• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০১৯, ০৩:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৬, ২০১৯, ০৩:৫৯ পিএম

বিবিসি‍‍ বাংলার সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী

সরকারের সমালোচনা করতে কাউকে বাধা দেয়া হয় না

সরকারের সমালোচনা করতে কাউকে বাধা দেয়া হয় না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- ফাইল ফটো

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গণমাধ্যম এবং মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। লন্ডনে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্যই করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আরো বলেন, দেশে জনগণের স্বার্থে কোনো উস্কানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় সরকারকে। কিন্তু শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করতে কাউকে বাধা দেয়া হয় না।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিবিসি বাংলার রেডিও অনুষ্ঠান 'প্রত্যুষা'য় প্রচারিত এই একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, গণতন্ত্র, অনাদায়ি ব্যাংক ঋণ এবং হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।


দেশের অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক বাহিনীগুলোকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছে সরকার। অপরাধীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিগুলোই ব্যবহার করা হয় যা বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য 


সাক্ষাৎকারের শুরুতেই, সম্প্রতি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এক বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আইন পরিস্থিতি পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে আইনি হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যার প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সত্যি বলতে এ ধরনের কোনো মানসিকতা আমাদের নেই। বরং দেশের অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক বাহিনীগুলোকে উন্নত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছে সরকার। বিগত ১০ বছরের আলোকে যদি দেখেন তাহলে দেখবেন এই ধরনের হেফাজতে মৃত্যু বা নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের আমলে চর্চা করা হয় না। তবে অপরাধীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিগুলোই ব্যবহার করা হয়য় যা বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।' 

এ সময় নিজের ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'যদি আমার কথায় বলা যায়, তাহলে দেখুন ১৯৭৫ সালে আমার বাবা- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমার পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যেখানে খুনিদের শাস্তি না দিয়ে বরং তাদের রক্ষা করার জন্য বিশেষ আইন পাশ করা হয়। যার বিচার পেতে আমাকে দীর্ঘ ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। একটি বিশেষ চক্র দেশে এমন একটি আইন ব্যবস্থাকে সামাজিকভাবে চর্চা করে এসেছে। যা কখনো সরাসরি সেনা শাসনের আদলে আবার কখনো বা নাম পাল্টে সেই একই ধারায় চলে এসেছে। মাত্র কয়েক বছরে এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দেয়া সম্ভব নয়। তবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার।'


১৯৭৫ সালে আমার বাবা- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমার পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যেখানে খুনিদের শাস্তি না দিয়ে বরং তাদের রক্ষা করার জন্য বিশেষ আইন পাশ করা হয়। যার বিচার পেতে আমাকে দীর্ঘ ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে 


নিজের বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হয়তো ঘটনাচক্রে কিছু ঘটনা এমন ঘটে তবে যতটা প্রচার করা হয় তেমন কোনো কিছু নেই। এই পরিস্থিতি নিরসনে মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ বন্ধ করে একটি গণতান্ত্রিক ধারা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একটি বিশেষ শ্রেণি আছে যারা, এই মিলিটারি শাসন ব্যবস্থার সময় বিশেষ সুবিধা অর্জন করে থাকে। বর্তমানে এই শ্রেণিটিই নানা সময় সরকারের নানা কাজের ব্যাপারে সমালোচনা ও অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে। তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের মানুষ ভালো আছে কি না।'

অপরদিকে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নে এই প্রবৃদ্ধির সুফল সকলের কাছে পৌছাচ্ছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে। এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই এই সুফল দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, ২০০৫-০৬ সালে যেখানে আমাদের দেশের দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগের উপরে ছিল বর্তমানে সেটা কমে ২১.৪ ভাগে নেমে এসেছে। মাত্র দশ বছরে আমরা এটুকু অন্তত অর্জন করতে পেরেছি।'

এ ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'মানুষের মাথাপিছু আয় যেখানে গড়ে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ মার্কিন ডলার ছিল, আজকে সেখানে মাথাপিছু আয় গড়ে প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছেছে। এছাড়া আমাদের প্রবৃদ্ধি এখন ৮.১ ভাগ অর্জন করোতে পেরেছি। একটি দেশে প্রবৃদ্ধি যখন উচ্চ হয়য় তখন মূল্যস্ফীতি বাড়ে। কিন্তু আমরা মূল্যস্ফীতি ঘটতে না দিয়েই এই লক্ষ্য অর্জন করেছি।'

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভাল থাকলে কেন এদেশের মানুষ দেশ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছে, বিবিসি বাংলার এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আদিকাল হতে মানুষের এই স্থান পরিবর্তনের প্রবণতা রয়েছে। মানুষ এক স্থান থেকে অন্যত্র গিয়ে নিজের অবস্থান আরো উন্নত করার চেষ্টা সবসময়ই করে এসেছে। এর সঙ্গে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি বা জাতীয় প্রবৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি মানবিক প্রবণতা।'

অপর এক প্রশ্নে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পরিস্থিতি দীর্ঘ দিনের একটি অপচর্চার ফলে সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের তৎপরতা এরই মধ্য শুরু হয়েছে। চাপ দিয়ে ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব হয় না। তাই নানা কৌশলে সেটা করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।'


বর্তমানে দেশের গণমাধ্যম শিল্প ক্ষেত্রের দিক তাকালে দেখা যাবে সেখানে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ও রেডিও সংস্থা রয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সংবাদপত্রের সংখ্যাও। আমি এই ক্ষেত্রটি অবশ্য উন্মুক্ত করেছিলাম সম্ভাবনাময় এই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টির লক্ষ্যে 


সাক্ষাতকারের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমি দেশে ফিরে আসার পর দেখেছি আমাদের মাত্র একটি টেলিভিশন চ্যানেল অর্থাৎ বিটিভি এবং একটি মাত্র রেডিও রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে দেশের গণমাধ্যম শিল্প ক্ষেত্রের দিক তাকালে দেখা যাবে সেখানে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ও রেডিও সংস্থা রয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সংবাদপত্রের সংখ্যাও। আমি এই ক্ষেত্রটি অবশ্য উন্মুক্ত করেছিলাম সম্ভাবনাময় এই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টির লক্ষ্যে। গণমাধ্যম যদি দেশে আবদ্ধ থাকতো তাহলে এভাবে বিকাশ ঘটতো না। শুধু তাই নয়, প্রতিটি গণমাধ্যম সর্বোচ্চ স্বাধীনতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যদি সেটা তারা না-ই করতে পারতো তাহলে সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করা সম্ভব হতো না।'

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের উন্নয়নের নানাদিক নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসকে

আরও পড়ুন