• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২১, ২০১৯, ০৭:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২১, ২০১৯, ০৭:৪২ পিএম

রাজধানীতে বস্তির সঠিক পরিসংখ্যান নেই

রাজধানীতে বস্তির সঠিক পরিসংখ্যান নেই

রাজধানীতে বস্তির সঠিক পরিসংখ্যান নেই দুই সিটির বস্তি উন্নয়ন বিভাগের কাছে। বস্তিবাসী এসব মানুষের তথ্যও জানে না বস্তি বিভাগ। নগরীর কোনো এলাকায় বস্তির স্থানে সরকারি ভবন, হাইরাইজ বিল্ডিং, হাসপাতালসহ নানা ধরনের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এসবের প্রকৃত তথ্যও জানা নেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশনসহ বস্তি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে। অথচ প্রতিবছর বস্তি বিভাগের নামে সরকারি অর্থ বরাদ্দ হয়। তা বস্তির নানা কাজে খরচও করা হচ্ছে। অথচ পরিসংখ্যান রাখার প্রয়োজন মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

গত রোববার (১৬ জুন) জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় এমপি হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজধানীতে মোট বস্তির সংখ্যা ৩,৩৯৪টি। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের শুমারি অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করর্পোরেশনে মোট বস্তির সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৯টি। বস্তিতে খানা ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪০টি, জনসংখ্যা ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৯ জন। আর  ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বস্তি ১ হাজার ৭৫৫টি। বস্তিতে খানার সংখ্যা ৪০ হাজার ৫৯১টি। মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৬ জন।

রাজধানীর বস্তি সংক্রান্ত বিষয়ে ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের আলোকে যে তথ্য সংসদে তুলে ধরা হয়েছে তাতে বস্তির সঠিক হিসাবের সঙ্গে ব্যাপক গড়মিল রয়েছে বলে জানান নগর পরিকল্পনাবিদ প্ল্যানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ। তিনি বলেন, সরকারি শুমারিতে সঠিক হিসাব নেই, বিষয়টি খামখেয়ালীপনা। প্রকৃত হিসাব খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ, আগের হিসাবের সঙ্গে এর গড়মিল হতে পারে। নগরীতে এত কম জনবল থাকার কথা নয়। শুধুমাত্র কড়াইল বস্তিতে বর্তমানে ৩ লাখ মানুষ বাস করে। ঢাকা উত্তর সিটি মেয়রের হিসাব অনুযায়ী কড়াইল বস্তিতে বর্তমানে আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করছে। বস্তির বিষয়ে সরকারের নীতিমালা সংযোজন করা প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, দুই বছর আগে বেসরকারি একটি সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীতে যেসব বস্তি রয়েছে সেগুলোর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অনেক বস্তিতে ভবন নির্মিত হয়েছে। আর যেসব বস্তি আছে, সেগুলো এখন বস্তি বলে মনে হয় না। অনেক বস্তিতে দোতলা ভবন করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। বস্তির মানুষের জীবনমানের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। তিনি বলেন, নিম্ম-মধ্যবিত্ত মানুষের ন্যায় বসবাস করছে বস্তিবাসীরা। এটা আমাদের দেশের জন্য গৌরব।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, একসময় নগরীর যেসব স্থানে বস্তি ছিল সেসব স্থানে সরকারি হাইরাইজ বিল্ডিংসহ বিভিন্ন অফিস আদালতের জন্য ভবন নির্মিত হয়েছে। বিশেষ করে আগারগাঁওয়ে বিএনপি বস্তিতে সরকারি হাসপাতাল, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, তথ্য কমিশনের কার্যালয়, নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়, মোহাম্মদপুর এফ ব্লকে সরকারি অর্থায়নে গড়ে তোলা হয়েছে ১৪টি ১৬ তলা হাইরাইজ ভবন।

রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, সরকার নতুন নতুন অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব  প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশে বস্তি থাকবে না। তিনি বলেন, বস্তিতে সরকারিভাবে কোনো অনুদান আসে না। দুএকটি এনজিও শিশুদের লেখাপড়ার খোঁজ-খবর নেয় মাত্র। আর ঢাকা ওয়াসা কড়াইল বস্তিতে মিটারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করেছে। এই হচ্ছে বস্তি হাল-হকিকত।

ঢাকার দুই সিটির বস্তি বিভাগে জনবল ও কাজ একেবারেই অপ্রতুল। বিভক্ত দুই সিটির অর্গ্রানোগ্রামে বস্তি বিভাগে জনবল সীমিত করা হয়েছে। এ কারণে রাজধানীর বস্তির সঠিক পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই বলে দাবি করা হয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৪ সালের জরিপের তথ্য দিয়েই চলছে ঢাকা দুই সিটির বস্তি বিভাগ। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা এ কে এম লুত্ফর রহমান সিদ্দীকি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির বস্তি বিভাগে মাত্র ২ জন কর্মকর্তা এবং ২ জন কর্মচারী। এত স্বল্প লোকবল দিয়ে বস্তির খবর যেটুকু রাখা সম্ভব তা-ই রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন দক্ষিণ সিটিতে বস্তির কোনো কাজ নেই। তবে কয়েকটি এনজিও বস্তি নিয়ে নানা কাজ করছে। আর ঢাকা সিটি করর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগ বস্তির দেখভাল করছে।

ঢাকা উত্তর সিটির বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, নগরীর বস্তির সঠিক পরিসংখ্যান তাদের হাতে নেই। তিনি বলেন, বস্তি বিভাগে জনবল সংকট দীর্ঘদিনের। এজন্য বস্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে না। আর এখন সরকার বস্তি থেকে মানুষজনকে সরিয়ে স্বল্পমূলে ফ্ল্যাট তৈরির প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে অনেকেই বস্তি ছেড়ে ভালো ভালো বাসাবাড়িতে বসবাস করছে।
 
টিএইচ/ এফসি