• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০১৯, ০৮:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৪, ২০১৯, ০৮:০৩ পিএম

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বিশ্বের বিস্ময়

বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা যায়নি

বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা যায়নি

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তদানীন্তন পাকিস্তানের শোষণ আর বঞ্চনার হাত থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার মধ্যদিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রটির উত্থানের লক্ষ্যে শুরু হয় এক নতুন সংগ্রাম। আর অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে 'সোনার বাংলাদেশ' গড়ে তোলার এক অদম্য স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরন্তন প্রচেষ্টা শুরু করেন- স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সহস্রাব্দের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

কিন্তু স্বৈরাচারী শোষকদের দোসররা কখনই চায়নি জাতির জনকের সেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন কোনোদিন সত্যি হোক। আর তাই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একদল বিপথগামী সেনাসদস্য ও ক্ষমতালোভী দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হন বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম কিংবদন্তি এই জননেতা। তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, যা পুরো জাতিকে মেরুদণ্ডহীন করে ফেলে। আর সেখানেই থমকে যায় সম্ভাবনাময় একটি বাংলাদেশের সোনার স্বপ্ন।

তবে শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র আর প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে সারা বিশ্বের বিস্ময় হয়ে উঠেছে আজকের বাংলাদেশ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সারাবিশ্বের কাছে এক আদর্শ রোল মডেলের নাম বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিবেচনায় এই সম্মান অর্জনের স্বীকৃতি আজ প্রতিষ্ঠিত। এক কথায় বলা যায়, যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার সাধ বুকে লালন করেছিলেন জাতির জনক, আজ সেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, প্রমাণ করেছে- বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। আর তার এই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাণ্ডারি হয়ে দেশকে প্রগতির পথে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তারই যোগ্য উত্তরসূরি- বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা যায় সেই অদম্য বাংলাদেশের উত্থানের গল্প।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- ফাইল ফটো

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র বাংলাদেশের আর্থ-সামজিক উন্নয়নের প্রেক্ষপট নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনগুলোয়, বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মানদণ্ড বিবেচনায় বাংলাদেশকে ‘দ্য রাইজিং এশিয়ান টাইগার’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। যার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা টিআরটি ওয়ার্ল্ড, ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স, বিবিসি বা দ্য ইকোনমিক টাইমস-এর মতো বিশ্বের স্বীকৃত বার্তাসংস্থাগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য। এছাড়া বাংলাদেশের এই অর্জনের কথা প্রকাশ পেয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদনগুলোতেও।

এই দাবির বাস্তবতা নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য প্রকাশে বাধ্য হয়েছে খোদ পাকিস্তানের সরকারও। সম্প্রতি দেশটির এক কূটনৈতিক কর্মকর্তার মুখেও সেই কথার পুনরাবৃত্তি শোনা গেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের এই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের ভাষ্যমতে, অর্থনৈতিক, মানবসম্পদসহ বিভিন্ন সূচকে দীর্ঘ চার যুগে বাংলাদেশ যেখানে এগিয়েছে তরতর করে, সেখানে পাকিস্তানের অর্জন নেই বললেই চলে। মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমান বিশ্বে ১৩৬তম, যেখানে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫০। বিশ্বক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ ৮৮, পাকিস্তান ১০৬তম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হার ৭ দশমিক ৮ হলেও পাকিস্তানের মাত্র ৫ দশমিক ৮।

চলতি বছর জুন মাসে এডিবির (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ গড়ে ৭.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে, যা ছিল ১৯৭৪ সালের পর দেশটির দ্রুততম বিকাশের লক্ষণ। এ থেকে বোঝা যায় যে, ১৯৭৫ সালের আগে জাতির জনকের নেতৃত্বে নিজেদের প্রগতির ধারা সঠিকভাবেই শুরু করেছিল বাংলাদেশ, যা থমকে যায় ১৯৭৫ সালে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সময়ের জিডিপি'র তুলোনামূলক লেখচিত্র- সূত্র: বিশ্ব ব্যাংক

