• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২২, ২০১৯, ০৩:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২২, ২০১৯, ০৩:৩৮ পিএম

প্রজ্ঞাপনেই আটকে গেল সড়ক পরিবহন আইন

প্রজ্ঞাপনেই আটকে গেল সড়ক পরিবহন আইন


‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে পাস হলেও ৯ মাসেও হয়নি প্রজ্ঞাপন। আর এই প্রজ্ঞাপনেই আটকে গেছে জন-গুরুত্বপূর্ণ এ আইনটির বাস্তবায়ন।

স্বাভাবিক কারণেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার কিছুটা হলেও বাধার মুখে পড়েছে। তবে এ বিষয়ে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আইনের কয়েকটি ধারা-উপধারা নিয়ে পরিবহন মলিক-শ্রমিক নেতাদের আপত্তি রয়েছে। শিগগিরই তাদের সঙ্গে বসে এর সুরাহা করা হবে।’

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবিতে গত বছর শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া গত বছরের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করে।

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে ১৯ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস হয়। তবে এ আইনের ধারা ‘১’ এর ‘২’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় গত ৯ মাসেও এ আইনটি কার্যকর করা যায়নি। ‘২’ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে- ‘সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করিবে, সেই তারিখে এই আইন কার্যকর হইবে।’ অর্থাৎ বিষয়টি পরিষ্কার, এ আইনের প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় তারিখও নির্ধারিত হয় নাই। সুতরাং প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর হচ্ছে না সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেখানে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চাচ্ছেন, সেখানে তো আর এর অন্তরায় দেখছি না। মন্ত্রিসভার পর জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাশ হওয়ার পর এ আইনের বাস্তবায়নে বাদ-সাধে তার বা তাদের এত ক্ষমতা। আমি মনে করি এ আইন বাস্তবায়ন জরুরি। শাস্তি কমানো নিয়ে কারো সঙ্গে সরকারের বৈঠকে বসা সরকারের সমীচিন হবে না বলেও মন্তব্য করেন শামসুল হক।

আইনে উল্লেখযোগ্য যা আছে :

চালকের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস। লাইসেন্স না থাকলে চালকের ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। দুই যানবাহনের পাল্লাপাল্লিতে দুর্ঘটনা ঘটলে চালকের তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা ২৫ লাখ টাকা। আইন অমান্য করলে চালকের নির্ধারিত নম্বরও কাটা যাবে। এক পর্যায়ে সব নম্বর কাটা গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে তার লাইসেন্স। আর গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে হত্যা করলে ৩০২ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে এ আইনে।

জাতীয় সংসদে অনুমোদন :

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও দুর্ঘটনা কমাতে বর্তমান সড়ক পরিবহন আইনটির খসড়া ২০১৮’র ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করে। আর মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর দ্বাদশ সংসদের শেষ অধিবেশনে ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ নামে এ আইনটি পাস হয়। এ আইনের অনেক বিধানই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও দুর্ঘটনা কমাতে সহায়ক। কিন্তু সংসদে পাস হওয়ার ৯ মাসেও এ আইনের প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি।

অথচ একই দিনে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার ডিগ্রি সমমান প্রদান আইন ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নিয়ে সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক সমাজ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ জানালেও সরকার দ্রুত আইনটি কার্যকর করেছে।

শ্রমিকদের দাবি :

বর্তমান সড়ক পরিবহন আইনটির খসড়া ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এর এর বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। ৮ দফা দাবিতে গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট পালন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে- সড়ক পরিবহন আইনের সব ধারা জামিনযোগ্য করা, সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিকের অর্থদণ্ড পাঁচ লাখ টাকার বিধান বাতিল করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করা।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’র কয়েকটি ধারা-উপধারা নিয়ে পরিবহন মলিক-শ্রমিক নেতাদের আপত্তি রয়েছে। তারা জোটবদ্ধ। তাদের দাবি উপেক্ষা করে কিছু করা সম্ভব নয়। তাই শিগগিরই তাদের সঙ্গে বসে এর সুরাহা করা হবে।’

এমএএম/আরআই