• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০১৯, ১০:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৫, ২০১৯, ১০:১৩ পিএম

ডেঙ্গুতে ঠাঁই নেই বেসরকারি হাসপাতালে, রোগীর পকেট কাটা

ডেঙ্গুতে ঠাঁই নেই বেসরকারি হাসপাতালে, রোগীর পকেট কাটা
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে এক রোগী- ছবি: কাশেম হারুন

রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সুযোগ নিয়েছে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলো। ডেঙ্গু আক্রান্তদের টাকার কল বানিয়ে মনগড়া পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও এর ফি আদায়ে ব্যস্ত হাসপাতালগুলো। সেবার চাইতেও এসব হাসপাতালের কাছে বড় হয়ে গেছে মুনাফা অর্জন। নেই সরকারের নজরদারিও।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত ৯০৩৬জন রাজধানীবাসী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৪৪৭৫জন চিকিৎসা নিয়েছেন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে। বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগীর চিকিৎসা হয়েছে সেন্ট্রাল হাসপাতালে, ৬৮৫জন। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভর্তি আছে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০৫জন।

এনএস১ নামের পরীক্ষায় সহজেই ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়। রক্ত দিয়ে এই পরীক্ষা করা হয় এবং রাসায়নিক ব্যবহার করে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। রক্ত নেওয়ার চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল বের করা সম্ভব।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রায় প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল এক থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নিচ্ছে। অথচ এনএস ১ পরীক্ষায় ব্যবহৃত কিটের দাম মাত্র ১৪৫টাকা।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার ঢাকার ৪টি বেসরকারি হাসপাতালে যায় দৈনিক জাগরণ প্রতিবেদক। হাসপাতালগুলো হচ্ছে- সেন্ট্রাল হাসপাতাল, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

দেখা গেল- ডেঙ্গু রোগীর পদভারে কাঁপাকাঁপি অবস্থা। এছাড়া ডেঙ্গু সন্দেহেও বিপুল সংখ্যক রোগীর ভিড়। ডেঙ্গুরোগী ও সম্ভব্য ডেঙ্গু রোগীর আতংকিত স্বজনদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতন। ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলামকে তার বাবা ও মায়ের সাথে পাওয়া যায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে। একদিনের জ্বরে আক্রান্ত রফিকুল। তার বাবা আমজাদ হোসেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, খুব ভয়ে আছি ছেলেটাকে নিয়ে। মনে হচ্ছে সর্দিজ্বর। তারপরও ডেঙ্গু হয়েছে কি-না, তা ফাইনালি জানতে এলাম।

ডেঙ্গু রোগী রহিমাকে পাওয়া যায় সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তার স্বজন মিনারা বলেন, অবস্থা বেশি ভাল না। রক্ত দেওন লাগসে। ডাক্তাররা তো বলতাসে, চিন্তা না করতে। কিন্তু শান্তি তো পাইতাসি না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান দৈনিক জাগরণকে বলেন, মানুষের বিপদের সুযোগ যারা নেয়, তাদের আইনের আওতায় নেয়া উচিৎ। একদিকে মানুষের মধ্যে হাহাকার, অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো ব্যবসায়িক স্বার্থ আদায়ে উঠে পড়ে লেগেছে- এটা খুবই অন্যায়।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ৪৫০টাকা ফি নেয়া যেতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, বর্তমানে ৯৩১জন ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এর মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯০জন, ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে ৫৪জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৫৪জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৮০জন, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০জন, কাকরাইলস্থ ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৭৮জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৯০জন, খিদমা হাসপাতালে ৩২জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০৫জন, অ্যাপোলো হাসপাতালে ৪৭জন, আদ দ্বিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৪জন, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭২জন, বিআরবি হাসপাতালে ৩৭জন, আজগর আলী হাসপাতালে ৪৯জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ৪৪জন ও পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩২জন চিকিৎসাধীন।

#এডিস মশার প্রজনন ক্ষমতা রোহিঙ্গাদের মতো

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এডিস মশার প্রজনন ক্ষমতা রোহিঙ্গাদের মতো, যে কারণে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে ডেঙ্গু হঠাৎ করেই বেশি হওয়ার কারণ এডিস মশা বেশি বেড়ে গেছে। এই মশাগুলো অনেক হেলদি ও সফিস্টিকেটেড, তারা বাসাবাড়িতে বেশি থাকে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ‘ডেঙ্গু: চেঞ্জিং ট্রেন্ডস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনার আয়োজন করে। এতে একজন বক্তা হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তখন মন্ত্রী তার জবাবে এসব কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে সোসাইটি অব মেডিসিন এবং ঢামেক মেডিসিন বিভাগ।

মন্ত্রী আরও বলেন, এডিস মশার প্রডাকশন অনেক বেশি। যেভাবে রোহিঙ্গা পপুলেশন আমাদের দেশে এসে বেড়েছে, সেভাবেই এই মসকিউটো পপুলেশনও বেড়েছে। আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।

মশা নিধন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ না, এটি সিটি করপোরেশনের কাজ বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান মন্ত্রী।

আরএম/বিএস 
 

আরও পড়ুন