এছাড়া ব্যাংকটির পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ শতাংশ। যাকে এক নতুন রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তারা। ব্যাংকটির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে (এডিও) বলা হয়েছে, ‘এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে বাংলাদেশের দ্রুততম থাকা অব্যাহত থাকবে।’

বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে তারা জানায়, ২০০৫-২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি উপস্থাপনের মাধ্যমে বলা হয়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্য রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় তাদের এই অগ্রগতির ধারা অনেক বেশি বেগবান। আর সেজন্য দেশের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে উন্নয়নের এই ধারার সূত্রপাত করার জন্য বিশেষভাবে প্রশংসা করা হয় দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ও সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার।

বাংলাদেশের জিডিপি হার বৃদ্ধির ধারাবাহিক অবস্থান- সূত্র: বিশ্ব ব্যাংক

প্রতিবেদনটির ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে উন্নয়নের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো উপস্থিত থাকলেও তাদের চিহ্নিত করা ও কার্যকর করে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন দেশটির বর্তমান সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা অন্য সরকারগুলোর আমলে কখনোই সেভাবে আলোকপাত করা হয়নি। একইসঙ্গে সরকারের যথাযথ সহযোগিতার প্রেক্ষিতে নিজেদের প্রমাণ করতে যেভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ, তা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য প্রগতিশীলতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি অনবদ্য উদাহরণ। এক সময় বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে পরিচিতি ছিল যে রাষ্ট্রটির, তারাই আজ বিশ্ব অর্থনীতির মানদণ্ডে নতুন ‘এশিয়ান টাইগার’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

এদিকে জাতিসংঘের প্রকাশিত তথ্যমতে, বাংলাদেশে যে প্রগতিশীল রাষ্ট্র বিনির্মাণের ধারাবাহিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা দেশটির মানুষের এবং তাদের প্রতিনিধিত্বকারী বর্তমান সরকার ব্যবস্থার অসাধারণ সমন্বয়ের ফল। আর এই ধারা বর্তমানে এততাই বেগবান যে, সেটাকে রুদ্ধ করে বাংলাদেশকে আর পেছনে ঠেলে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ, বাংলাদেশ শুধু নিজেদের প্রাঙ্গণে উন্নতির প্রবাহ সৃষ্টি করেনি বরং বিশ্ব বাজারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই বাংলাদেশের অর্থনীতি বাধাপ্রাপ্ত হলে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও আর্ত-সামাজিক উন্নয়নের তথ্য বর্ণনায় প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের সংক্ষিত আলোচনা- সূত্র: বিশ্ব ব্যাংক 

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও রয়টার্সসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের তথ্যমতে বাংলাদেশের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার গড়ে প্রায় ৬ শতাংশ যা দেশটির অন্যতম দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র- ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও বেশি। এছাড়া লক্ষণীয় যে, ২০০৯-২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশটির জিডিপি বৃদ্ধির হার শতকরা প্রায় ১৫০ শতাংশ, যা রীতিমতো বিস্ময়কর! বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক তথ্যমতে, বাংলাদেশের জিডিপি'র পরিমান ২০০৯ সালে ছিল প্রায় একশ বিলিয়ন ডলার যা ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী গতি ধরে রেখে ২০১৭ সালে ২৫০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছায় এবং এখনও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, যা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের অনবদ্য সাফল্য প্রমাণ করে।

অপরদিকে নিজেদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিইবিআর (সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ) জানায়, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর তালিকায় ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান পৌঁছে গেছে ৪১তম অবস্থানে। যেখানে গত বছর এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৩তম।

এতে বলা হয়েছে, এ বছরও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। শীর্ষ পাঁচে থাকা বাকি দেশগুলো যথাক্রমে জাপান, জার্মানি ও ভারত। এশিয়ার অনেক দেশের মতোই আগামী ১৫ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে উল্লেখ করে সিইবিআর প্রতিবেদনের ১০ম সংস্করণে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশা করছি ২০১৮ থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বার্ষিক গড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে। এতে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের ১৯ ধাপ উন্নতি হবে এবং ২০৩৩ সালে দেশটি ২৪তম অবস্থানে উঠে আসবে।’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ তার পোশাক রফতানি, ক্রমবর্ধমান প্রবাসী আয়, ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত পণ্য রফতানি সুবিধা, অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় ও সরকারি ব্যয় থেকে উপকৃত হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর 'জিডিপি গ্রোথ প্রজেকশন'- সূত্র: আইএমএফ

