• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০১৯, ০৮:২৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৫, ২০১৯, ০৮:২৮ এএম

ছাত্রদলের সংকট সমাধান কোন পথে

ছাত্রদলের সংকট সমাধান কোন পথে

আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ‘কমিটি সংকট' শিগগিরিই মেটার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আগের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে বিএনপির হাইকমান্ড ছাত্রদলের কাউন্সিলের জন্য তারিখও নির্ধারণ করেছিল। ঘোষণা করেছিল নির্বাচনের তফসিলও। সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে গঠন করেছিল ‘সার্চ’ কমিটিও। কিন্তু বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের প্রচণ্ড বিরোধিতা ও চাপের মুখে পড়ে এর একটিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি খোদ বিএনপির হাইকমান্ড। সার্চ কমিটি বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের নিয়ে কয়েকবার সমঝোতা বৈঠক করেও আসতে পারেননি কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধানে। তাই বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীদের বিরোধিতার মুখে এরইমধ্যে নির্বাচন ও কাউন্সিলের তারিখ তামাদি হয়ে গেছে। নতুন করে কবে কাউন্সিল হতে পারে, ছাত্রদল নিয়ে সৃষ্ট সংকট কবে দূর হবে- তা নিয়ে দায়িত্ববানরাও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। তারা দলের হাইকমান্ডের দোহাই দিচ্ছেন।

ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন দৈনিক জাগরণকে এ বিষয়ে বলেন, ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ আমাদের ছোটভাইয়েরা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। তাদের নিয়ে সার্চ কমিটিও বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছে। এ মুহূর্তে কনভেনিং কমিটি করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের আমরা পার্টির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে নেব। এতে আর কোনো অসুবিধা হবে না, ইনশাল্লাহ।

তিনি বলেন, ঈদের আগে হয়ত নতুন কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে না। এটা ঈদের পর পর্যন্ত যেতে পারে। আমাদের হাইকমান্ড (তারেক রহমান) এ বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি সিদ্ধান্ত দেবেন। তার সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেবে বলে আমরা আশা করি।

‘সাবেক ছাত্রদল নেতাদের সিন্ডিকেটের কারণে ছাত্রদলের সংকট সমাধান হচ্ছে না’- বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে খায়রুল কবির খোকন বলেন, না, এ তথ্য ঠিক নয়। সাবেক ছাত্রদল নেতারা বা সিনিয়র নেতারা কোনো সিন্ডিকেটে বিশ্বাস করেন না। তারা সমাধান বের করার চেষ্টায় আছেন। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।

ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, বিলুপ্ত কমিটির বিক্ষুব্ধরা কমিটি বিলুপ্ত করার পর বিএনপির কাছে সম্মানজনক প্রস্থানের দাবি করেন। তারা স্বল্প মেয়াদের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে পরবর্তী কমিটি গঠনে কাউন্সিলের আয়োজন ও নতুন কমিটি করে দিয়ে বিদায় নেয়ার সুযোগ দাবি করে। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ড প্রথমদিকে তাদের এ দাবিকে আমলে নিতেই অস্বীকার করে। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধরা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরোধের ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি শুরু করে। একপর্যায়ে কমিটির পক্ষে-বিপক্ষে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। পরিস্থিতি সংঘর্ষের দিকে যেতে থাকলে বিএনপির হাইকমান্ডের টনক নড়ে ওঠে। পরে বিলুপ্ত কমিটির বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে আপস ফর্মুলা হিসেবে ধারাবাহিক বৈঠক করেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতারা। যদিও এখন পর্যন্ত তারা কোনো সমাধান বের করতে পারেননি। 

এদিকে, বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আজও (বুধবার, ২৪ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। বিলুপ্ত ছাত্রদলের কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমাদের বিষয়ে দলের নেতারা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কোনো আপডেটও আমাদের তারা জানাননি। আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে আজকে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করছি। 
  
গত ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সার্চ কমিটির নেতারা। বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। তবে, সংকটের কোনো সমাধান না করেই বৈঠক শেষ করে সার্চ কমিটি।

বৈঠকে ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতারা ঈদের একদিন আগে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করা, নতুন কমিটি গঠনে শর্তারোপ এবং নতুন তফসিল ঘোষণার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। কমিটির নেতারা ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতাদের প্রশ্নের কোনো সদুত্তরও দিতে পারেননি।

বৈঠকে সার্চ কমিটির নেতারা বলেন, দলের এখন দুর্দিন চলছে। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে রয়েছেন। এ অবস্থায় দলকে ভালবেসে দলের সব নির্দেশ মানতে হবে। জবাবে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির ক্ষুব্ধ নেতারা বলেন, দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমরাই ত্যাগ স্বীকার করেছি, নির্যাতিত হয়েছি। কারাগারে গিয়েছি। মামলায় জর্জরিত হয়েছি। আপনারা থেকেছেন আয়েশে। উল্টো দলের সিন্ডিকেট তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের বহিষ্কার করিয়েছে। সিন্ডিকেট ছাত্রদলকে তাদের কব্জায় নিতে চাইছে। এটা আমরা হতে দেব না।

সূত্র জানায়, বৈঠকে সার্চ কমিটির নেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে উদ্দেশ করে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির এক নেতা বলেন, আপনি তো কৃষক দলে ২৬ বছর ধরে নেতৃত্বে রয়েছেন। এখন আবার সেই সংগঠনেরই আহ্বায়ক আপনি। এটা কীভাবে সম্ভব? এখানে আপনার কোনো বয়সের সীমাবদ্ধতা নেই? আপনার কারণে এই সংগঠনে নতুন কোনো নেতৃত্ব তৈরি হতে পারেনি। এ সময় দুদু কোনো কথা বলেননি।

ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির নেতারা জানান, ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতারা সার্চ কমিটির উদ্দেশে বলেন, বিগত আন্দোলনে আপনাদের ভূমিকা কী ছিল। খালেদা জিয়া বন্দি রয়েছেন। তার মুক্তির জন্য এখন কী ভূমিকা রাখছেন। আপনারা কত বছর বয়সে ছাত্রদলের সভাপতি হয়েছেন? তখন কেন সেটা অন্যায় মনে হয়নি। আবার রোজার ঈদের একদিন আগে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করে সমস্যা তৈরি করেছেন আপনারা। সেই সমস্যা সমাধান না করে কেন তফসিল ঘোষণা করেছেন। প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই এক পর্যায়ে সার্চ কমিটির নেতারা বৈঠক শেষ করেন। 

বৈঠকে সার্চ কমিটির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনসহ অন্যরা। 

সূত্র জানায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে প্রধান করে ছাত্রদলের পরবর্তী কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করে বিএনপির হাইকমান্ড। দুদুসহ কমিটির অপর সদস্যরাও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

বিএনপির বিশেষ সম্পাদক সাবেক ছাত্রদল সভাপতি ড. আসাদুজ্জামান রিপন দৈনিক জাগরণকে এ বিষয়ে বলেন, ছাত্রদলের কমিটি গঠনে কখনোই সার্চ কমিটি গঠন করা হয়নি। এটা মূলত কোন ক্যাটাগরিতে ছাত্রদলের ভবিষ্যত নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে, এর জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দেয়াই এ কমিটির উদ্দেশ্য ছিল।  

তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একটি দিক-নির্দেশনা ছিল যে. কমিটি কাউকে পছন্দও করবে না, কাউকে তুলে আনবে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতাকর্মীরা তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। আমরা তো আসলে কাউকে নেতা বানানোর জন্যও অথরিটি নই। আমাদের সুপারিশ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন নতুন কমিটির বিষয়ে।

সার্চ কমিটি বা সুপারিশ কমিটি সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদলের আগামী কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ লিখিত আকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- অছাত্র, বিবাহিত, ছাত্রত্বের নামে ঠিকাদারি ব্যবসা, কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী কখনও ছাত্রদলের কমিটিতে আসতে পারবে না। এছাড়া, ভবিষ্যতে ছাত্রদলের সব কমিটি গঠন করতে হবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে, নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে। 

সূত্র আরও জানায়, তারেক রহমান কমিটির সুপারিশগুলো দেখছেন। তিনি পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলেই ছাত্রদলের পরবর্তী কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু হবে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুল হক মিলন দৈনিক জাগরণকে ছাত্রদলের নতুন কমিটির বিষয়ে বলেন, কমিটি গঠনে কাজ চলছে। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। কবে নাগাদ কাউন্সিল হবে তা-ও ঠিক হয়নি। ঈদের আগে বা পরেও এটা হতে পারে। 

উল্লেখ্য, গত ৩ মে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। এরপর থেকেই বিলুপ্ত কমিটির নেতারা ধারাবাহিক কমিটি গঠনের দাবিতে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। ২২ জুন আন্দোলনকারী ছাত্রদলের ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে ছাত্রদলের সংকট সমাধানে স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে দায়িত্ব দেন তারেক রহমান। এ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা দফায় দফায় বৈঠক করেন। স্থগিত করা হয় কাউন্সিলের কার্যক্রম। তফসিল অনুযায়ী গত ১৫ জুলাই কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল।

টিএস/ এফসি

আরও পড়ুন