• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০১৯, ০৪:২৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১০, ২০১৯, ০৪:২৯ পিএম

এনামুল বাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক 

এনামুল বাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক 
দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির

নিজ দপ্তরেই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন সাময়িক বরখাস্ত থাকা দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। খন্দকার এনামুল বাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন দুদক পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ফানাফিল্লাহর নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান দল। পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। তবে দুদক কর্মকর্তা ফানাফিল্লাহ বাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদের দিনক্ষণ জানাননি।  

দুর্নীতির মামলা থেকে রেহাই পেতে দুদকের বরখাস্ত পরিচালক এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেন ডিআইজি মিজান। যা ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে এসেছে। অডিও রেকর্ডের সূত্র ধরে দুদক এ ঘটনার অনুসন্ধানে নামে। ইতোমধ্যেই দুদক এই অডিও রেকর্ড যাচাই করে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।

দুদকের একাধিক সূত্র বলেছে, দুদকের উপ-পরিচলক এনামুল বাসিরের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের আইটি শেকসনের চার কর্মকর্তার কাছে দুদকের জনৈক কর্মকর্তার ঘুষ দাবি এবং ঘুষ না পেয়ে শিক্ষা অধিপ্ততরের আইটি শাখার সংশ্লিষ্ট ৪ কর্মকতার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিলের অভিযোগ রযেছে। সম্প্রতি দুদকের একাধিক কর্মকর্তারও বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগের পরই  দুদক চেয়ারম্যান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন।    

এবিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কোনোরূপ অনৈতিক আচরণ করলে কাউকেই ক্ষমা করা হবে না। এনামুল বাছিরসহ কিছু কর্মকর্তার অনিয়মের প্রতি ইঙ্গিত করে দুদক চেয়ারম্যান বৈঠকের উদ্দেশ্যে বলেন, বিভিন্ন কৌশলে আপনাদের সতর্ক করা হচ্ছে, তারপরও অনেক ক্ষেত্রেই অনেকের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। শেষবারের মতো তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। দায়িত্ব পালনে সামান্যতম ত্রুটি পেলেও কাউকে ক্ষমা করা হবে না।

এদিকে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দুদকের পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানসহ চারজনের সাড়ে ৪ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে সোয়া তিন কোটি টাকার সম্পদই অবৈধ।

মামলায় ডিআইজি মিজান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না (৫০), ছোটভাই মাহবুবুর রহমান (৫০) ও ভাগ্নে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মাহমুদুল হাসানকে (২৯) আসামি করা হয়েছে। দুদকের সংশোধিত বিধিতে নিজস্ব দপ্তরে করা এটিই প্রথম মামলা। দুদক আইন ২০০৪ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করেছে দুদক।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মিজানের নামে ও বেনামে অর্জিত ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪৩ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। যার মধ্যে ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার ৪২১ টাকার হিসাব গোপন করেছেন। এর আগে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশের কারণে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে তিনি ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ২৬০ টাকার স্থাবর ও ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৫২ টাকার অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেন।

দুদকের তদন্তে পাওয়া যায়, মিজান তার ভাগনে মাহমুদুল হাসানের নামে ২৪ লাখ টাকা দিয়ে গুলশানের পুলিশ প্লাজায় কনকর্ডে ২২১ বর্গফুট আয়তনের দোকান বরাদ্দ নেন। মিজানুর রহমান নিজে নমিনি হয়ে তার ভাগনে মাহমুদুল হাসানের নামে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ওয়ান ব্যাংক কাওরান বাজার শাখায় ৩০ লাখ টাকা এফডিআর করেন।

দুদকে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর পর এফডিআরটি সুদে আসলে ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭ টাকা তুলে নেন। যা তিনি আয়কর বিবরণীতে দেখাননি। ডিআইজি মিজান তার ভাই মাহবুবুর রহমানের নামে ১ বেইলি রোডে ৬৫ লাখ টাকায় ২৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কেনেন। ফ্ল্যাটে মিজান নিজেই থাকেন।

মিজানুর রহমান তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নার নামে কাকরাইলের ৬৩/১, পাওনিয়ার রোডে সামাদ ট্রেড সেন্টারে ১৭৭৬ বর্গফুটের বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট কেনেন। যা নগদে এক কোটি ৭৭ লাখ টাকা নির্মাণ কোম্পানিকে পরিশোধ করেন। ২০১৬ সালের ১৬ জুন ফ্ল্যাটটি তার ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে দলিল রেজিস্ট্রি করেন। রেকর্ডপত্রে মিজানুর অর্থের জোগানদাতা হলেও সম্পদ বিবরণীতে ঐ টাকার হিসাব গোপন করছেন। মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আসামিদের এসব স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা আছে।

এইচ এম/টিএফ
 

আরও পড়ুন