেনি কেমিক্যালের গোডাউন বা কারখানা।  

পুরান ঢাকার অলি-গলিতে রয়েছে কেমিক্যাল গোডাউন। একটি বা দুইটি নয়, প্রায় দুই শতাধিক। বংশাল, মালিটোলা, নিমতলী, নবাব কাটরা, আগামাসি লেন, উর্দুরোড, জয়নাগ রোড, চুড়িহাট্টা, পোস্তা, ইমামগঞ্জ, লালবাগ, হোসেনি দালান রোড, নাজিমউদ্দিন রোডের বাগিচাসহ প্রায় পুরান ঢাকায় রয়েছে দুই শতাধিক কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থের গোডাউন। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের এসিড জাতীয় তরল পদার্থের গোডাউন ও কারখানা। যেমন- কাঠের ব্যবহৃত বার্নিশ, ইথাইল, মিথাইল, বডি স্প্রে তৈরির কারখানা ও গোডাউন। আর এসবের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন সেখানকার লাখো মানুষ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ ৯ বছরেও পুরান ঢাকা থেকে সরেনি ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল কারখানা। এমনকি অনেক মালিকই বেশি ভাড়ার লোভে কেমিক্যালের গুদাম হিসেবেই বাসা ভাড়া দিয়েছেন। ফলে নিমতলীর ওই অগ্নিকাণ্ডে পরও কেমিক্যালের কারখানা আর গুদামের সংখ্যা পুরান ঢাকায় তো কমেনি বরং বেড়েই চলেছে। 

অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কিভাবে, তা এখনও সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও এটা স্পষ্ট অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতার কারণ সেখানকার কেমিক্যালের গুদামই।
মর্মান্তিক ওই অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে বিভিন্ন সময় কেমিক্যাল কারখানা সরানোর দাবিতে সামাজিক আন্দোলন হয়েছে। সেখানকার কেমিক্যালের গুদাম আবারও নতুন কোনও আতঙ্কের কারণ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। 

ঝুঁকিপূর্ণ গুদামগুলো সরাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা সময় নেয়া হয় নানা উদ্যোগ। কেমিক্যাল পণ্যের ৮০০ গুদামের তালিকা তৈরি করে সেসব কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগও নেয় সরকার। কিন্তু সেসব উদ্যোগ আটকে আছে শুধু কাগজ-পত্রে।

এই প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে লোকজন এগিয়ে না আসলে বা জনগণ সচেতন না হলে এখান থেকে সম্পূর্ণভাবে কেমিক্যাল গোডাউন বা কারখানা অপসারণ সম্ভব নয়। 

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ডিএসসিসি, রাজউক, পরিবেশ মন্ত্রনালয়, বিস্ফোরক অধিদফতরসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বয় করে বছরের বিভিন্ন সময়ে কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালানো হয়েছে।

পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

স্মৃতিস্তম্ভ

নিমতলী ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। সোমবার (৩ জুন) নিমতলী ট্র্যাজেডি দিবসে নিহতদের স্মরণ করা হবে নান আয়োজনের মধ্য দিয়ে। আয়োজন করা হয়েছে ১২৩ জনের স্মরণে এ শোক সভা ও মিলাদ মাহফিল। 
দিবসটি স্মরণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের শোকাবহ ঘটনা আর না ঘটে ও কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদের দাবিতে নিমতলী ছাতা মসজিদ সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করবে এলাকাবাসী। 

এইচএম/এসএমএম