• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০১৯, ০৩:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৩, ২০১৯, ০৩:৪৯ পিএম

২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ শুরু

২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ শুরু
জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল- টিভি থেকে নেয়া ছবি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ শুরু করেছেন। এর আগে বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথা অনুযায়ী বাজেটের ব্রিফকেস হাতে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অর্থমন্ত্রীকে ২০১৯- ২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের পেশের অনুমতি দেন। তার আগে ২০১৮-২০১৯ সালের সম্পূরক বাজেট পেশের অনুমতি দেন।

অর্থমন্ত্রী শুরুতেই ২০১৮-১৯ সালের সম্পূরক বাজেট উপস্থাপন করেন। পরে তিনি জাতীয় বাজেট পেশ শুরু করেন। এর আগে ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয় স্পিকারের অনুমতিক্রমে।

তবে অর্থমন্ত্রী তার মূল বক্তব্য শুরু আগে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে একটি বক্তব্য পেশ করেন। যেখানে জাতীয় বাজেটে তরুণ প্রজন্মের কি কি প্রতিফলন থাকছে তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথা অনুযায়ী বাজেটের ব্রিফকেস হাতে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল- টিভি খেকে নেয়া ছবি

প্রস্তাবিত বাজেট মন্ত্রিসভার অনুমোদন 
এর আগে সকালে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার পর জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বিশেষ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে সামনে উপস্থাপনের সমর্থন পেয়ে এখন বাজেট পেশ করছেন। 

 

এটি দেশের ৪৮তম ও বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি প্রথম বাজেট। 

গত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে অনেক বাজেট প্রণয়নে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’- শিরোনামের এবারকার বাজেট শুধু এক বছরের জন্য নয়, তৈরি করা হয়েছে ২০৪১ সালকে টার্গেট করে। 

টার্গেটগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রবৃদ্ধিতে অসমতা, বিনিয়োগ সঙ্কট, সুশাসনের ঘাটতি, ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, অর্থনীতির আকারে রাজস্ব আদায় কম, বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি।

বাজেট পেশ শুরু আগে ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়

জাতীয় সংসদে যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হচ্ছে, এর সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এ ব্যয় মেটাতে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ আয় হবে তিন লাখ ৮১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা।

এবারকার বাজেট প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে নতুন আঙ্গিকে তৈরি করা হয়েছে। এবারের বাজেটের আকার বাড়লেও অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা হবে সংক্ষিপ্ত। তবে এ বক্তৃতার একটি বর্ধিত সংস্করণ বাজেট বই আকারে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে, যা সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য হবে সহজপাঠ্য।

বাজেটের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী হলেও তা অর্জন করতে চেষ্টা হবে সাধ্যের মধ্যে। রাজস্ব আদায়ে করের হার না বাড়িয়ে বরং করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়া সহজ করতে এনবিআরের জন্য নতুন করে দিক-নির্দেশনা থাকবে।

নতুন বাজেটে শিক্ষা ও আর্থিক খাত সংস্কার, শেয়ারবাজারে সুশাসন ও প্রণোদনা প্রদান বিষয়ে দিকনির্দেশনা আসছে।

বাজেটে শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা হচ্ছে বহুল আলোচিত নতুন ভ্যাট আইন। যেটি প্রণয়ন করা হয়েছিল ২০১২ সালে। এতে ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে থাকলে কিছুটা ব্যয়ের চাপ বাড়তে পারে মধ্যবিত্ত পরিবারের। কারণ আইনটি কার্যকরের পর কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত এর খেসারত ভোক্তাকে গুনতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারকে। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও যুবকদের বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এটি নতুন বাজেটে প্রতিফলন ঘটানো হবে।

তরুণদের জন্য রাখা হয়েছে নানা ধরনের সুযোগ। বেকারদের কর্মসংস্থানের বিকল্প হিসেবে ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে ঋণ তহবিলের। এ বাজেটের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী ভোটারদের প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করবেন।

কৃষকদের জন্য ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে চালু করা হবে শস্য বিমা। 

বর্তমানে বিদেশে ৭০-৮০ লাখ প্রবাসী অবস্থান করছেন। আর প্রতি বছর নতুন করে দেশের বাইরে চাকরিতে যাচ্ছেন পাঁচ-সাত লাখ মানুষ। তাদের বিমা সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে।

নতুন বাজেটে যেসব খাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, সঞ্চয়পত্র ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। তবে সামগ্রিকভাবে করমুক্ত রাখা হবে জনগণকে। এতে আরও ঘোষণা থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির।

প্রামাণ্যচিত্রের একটি অংশ

নতুন বাজেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালনের প্রতিফলন থাকছে। আর বেশি মনোযোগ থাকবে নির্বাচনি ইশতেহার অনুসারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। দেশের প্রতিটা গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার ঘোষণা থাকছে।

এতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে গ্রামকে। যেখানে ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া হবে। আমার গ্রাম আমার শহর- এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব থাকবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের। তবে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে এ কাজে সম্পৃক্ত করা হবে।

জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কম থাকবে। অন্যান্য পণ্যের দাম কিছুটা নিম্নমুখী থাকবে। ফলে দেশের ভেতর পণ্যের দাম বাড়বে না- এমন আশা থেকেই নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

নতুন বাজেটে ভ্যাট খাতে বড় সংস্কার হবে। ১ জুলাই থেকে বহুল আলোচিত ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি কার্যকর হলে আগামী বছরে রাজস্ব আয়ে গতি আসবে।

এসএমএম