• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০১৯, ১০:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৬, ২০১৯, ১০:০৩ পিএম

ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে আ.লীগের কর্মসূচি

কেন্দ্রে কড়া, তৃণমূলে ঢিলেঢালা 

কেন্দ্রে কড়া, তৃণমূলে ঢিলেঢালা 

দেশের চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে কম গুরুত্ব সহকারে দেখলেও দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগ। তবে দলের কেন্দ্র থেকে ডেঙ্গু নিয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়ে দলের যে নির্দেশনা, এতে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে বেশ সরবভাবে কাজ করতে দেখা গেলেও ঢাকার বাইরে তৃণমূলে ঢিলেঢালা কার্যক্রম চলছে। তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ নিয়ে কাজ করলেও অনেক জায়গাতেই সচেতনতামূলক দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে না। 

৫ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরসহ দেশের ৬৩ জেলায় (রাজশাহী বাদে) ২,৩৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ৪ আগস্ট ২,০৬৫ জন, ৩ আগস্ট ১,৮৭০ জন, ২ আগস্ট ১,৬৪৯ জন, ১ আগস্ট ১,৬৮৭ জন, ৩১ জুলাই ১,৭১২ জন, ৩০ জুলাই ১,৪৭৭ জন, ২৯ জুলাই দেশের ৬০টি জেলায় ১ হাজার ৩৫ জন, ২৮ জুলাই ৫০ জেলায় ১,০৯৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দেশের বর্তমান চলমান ডেঙ্গু ও বন্যা পরিস্থিতিই মোকাবিলা করাই এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান কাজ। এ জন্য দলের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা প্রদক্ষেপ। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকাল ১১টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ জন্য এক যৌথসভাও ডাকে আওয়ামী লীগ। সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি, থানা ও ওযার্ডেরগুলোর সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে ডাকা হয়। 

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু এখন ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তাই আমরা সারা দেশে, জেলা-উপজেলায় প্রতিটি নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছি ডেঙ্গু মোকাবিলায় কাজ করতে। সাধারণ জনগণকে নিয়ে কাজ করতে বলেছি। জনসচেতন, ক্যাম্পিং অর্থাৎ ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রযোজনীয় যা যা করণীয় তা করার নিদের্শ দেয়া হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো বলছে, দেশের বর্তমান চলমান ডেঙ্গু ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে আটকে গেছে দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। দল থেকে এ সকল বিষয়ে  নানা পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা থাকলেও সেগুলো বাস্তবায়ন করতে দেরি হচ্ছে। গত মাসে ঘোষিত দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম তেমন একটা জোরেসোরে আগানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ এর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করাদের বিরুদ্ধে দল থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থার বিষয়টিও আটকে গেছে এসবের মধ্যে। দলের আগামী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সারা দেশের তৃণমূলের কমিটি গঠনের পরিকল্পনা থাকলেও অনেক জেলা ও উপজেলায় এ বিষয়ে এখন কার্যক্রম নেই। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো ও মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু মোকাবিলার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়ায় দলীয় কার্যক্রম থেমে আছে।

গত ৩১ জুলাই রাজধানীর ঝিগাতলা মোড়ে ধানমণ্ডি লেক পাড়ে এডিস মশা নিধন ও সচেতনতামুলক প্রচার অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা বাংলাদেশে একযোগে সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত তিন দিন ব্যাপী এই কর্মসূচি চলবে। আজকে বৃষ্টিমুখর এই দুর্যোগের মধ্যেও আমরা প্রোগ্রাম করেছি। এই কর্মসূচির মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে সচেতনতামূলক ও সতর্কতামূলক।
 
গত ৩ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যতদিন দেশ ডেঙ্গুমুক্ত ও এডিস মশা নির্মূল না হবে, ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এটাই আমাদের আজকের অঙ্গীকার। এখন সময়টা অত্যন্ত সংবেদনশীল। দেশের মানুষকে ডেঙ্গু আতঙ্ক থেকে রক্ষা করতে হবে।’ তবে সেসময় রাজধানীতে কর্মসূচি দেখা গেলেও সারা দেশে তেমন কর্মসূচি দৃশ্যমান হয়নি। আওয়ামী লীগ ঘোষিত ৩ দিনের কর্মসূচি রাজধানী ঢাকার বাইরে পালনেরও খবর পাওয়া যায়নি।   

তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে থাকা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিছন্নতা ও অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার নির্দেশ দেন। এর ফলে দলটির নেতাকর্মীরা পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন। তবে তৃণমূল পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও সচেতনতায় নেয়া কর্মসূচি ঢিমেতেতালে চলছে বলে জানা গেছে।  

দলের তৃণমূল নেতারা বলছেন, ঢাকার বাইরে তেমনভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ না হওয়ায় বিষয়টি ততটা সরব হয়নি। তবে ঢাকা থেকে যে সকল মানুষ আসছে তাদের বিষয় সতর্ক থাকার জন্য সকলকে বলা হচ্ছে। ঈদের সময় ঢাকা থেকে মানুষ এলাকায় গেলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

দলের তৃণমূল সূত্র জানায়, সারা দেশের অনেক জেলা ও উপজেলায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ে গত কয়েক দিনে সচেতনতা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। তবে সেগুলোও চলছে ঢিমেতেতালে।       

নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক শামছুর রহমান (ভিপি-লিটন) বলেন, আমাদের নেত্রকোণায় কোনো ডেঙ্গু নেই। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে ৪ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ৫ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত নেত্রকোণায় ৩ জন আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়। এ ছাড়া চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ জন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন।
   
জানতে চাইলে ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল ইসলাম বাবুল বলেন, এখানে তো ডেঙ্গু রোগী তেমন নেই। তবে যারা ঢাকা থেকে আসছে তাদের বিষয়ে আমরা দেখছি। দল থেকে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। আমরা মানুষকে সচেতন করছি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়ে। 

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. দিদারুল কবির বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমরা এখন পর্যন্ত ৪টি মেশিন কিনেছি। আমার প্রতিটি ইউনিয়নে ওষুধ ছিটানোর কাজ করছি। এ বিষয়ে গত রোববার ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা সকলের সঙ্গে মিটিং করেছি। এছাড়া স্কুল-কলেজে শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতনে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি অভিযোগ করেন, সিন্ডিকেট করে মেশিনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, তাই মেশিন কিনতে সময় লাগছে। কারণ আমরা নিজ অর্থায়নে মেশিন কিনছি।
 
জানা গেছে, রাজধানীর ধানমণ্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত শনিবার বিকালে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারা দেশে ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে দলের পক্ষে ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসা মনিটরিং সেল’ গঠিত হয়। 

এএইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন