• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১১, ২০১৯, ০৬:৩২ পিএম

রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী-শিশুদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জাতিসংঘ

রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী-শিশুদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জাতিসংঘ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী আরাকান মুসলমদের উপর শুরু হওয়া সামরিক আগ্রাসন ও গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে লাখো লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে দেশের কক্সবাজার ও উখিয়া উপকূলীয় অঞ্চলে গড়ে তোলা হয় বিশাল শরণার্থী শিবির। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শিবিরগুলোতে শরণার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সৃষ্টি হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী সংকট! এই শরণার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিল হাজার হাজার অন্তঃস্বত্তা নারীসহ অসংখ্য নারী ও শিশু।
 
তবে বাংলাদেশ সরকার এবং এদেশের মানুষ সম্মিলিতভাবে এই উদ্ভুত অবস্থা সামাল দেয় আর ধীরে ধীরে তুলনামূলক স্থিতিশীল করে তোলে সার্বিক পরিস্থিতি। পাশাপাশি বৃহৎ এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠাতে কাজ করছে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের পাশে থেকে এই সংকটাপন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে জাতিসংঘ ও তার একাধিক সংস্থা। এখন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থানকারী এ সকল রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আনুসাঙ্গিক নানা বিষয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো।

বিশেষ করে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সমূহের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে  ইউএনএফপিএ (জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল) এবং ইউনিসেফ (ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন্টারন্যাশনাল চিল্ড্রেন'স ইমার্জেন্সি ফান্ড)। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) অনতিবিলম্বে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সাহায্য করার জন্য তাদের কর্মকান্ডের পরিধি বাড়িয়ে দেয়। যার আওতাধীন কার্যক্রম সমূহের মধ্যে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্র নিম্নরূপ-

|| মর্যাদা সুরক্ষা দিয়ে শুরু  
রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতেই ইউএনএফপিএ তার বিশেষায়িত ও নিজস্ব উদ্যোগ “ডিগনিটি কিট” সংগ্রহ এবং বিতরণ শুরু করে। এই ডিগনিটি কিটের মধ্যে ছিল নারীদের ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী যেমন পরিধেয় কাপড়, পরিষ্কার অন্তর্বাস, সাবান এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন ইত্যাদি। রোহিঙ্গা নারীরা যখন তাদের পরিবারের সঙ্গে সীমান্ত পাড়ি দেয়, তখন তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের কোনো জিনিসই আনতে পারেনি, পরিধেয় কাপড় হয়ে গিয়েছিল জরাজীর্ণ, ছেঁড়া, তাতে তাদের মর্যাদা ও সম্ভ্রম সুরক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাদের সম্ভ্রম সুরক্ষার প্রথম পদক্ষেপ ছিল এই ডিগনিটি কিট।  ইউএনএফপিএ এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৪ হাজার ডিগনিটি কিট রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী মেয়েদের মাঝে বিতরণ করেছে।

|| নারীবান্ধব সেবা কেন্দ্র
 যে কোন দুর্যোগের সময় "নারীবান্ধব সেবা কেন্দ্র" অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি সেবা কার্যক্রম। আর তাই দূর্যোগকালীন সময়ে ইউএনএফপিএর কাছে নারীবান্ধব সেবা কেন্দ্র স্থাপন অগ্রাধিকার পায়।  রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবিরগুলো আগে যেখানে বন-জংগল ছিল এমন জায়গায় গড়ে উঠেছে। তাই  সেখানে কোন স্থাপনা তৈরি করতে হয়েছিল শূন্য থেকে, যা ছিল অনেক কষ্টসাধ্য। কিন্তু তারপরেও সংস্থাটি এই নারীদের জন্য নিরাপদ নারীবান্ধব সেবা কেন্দ্রগুলো তৈরি করেছে - যাকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা "শান্তিখানা" বা "শান্তির ঘর" বলে ডাকে। এই শান্তিখানায় রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েরা তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংস্থার কর্তব্যরত স্বেচ্ছাসেবি (কেসওয়ার্ক) এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে, কোন ভয়ভীতি ছাডাই তাদের মনের কথা প্রকাশ করতে পারে এবং নিজেদের জীবনের গল্প  একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারে।

কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ইউনিসেফ-এর বিশেষ দূত বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া- ছবি: UNICEF Bangladesh

