• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০১৯, ০৮:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১১, ২০১৯, ০৮:০১ পিএম

‘উন্নয়ন চাই, তবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি চাই না’

‘উন্নয়ন চাই, তবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি চাই না’
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ

উন্নয়ন চাই, তবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি চাই না বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন।

রওশন এরশাদ বলেন, হঠাৎ করে গ্যাসের দাম কেন বাড়ানো হলো? যেদিন বাজেট পাস হলো সেদিন গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। গণশুনানির পর দেখা গেল গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। আমরা যখন গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিলাম, তখন ভারতে গ্যাসের দাম কমিয়ে দিল। ঘরে রান্নার গ্যাসের দাম ১০০ টাকা কমিয়ে দিল। 

তিনি বলেন, আমাদের তো প্রাকৃতিক গ্যাস আছে। সেগুলো উত্তলনের ব্যবস্থা আমরা করতে পারি। হয়তো ২/৩ বছর লেগে যাবে। অনেক জনগণ আছে যাদের এত দাম দিয়ে গ্যাস কেনার সামর্থ নেই। জনগণকে একটু রেহাই দেয়া উচিত।

শিশু নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্যাতনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তিনি।

অসহায় শিক্ষকদের প্রতি মানবিকতার হাত বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, এমপিওভুক্তি বঞ্চিত শিক্ষকরা আন্দোলন করছে। তারা বেতন পাচ্ছেন না। এই অসহায় শিক্ষকদের প্রতি মানবিকতার হাত বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানাই। শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার অনুরোধ করি।

বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে আমাদের ছেলেমেয়েরা অন্যরকম জগৎ তৈরি করছে। এটা হাত থেকে যদি তাদেরকে বাঁচানো না যায় তাহলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ তারা কিভাবে নেতৃত্ব দেবে। এটা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের রাস্তা খুঁজতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে দিনরাত পরিশ্রম করে তথ্য সরবরাহ করেন গণমাধ্যম কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের উন্নয়নে কোনো সরকারি গুরুত্ব দেয় না। যদিও বর্তমান সরকারের সময় গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড দ্রুত বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেবেন। ওয়েজ বোর্ড যেন সাংবাদিকরা পায় সেটি বাস্তবায়নে তথ্যমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার অনুরোধ করেন।

রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের দেশে যখন আমরা বাজেট পাস করি তখন থাকে ভর বর্ষা। অর্থবছর পরিবর্তন করলে উন্নয়নে কাজে লাগবে। পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের জলবায়ুর সঙ্গে মিল রেখে অর্থ বছর পরিবর্তন করেছে। আপনারা যদি বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা করেন। আমার মনে হয় অর্থবছর পরিবর্তন করতে পারলে আমাদের উন্নয়ন আরও ভালো হবে।

তিনি বলেন, ডাক্তার আছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ যন্ত্রপাতি আমাদের দেমে আছে। কিন্তু ডাক্তাররা রোগিদের সময় দেন না। ডাক্তাররা সময় দেন না বলে বেশিরভাগ মানুষ দেশের বাইরে চলে যান।

এ সময় অবিলম্বে মেয়াদোর্ত্তীণ ওষুধ যেন বাজারে বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিরোধী দলীয় উপনেতা।
তিনি বলেন, খাদ্য ভেজার এখনো বন্ধ হয় নাই। ওষুধ আর খাদ্য মানুষের অনেক বেশি মৌলিক উপাদান। এই দুটি উপাদান ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, চলতেও পারে না। আমাদের ছোট ছোট শিশুরা যদি ভেজাল খাদ্য খায় তাহলে দেশ গড়ার কাজ করবে কিভাবে? বাচ্চাদের খাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই বাচ্চারাই ভবিষ্যতে এই দেশকে নেতৃত্ব দেবে।

রওশন বলেন, ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এই ধরনের শিশু নির্যাতন কেন গড়ে উঠেছে? বিশেষ করে স্কুলে-মাদ্রাসায় কোনো জায়গায় আমাদের বাচ্চারা সুরক্ষিত না, নিরাপদ না। যদি নিরাপদ না হয় তাহলে লেখাপড়া করবে কিভাবে? নুসরাতের মতো যদি জীবন দিতে হয় এটা দুঃখ জনক। আমাদের দেশে আইন আছে। আমি সরাসরি বলতে চাই, এদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। ইদানিং দেখা যাচ্ছে অনেক বেশি। কোনো জায়গাতে বাচ্চারা নিরাপদ না। এই ধরনের অবস্থা আগে ছিল না। এ সময় আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, তাদের দ্রুত শাস্তি দেয়া উচিত। মামলাগুলো ঝুলিয়ে না রেখে তাদের শাস্তি দেয়া উচিত।

রওশন বলেন, ধানের এই অবস্থা হলো কেন? এই রকম হলে তো কৃষকরা আর ধান চাষ করবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে কৃষকদের হানডেট পার্সেন ভর্তুকি দেয়। কৃষকদেরকে হানডেট পার্সেন্ট ভর্তুকি দিয়ে উৎসাহী করতে হবে। যাতে তারা ফসল উৎপাদন করে আমাদের খাদ্য সরবরাহ করতে পারে। প্রত্যেকবার যদি কৃষকদের আগুন দিয়ে ধান পুড়িয়ে ফেলে তাহলে তো এই দেশ বাঁচবে না। কৃষকরা এই দেশটাকে বাঁচায়। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।

দেশের অর্থনীতি যেভাবে বাড়ছে সেভাবে দরিদ্র কমছে না। বাধাগুলো দূর করতে পারলে উন্নয়ন সমান তালে চলতে পারে। অর্থবছর পরির্তন করা দরকার। বর্ষকালে কাজ হয়না। তাই অর্থবছর পরিবর্তন করা যায় কি না সেদিকে দৃষ্টি দেয়া যায় কি না প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকৃষণ করেন। নারীদের উন্নয়ন শিশুদের মানসিক শারিরীক উন্নয়ন করার ব্যাপরে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করেন। বক্তব্যের শেষে তিনি জাতীয় পার্টির আমলের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরেন।

এইচএস/টিএফ