• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০১৯, ০৬:১৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১০, ২০১৯, ০৬:৩৩ পিএম

জোড়া মাথার শিশু

কিছু ঝুঁকি সত্ত্বেও রাবেয়া-রোকেয়ার অবস্থা স্থিতিশীল

কিছু ঝুঁকি সত্ত্বেও  রাবেয়া-রোকেয়ার অবস্থা স্থিতিশীল
অপারেশনের মাধ্যমে পৃথক করা জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া - ছবি : আইএসপিআর

৩৩ ঘণ্টাব্যাপী অপারেশনের মাধ্যমে পৃথক করা জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া ও রোকেয়ার অবস্থা কিছু ঝুঁকি সত্ত্বেও স্থিতিশীল রয়েছে।সম্প্রতি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সফল অপারেশনের পর আজ শনিবার (১০ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানো হয়। 

হাসপাতালের কমান্ড্যান্ট কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংসদ সদস্য ডা. হাবিব ই মিল্লাত, সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. ফসিউর রহমান, ঢাকা সিএমএইচের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তৌফিকুল হাসান সিদ্দিকী, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক সামন্তলাল সেন, একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল এর ডা. গ্রেগ পাটাকি (প্লাস্টিক সার্জন), ডা. এন্ড্র চোকে (নিউরো সার্জন), ডা. মার্সেল (পেডিয়াট্রিকস ইনটেন্সিভিস্ট) এবং রাবেয়া-রোকেয়ার মা ও বাবা। 

অপারেশনের আগে জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া  - ফাইল ছবি

২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনার চাটমোহরে রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় বিরল দুই মানব সন্তান। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাদের বলা হয় Craniopagus twinsz (কনজয়েন্ট টুইন) অথবা মাথা জোড়া লাগানো জমজ শিশু। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিকলতা। ২৫ লাখ জীবিত জমজ শিশুদের মধ্যে মাত্র একটি মাথা জোড়া লাগানো শিশু জন্ম নেয়। এক্ষেত্রে প্রায় ৪০% শিশু মৃত অবস্থায় জন্ম নেয় এবং আরো এক-তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। তবে শতকরা ২৫ ভাগ শিশু বেঁচে থাকে জমজ মাথা নিয়ে, যাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে আলাদা করার সুযোগ থাকে। এটি একটি বিরল ধরনের অপারেশন। সারা বিশ্বেই খুব অল্প পরিমাণে হয়েছে। সাফল্যের হারও খুব বেশি নয়।

পাবনার একটি ক্লিনিকে শিক্ষক দম্পতির জন্ম নেয়া শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া এবং তার মা-বাবাকে জন্মের পরই পেতে হয়েছে সমাজের কুসংস্কারচ্ছন্নতার পরিচয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারা চিঠি লিখেন এবং তার নির্দেশনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুদের নিয়ে আসা হয়। এর সমস্ত কর্মকাণ্ডে যোগ দেন ডা. হাবিব ই মিল্লাত এবং ডা. সামন্তলাল সেন সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। হাঙ্গেরির একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল এর ডা. গ্রেগ পাটাকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে হাঙ্গেরির জনগণের পক্ষ থেকে এদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জটিল এই শল্য চিকিৎসা করা সম্ভব বলে মত দেন।

এই শল্য চিকিৎসাটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ৪ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে হাঙ্গেরিতে ৪৮টি ছোট-বড় সার্জারি হয়। অপারেশনের সবচেয়ে জটিল অংশ ‘জমজ মস্তিষ্ক’ আলাদাকরণের কাজটি সম্পন্নের জন্য গত ২২ জুলাই হাঙ্গেরি থেকে রাবেয়া ও রোকেয়াকে ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়। সেনাপ্রধান সমস্ত সহযোগিতার জন্য ডিজিএমএসকে বিস্তারিত নির্দেশনা দেন। ১ আগস্ট বেলা ১টায় পৃথকীকরণের জটিল অপারেশনটি শুরু হয়। ৩৩ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই অপারেশন ২ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় শেষ হয়। সেখানে হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সিএমএইচের নিউরো এ্যানেসথেসিওলজিস্টদের তত্ত্বাবধানে নিউরো ও প্লাস্টিক সার্জনরাসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের প্রায় শতাধিক সার্জন ও এ্যানেসথেসিওলজিস্ট এই জটিল অপারেশনে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।

অপারেশনের মাধ্যমে পৃথক করা জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া  - ছবি : আইএসপিআর

রাবেয়া ও রোকেয়া বর্তমানে সিএমএইচের পোস্ট এ্যানেসথেটিক কেয়ার ইউনিটে (PACU) অবস্থান করছে এবং সিএমএইচ ও শিশু হাসপাতালের নিউরো ইনটেনসিভিস্টদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। শনিবার তাদের পৃথকীকরণের ৮ম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। অপারেশনের পর এখানে তারা কিছু ঝুঁকি সত্ত্বেও স্থিতিশীল রয়েছে। মনে রাখা দরকার- এধরনের অপারেশনের পরবর্তী ঝুঁকি এবং জটিলতা অত্যন্ত বেশি। এছাড়া রাবেয়া-রোকেয়ার আরও একটি অপারেশন (ক্রেনিও প্লাস্টি) নির্ধারিত রয়েছে ২/৩ মাস পর। 

এ ধরনের চিকিৎসা সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। যে অন্ধকার অমানিশার মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতি পড়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় হাঙ্গেরির একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল এর সহায়তায় তারা অপার সম্ভাবনা দেখতে পারছেন।

সংবাদ সংম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সিএমএইচের প্লাস্টিক নিউরো সার্জন, নিউরো এ্যানেসথেসিয়া ও পেডিয়াট্রিক চিকিৎসক ও ইনটেনসিভিস্টবৃন্দ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট, শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ এবং দেশি-বিদেশি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক। সূত্র : আইএসপিআর

এফসি

আরও পড়ুন