ঈদের নামাজ শেষ করেই বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজনের কবরের পাশে মোনাজাত ধরেছেন অনেকেই। মোনাজাতের মধ্যে কেউ নীরবে, কেউ বা উচ্চ স্বরে কেঁদে চলেছেন। খুশির দিনেও স্বজনদের চিৎকারে ভারি হয়ে উঠে শাহজাহানপুর কবরস্থান।
আজ সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিন সকালে এমন দৃশ্য দেখা গেছে রাজধানীর সকল কবরস্থানের ভেতরে। আজিমপুর কবরস্থানের দুই পাশের গেটই খোলা আজ। সবার জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে প্রবেশদ্বার। ভেতরে অন্তত ৫০০ জন বাবা-মা কিংবা স্বজনহারা মানুষ। সবাই কাঁদছেন। কেউ নীরবে, কেউ জোরে। কয়েকজন নারীকেও দেখা গেল কবর জিয়ারত করতে। সবাই স্বজনদের জন্য দোয়া কামনা করছেন মহান আল্লাহুর কাছে।
রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে মায়ের কবর জিয়ারত করতে এসেছেন রহমত আলী। সঙ্গে এসেছেন তাঁর ছোট ছেলে আজমত আলী। রহমত আলী উচ্চ স্বরে কাঁদছেন মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে। জিয়ারত শেষে তিনি বলেন, ‘মায়ের কাছে প্রতি ঈদের নামাজ পড়েই ছুটে চলে আসি। আজও এসেছি। ঈদের দিন সব কাজের আগে মায়ের সঙ্গে দেখা না করে গেলে যেন কিছুই হয়ে ওঠে না।’ বলতে বলতে আবারও কেঁদে উঠেন রহমত। আজিমপুরের স্থায়ী বাসিন্দা মো. হাবিবুর রহমান। তিন ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে এসেছেন বাবার কবর জিয়ারত করতে। হাবিবুর রহমান কাঁদছেন উচ্চ স্বরে, মোনাজাতও করছেন জোরো জোরে। সঙ্গে মোনাজাত করছেন তাঁর ছেলেমেয়েরাও। মোনাজাত শেষে হাবিবুর রহমানের মেজ ছেলে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাবার সঙ্গে প্রতিবারই ঈদের পর দাদার কবরে আসি। ভালো লাগে, মন হালকা হয়। মনে হয় সারা দিনটা ভালো যায়।’
রাফিয়া বেগম এসেছেন রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার এলাকা থেকে। সঙ্গে এক মেয়েকেও নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ছেলের আর বাবার কবর জিয়ারত করতে এসেছি। এখানে এলে মনটা হালকা হয়। অনেক কান্নাকাটি করি। তবে কবরস্থান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয় বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’ এ রকম আরো কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় । তাঁদের ভেতরে খালেক মিয়া এসেছেন মোহাম্মদপুর থেকে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-মা, দুই ভাই আর এক বোন এখানে শুয়ে আছেন। বলতে পারেন পুরো পরিবারই শুয়ে আছেন এখানে। এখানে এলে মনে হয় পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।' বলতে বলতে চোখ মুছেন খালেক।
জেডএইচ/এসকে