• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০১৯, ০৪:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২২, ২০১৯, ০৫:০৭ পিএম

গুজবেই সব শেষ, অবুঝ তুবা জানে না মা কোথায়

গুজবেই সব শেষ, অবুঝ তুবা জানে না মা কোথায়

ঢাকার উত্তর পূর্ব বাড্ডা এলাকায় এক গুজবেই গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর চার বছরের ফুটফুটে কন্যা শিশু তুবার সঙ্গী এখন কান্না। মায়ের কথা মনে করে বাববার কান্না করছে সে। অথচ মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল তার। মেয়েকে ঘিরে মায়েরও ছিল আকাশ সমান রঙ্গিন স্বপ্ন। কিন্তু এখন অবুঝ তুবা জানে না তার মা কোথায়? মা ফিরে আসবে বলে গত তিনদিন ধরে অপেক্ষায় বসে আছে! কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলে মা নিচে গেছে ড্রেস আনতে। মা তো আসছে না। অবুঝ তুবাকে সান্ত্বনা দিবার মত ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না কেউ।

শনিবার (২০ জুলাই) সকালে ঢাকার উত্তর পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাসলিমা বেগম রেনুকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মেয়েকে ভর্তির জন্য ওই স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়ে কথাবার্তায় সন্দেহ হলে গুজবেই লোকজন জড়ো হয়ে ছেলেধরা বলে পিটুনি দিলে তার মৃত্যু হয়। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামে রেনুর বাড়ি। তুবা এখন খালাদের সঙ্গে রয়েছে।

এদিকে, রোববার (২১ জুলাই) রাতে রেনুর নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় নিহতের আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
বিকালে রেনুর মরদেহ বাড়িতে আনা হলে বৃদ্ধা মা ছবুরা খাতুনসহ স্বজনদের মাতম আর আহাজারিতে আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে উঠে। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। এ সময় পরিবারের লোকজন গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, পারিবারিক কলহের কারণে প্রায় দুই বছর আগে স্বামী তসলিম হোসেনের সঙ্গে রেনুর ডিভোর্স হয়। তাদের সংসারে তাসফিক আল মাহি (১১) ও তাসলিমা তুবা (৪) নামের দুই সন্তান রয়েছে। বিচ্ছেদের পর ছেলে বাবার সঙ্গে থাকে। আর মেয়ে মায়ের সঙ্গে ছিল। রেনু মহাখালীতে বাসা ভাড়া করে থাকতেন।

নিহত রেনুর আত্মীয় নুর জাহান বেগম মুন্নি বলেন, তুবা শুধু বলে, আমার মা নেই, আমার মা কই? এটি তার অবুঝ মনের বলা। সে কান্নাকাটি করছে। তুবা এখন আমাদের কাছেই থাকবে। তার ভাগ্য কী আছে আল্লাহ ভালো জানেন।

তাসলিমা বেগম রেনুর এক ভাই ও পাঁচ বোন। মাস্টার্স শেষ করা রেনু সবার ছোট। পড়ালেখা শেষে তিনি ঢাকায় আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছিলেন। দুই বছর ধরে ছাত্রছাত্রীদের তিনি প্রাইভেট পড়িয়ে আসছিলেন তিনি।

আগামী বছরের জানুয়ারিতে বড় ভাই আলী আজগরের কাছে আমেরিকা যাওয়ার কথা ছিল রেনুর। আমেরিকা যাওয়া হল না তার। নির্মম মৃত্যুতে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

নিহতের ভগ্নিপতি বদিউজ্জামান বলেন, অভিভাবকরা সন্তান ভর্তি করার জন্য স্কুলে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে গুজব ছড়িয়ে একজন শিক্ষিত-সংগ্রামী নারীকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করতে হবে। এ সভ্য সমাজে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তার করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আগামীতে যাতে আর কোনও মানুষ এভাবে গুজবের বলি না হয়।

কেএসটি

আরও পড়ুন