• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০১৯, ১১:০৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৩, ২০১৯, ০২:৩০ পিএম

আ.লীগের ‘বিদ্রোহীনামা’, আসলে কী হতে যাচ্ছে! 

আ.লীগের ‘বিদ্রোহীনামা’, আসলে কী হতে যাচ্ছে! 

উপজেলা নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ও ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে যে কঠোর শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ তা নিয়ে দলে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে। কঠোর শাস্তির এ বিধান থেকে দল শেষ পর্যন্ত খানিকটা সরে আসতে পারে, খোদ আওয়ামী লীগের ভেতরেই এমন আলোচনা রয়েছে। তবে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও ভবিষ্যতে এমন অবস্থা এড়াতে দল বিদ্রোহী নেতাদের সতর্ক করতে কারণ দর্শানোর জন্য চিঠি দেবে এটা নিশ্চিত। 

এদিকে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের বক্তব্যে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কঠোর সিদ্ধান্তের কথাই জানান দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, চলতি মাসের ২৮ তারিখ থেকে ওই প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী ও ইন্ধনদাতাদের বিষয়টি নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের পর অনেকেই দলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। এরইমধ্যে অভিযুক্ত অনেক তৃণমূল নেতা ঢাকায় এসে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে  নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন।

গত ১২ই জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া পদধারী নেতাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সহায়তা করা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতাদের কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দেয়া হবে এবং ৩ সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে হবে।
  
দলীয় একটি সূত্র মনে করে, উপজেলায় যারা বিদ্রোহ করেছেন তাদের বহিষ্কার করতে গেলে অনেক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এতে অনেক উপজেলার তৃণমূল নেতারাই জড়িত রয়েছেন। আর বিদ্রোহীদের ইন্ধনদাতা হিসেবে রয়েছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-সংসদ সদস্য। তবে ভবিষ্যতে যাতে এমন অবস্থায় দলকে আর পড়তে না হয়, সেজন্য ওই বিদ্রোহী নেতাদের সতর্ক করতে তাদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের ওই সূত্রটি বলছে, উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী নেতাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও দলীয় শৃঙ্খলার কথা বিবেচনায় নিয়ে হয়তো শেষ পর্যন্ত কঠোর সিদ্ধান্তের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারে দল।

আওয়ামী লীগের সূত্রটি বলছে, এর আগেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাজ করলেও দল থেকে কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি। এমনকি জাতীয় নির্বাচনে যারা বিদ্রোহ করেছিল তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এবারও উপজেলা নির্বাচন শুরুর পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিদ্রোহীদের শোকজ করার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে গত ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিদ্রোহী ও তাদের মদদদাতাদের বহিষ্কারের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা নমনীয় হয়ে হলেও বাস্তবায়িত হবে। সেক্ষেত্রে বিদ্রোহের জন্য শোকজ করা হবে। এরপর উত্তর এলে পাল্টা চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করে দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সূত্রটি বলছে, বিদ্রোহীদের ইন্ধনদাতা হিসেবে সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-সংসদ সদস্য মিলিয়ে ৬০ থেকে ৭০ জনের মত রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বাস্তবায়ন হলেও তা অনেক দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। তবে দলীয় শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে তাদের কারণ দর্শানোর মাধ্যমে সতর্ক করা হবে এটা নিশ্চিত।

দলীয় সূত্র বলছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের অভিযোগের যে তালিকা কেন্দ্রে এসেছে সেখানে সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-সংসদ সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারাও রয়েছেন। 

তাদের মধ্যে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, তারা এলাকায় রাজনীতিতে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা এবং বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে দল মনোনীতদের বিপক্ষে কাজ করেছেন। স্থানীয় রাজনীতির মারপ্যাঁচের কারণে এমনটি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। এক্ষেত্রে তারা কারণ দর্শানোর চিঠি পেলে তার জবাব দিতে প্রস্তুত। তবে সরাসরি বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত নিলে সেটি দুর্ভাগ্যজনক হবে বলে মনে করেন তারা।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এসব বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থন দেয়াদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যারা বিএনপি সরকারের সময়ে নির্যাতিত। দলের প্রতি তাদের অবদান রয়েছে।

তবে বিদ্রোহীদের বিষয়টি নিয়ে দল সহানুভূতিশীল হবে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম দৈনিক জাগরণকে বলেন, এখানে তো সহানুভূতির কোনো বিষয় নেই। এখন হলো বিচারের বিষয়। শোকজ আর সাসপেন্ড এই দুটোই করা হবে। এটা নিয়ে কাজ চলছে। সহানুভূতি দেখানো হবে কি না এটা পরবর্তী পর্যায়ের বিষয়।

গত শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শাস্তির ধরন হতে পারে কাউকে শো কজ এবং কাউকে কাউকে সাসপেন্ড করে শো কজ। আবার কাউকে কারণ দর্শাতে বলা হবে। সেটা বাস্তবায়নের কার্যকারিতা শুরু হবে ২৮ জুলাই থেকে। 

এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অফিসে ২শটির মতো অভিযোগ জমা পরেছে জানিয়ে কাদের বলেন, এই অভিযোগগুলো স্ব-স্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দিয়ে দিচ্ছি। কারণ কোনো কোনো অভিযোগ ব্যক্তিগত শত্রুতায় অনেক সময় দিয়ে থাকতে পারে। কাজেই বিষয়গুলো দেখার জন্য ২৭ জুলাই পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। ২৮ তারিখ থেকে আমরা বিভাগীয় টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস্তবায়নে যাবো।

জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ ও জুনে ৫ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮ বিভাগে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ২শ। এদের মধ্যে খুলনায় ৪১, রাজশাহীতে ২০, সিলেটে ৩২, রংপুরে ২৬, বরিশালে ১৭, ময়মনসিংহে ২০, ঢাকায় ৪৫-এর অধিক এবং চট্টগ্রামে ১৭-এর অধিক ছিল। এছাড়া ৮ বিভাগে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রায় শতাধিক নেতা নৌকার বিপক্ষে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন করেন।

 

এএইচএস/একেএস

আরও পড়ুন