নারীবান্ধব সেবাকেন্দ্রগুলোতে মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা নারীদের জন্য নারীরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীদের সহায়তায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে, যা তাদের এত বড় একটি সঙ্কটের পর স্বাভাবিক হতে সাহায্য করছে। এসকল বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীরা বাংলাদেশের শত শত কেস ওয়ার্কারকে প্রশিক্ষিত করেছেন এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মধ্য থেকেও অনেক স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষিত হয়েছেন। যাতে করে বিশেষজ্ঞরা সহজেই তাদের সাথে মতবিনিময় করতে পারেন এবং আরও ভাল ভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেন। এরইমধ্যে সংস্থাটির স্থানীয় কেসওয়ার্কাররা  লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার (জিবিভি) কেস ম্যানেজমেন্ট এর উপর কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াই উচ্চ মানের কেস ম্যানেজমেন্ট সেবা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ফলে কর্মীরা যে কোনো জটিল বিষয়ে সাহায্য করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে। এর ফলে হাজার হাজার নারী ইতোমধ্যেই মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তারা এখন ভবিষ্যতের দিকে নজর দিতে পারছে এবং পরবর্তীতে কিভাবে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে তা ভালভাবে শিখে নিতে পারছেন।

|| নিরাপদ প্রসব
সর্বশেষ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা আরও প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উপর চালানো এক জরিপে দেখা যায়, এদের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার ছিলেন অন্তঃস্বত্তা নারী। একটি পুরো প্রজন্ম ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরনার্থী শিবিরে জন্ম নিয়েছে। এই প্রজন্ম এমনই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে এর মাঝে জন্মগত জটিলতায় কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে তা হতো অভিশাপের মত। আর তাই এ সকল মা এবং নবজাতকের জীবন বাঁচাতে ও তাদের সুস্থ রাখতে প্রায় ১০০ জন প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ নিযুক্ত করে ইউএনএফপিএ। এ পর্যন্ত ইউএনএফপিএ পরিচালিত সরকারি ও বেসরকারি সেবা কেন্দ্রগুলিতে কয়েক হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। মিডওয়াইফরা তাদের ফ্রন্টলাইন কর্মী, তবে তাদেরকে মূল চিকিৎসার নির্দেশনা- স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞরা দেন। এছাড়া বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর জন্যে উল্লেখযোগ্য পরিমান ওষুধ সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণের জন্য ফার্মাসিস্টও নিয়োগ করা হয়েছে।

এছাড়া শরণার্থী শিবিরে এরইমধ্যে ১৩০ জন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে, যাদের অনেকেই দাই বা ধাত্রী এবং সমাজে তারা মর্যাদার অধিকারী। তাদের এ জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাতে করে তারা তাদের নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যে গর্ভবতী নারীদের চিহ্নিত করতে পারেন এবং তাদের পরিবারকে এটা বোঝাতে পারেন যে, একজন দক্ষ মিডওয়াইফের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়ার উপকারিতা কতটা এবং তা কতবেশী ফলপ্রসু। পাশাপাশি সংস্থাটি অন্তঃস্বত্তা নারীদের "ক্লিন ডেলিভারি কিট" সরবরাহ করছে, যাতে তারা কোন হসপিটাল বা ক্লিনিকে যেতে না পারলে, বাড়িতেই নিরাপদে সন্তান প্রসব করতে পারে। এই কিটে রয়েছে পরিষ্কার কাপড়, টাওয়েল এবং নাড়ি কাটার জন্য জীবানুমুক্ত ব্লেড। নতুন কোন শিশু জন্ম নেওয়ার প্রাক্কালে মাকে আরেকটি কিট  দেয়া হয় যা ‘মামা কিট’ নামে পরিচিত। এই কিটে থাকে তুলা, শিশুর জামাকাপড়, একটি কম্বল, শিশুর পরিধেয় ন্যাপি এবং মায়ের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন।

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জলি- ছবি: রয়টার্স 

|| পছন্দমত পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহন
ইউএনএফপিএ একটি অধিকারভিত্তিক সংস্থা। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহনের ক্ষেত্রে গ্রহীতার পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে মানসম্মত সেবা প্রদান তাদের মূল লক্ষ্য। তাই শরণার্থী শিবিরে সে বিষয়টি চিন্তা করে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বা জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। নতুন মায়েদের জন্যও তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বা জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রীর সরবরাহ থাকার কারনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী তাদের পছন্দমত পদ্ধতি গ্রহণ করছেন এবং পুরুষেরাও তাদের সমর্থন করছেন।

|| ইউএনএফপিএ-এর নতুন যুব উন্নয়ন কর্মসূচি
সম্প্রতি ইউএনএফপিএ, যুব কর্মসূচির সূচনা করে কর্মপরিধির বিস্তা ঘটিয়েছে, যা ইতোমধ্যেই সারা বাংলাদেশে বেশ সাফল্য পেয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে এবং আশপাশের এলাকাতেও এই কর্মসূচি সফল হয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের যৌন স্বাস্থ্য এবং জীবন দক্ষতার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যৌন নিপীড়ন এবং এর প্রতিরোধ সম্পর্কে তরুণদের জন্য অধিবেশনের আয়োজন করা হচ্ছে, যার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা শরনার্থী শিবিরের অল্পবয়স্ক মেয়েদের প্রায়শই হয়ে থাকে।

সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যায়, ইউএনএফপিএর বিভিন্ন কর্মসূচির প্রতি জনগণের সাড়া অভূতপূর্ব। সংস্থাটির উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও অঙ্গীকার খুব স্পষ্ট।  ইউএনএফপিএ, জাতিসংঘের সংস্থাসমুহের মধ্যে অন্যতম একটি অঙ্গসংস্থা, যা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ব্যাপারে নেতৃত্বের ভূমিকা নেয়। বাংলাদেশের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা এবং মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতকরণে ইউনিসেফ নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

এরইমধ্যে বাংলাদেশে চারটি প্রধান ক্ষেত্র: পুষ্টি, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি, শিক্ষা এবং শিশু সুরক্ষার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার মাধ্যমে ইইউ-এর সহায়তায় ইউনিসেফের তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৮৮ হাজার শিশু ও পরিবার উপকৃত হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোযুমি বলেন, রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তাদের পরিবারের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সহায়তা স্থিতিশিলতা নিশ্চিত করতে উদ্ভাবনী উপায়ে, সুসংহত ও সমন্বিতভাবে সেবা প্রদানে আমাদের জন্য সুযোগ তৈরি করবে।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অংশীদারদের সহযোগিতায় আমরা গত দেড় বছরে আমাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বেশ জোরদার  করেছি। তবে পরিস্থিতি এখনও সংকটময় রয়ে গেছে, কেননা বাংলাদেশের দরিদ্রতম ও সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা জেলাগুলোর একটিতে এখনও ১২ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।”

কক্সবাজারে ২৩ লাখ মানুষের বসবাস। এদের প্রায় ৩৩ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। সেখানে শিক্ষার সূচকগুলো দেশের সর্বনিম্ন পর্যায়ে; যেমন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির হার ৫৫ শতাংশ। ১৮ বছর বয়সের আগেই অর্ধেকের বেশি মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় এবং প্রায় ৫০ হাজার শিশু শিশুশ্রমে সম্পৃক্ত। জেলাটিতে অপুষ্টির হারও সুউচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। মায়েদের পুষ্টিহীনতা এবং নবজাতক শিশুদের পর্যাপ্ত না খাওয়ানো ও যথাযথ যতেœর অভাবে সেখানে প্রতি দু’টি শিশুর একটি খর্বাকৃতির সমস্যায় ভুগছে। এছাড়াও বাংলাদেশে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে কক্সবাজার অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ জেলা। এসব সমস্যার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তিরিঙ্ক বলেন, ‘শরণার্থী সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্য আরও ভালো একটি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আমাদের আরও কার্যকরভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এই কৌশলগত সহায়তার মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি কমিউনিটিগুলোর জন্য মানবিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা।’

তিনি বলেন, “কক্সবাজারে পানি, শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রাপ্তির সুযোগ উন্নত করার ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো আমরা সমাধান করবো। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং ভবিষ্যতে মানবিক সহায়তার চাহিদা কমানো।”

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয়দের সহায়তা প্রদানে ইউনিসেফকে ২ কোটি ৪৮ লাখ ইউরো অর্থ সহায়তা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোযুমি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটে ইউনিসেফের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে পাশে আছে ইইউ। আমরা প্রত্যাশা করি, রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় বাংলাদেশিদের জীবনমান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ এই অংশীদারিত্ব অব্যাহত থাকবে।

|| ইউনিসেফের শিক্ষা কার্যক্রম
ইউনিসেফ রোহিঙ্গা শিবিরে শিক্ষা কার্যক্রমে সফলতা অর্জন করেছে। যদিও জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থাটি বলছে, এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ শরণার্থী শিবিরে পর্যাপ্ত সেবা প্রদানে অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

মানবাধিকার কর্মীদের হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু। একই সঙ্গে দারিদ্রপীড়িত শিবিরগুলোতে প্রতিদিন আরো শিশু জন্ম নিচ্ছে। চলতি বছর ইউনিসেফ ২ লাখ ৬০ হাজার শিশুর জন্য সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ কারণে তারা শিক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে ২৫০০তে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার ইউনিসেফের তরফে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসরত ১ লাখ ৪৫ হাজারেরও অধিক শিশু এখন তাদের শিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে উপস্থিত থাকে। মানবাধিকার কর্মীরা এরই মধ্যে এ ধরনের ১৬০০ শিক্ষা কেন্দ্র তৈরি করেছে।

ইউনিসেফ তার সর্বশেষ রিপোর্টে বলেছে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সের রোহিঙ্গা তরুণদের ৯৭ শতাংশই কোন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করছে না। তবে শীঘ্রই এই সংখ্যা নিম্নগামী হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।

সূত্র: ইউএন নিউজ/ইউনিসেফ বাংলাদেশ/বিবিসি/উইকিপিডিয়া

এসকে

আরও পড়ুন