পাশাপাশি বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ খাত ও কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যে বলা হয়, বাংলাদশের সর্বোচ্চ পরিমাণ বৈদিশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প খাত। ২০০৫ সাল পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটের তুলনা করে বলা হয়, বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প খাতে চলমান অস্থিতিশীলতা বিরাজমান ছিল। দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও অরাজকতা ছিল যা ক্রমেই গ্রাস করে নিচ্ছিলো দেশটির সম্ভাবনা। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময় গার্মেন্টস খাতে শ্রমিক অসন্তোষ বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মতো বিষয়গুলো অপসারিত হওয়ায় আবার তা জেগে উঠেছে। এছাড়া শ্রমবাজারে বাংলাদেশি গার্মন্টস শ্রমিকদের মান ও সম্মানি বৃদ্ধির পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বহিঃবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক স্থাপনের স্থানটির ব্যাপক উন্নয়নের ফলে গতি সঞ্চারিত হয়েছে গার্মেন্টস খাতে।

এছাড়া তৈরি ওষুধ শিল্পের মতো একতি সম্ভাবনাময় খাতের বিকাশের পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্যবাহী পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন শিল্পের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতির অবকাঠামোকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার, তা এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলেও এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে টেলিকমিউনিকেশন ও রোবটিক সায়েন্সের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনমুখী আইটি সেকশন প্রতিষ্ঠার যে সম্ভাবনা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে তা দেশটির টেকসই অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে বলেও মন্তব্য করা হয়।

বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান ও মিয়ানমারের জিডিপি পরিমান বৃদ্ধির তুলোনামূলক লেখচিত্র- সূত্র: বিশ্ব ব্যাংক

চলতি বছরের শুরুতে নিজেদের এক বিশেষ প্রতিবেদনে দ্য ইকোনমিক টাইমস জানায়, বাংলাদেশ তার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে যে দুটি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের কৃতিত্ব দেখিয়েছে তার একটি হলো- নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা এবং দেশটিতে চলতে থাকা সুদীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অপসারণ। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের স্বনির্ভর একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার যে কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ, সেই লক্ষ্য অর্জনে দেশটির বর্তমান সরকারের আদর্শ নেতৃত্ব ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করার বিষয়টি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা বিগত সরকারগুলো নিশ্চিত করতে পারেনি। দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদ অপসারণ, রাজনৈতিক কোন্দল নিরসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রটিকে আরও বেশি বিস্তৃত করেছে যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে কয়েক ধাপ।

দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি রাষ্ট্রের জিডিপি পরিসংখ্যানের তুলোনামূলক অবস্থান- সূত্র: বিশ্ব ব্যাংক

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার যে দুঃসাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, মূলত সেখান থেকেই এই প্রগতিশীল বাংলাদেশের উত্থানের শুরু। এই প্রেক্ষাপটে নানা সময় দেশটির সরকার বিভিন্ন সমালোচনার মুখে পড়লেও নিজেদের প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে। আর সরকারের এই ইতিবাচক ও সাহসী পদক্ষেপই বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে আজকের বাংলাদেশকে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ধারা ধরে রেখে প্রগতির এই গতিশীল ধারা অব্যাহত রাখা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাফল্য অর্জন করেই বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ করেছেন, কেন তিনি দেশটির সর্বকালের এবং বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ক্রমেই বাস্তবে রূপ নিয়েছে জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ও চলমান প্রবৃদ্ধির অবস্থান- সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক

এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে। তবে সেই পথ পাড়ি দেয়ার মূল পটভূমিটুকু রচিত হয়ে গেছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে সামনে এগিয় যেতে হবে আর সেজন্য দেশের প্রতিটি মানুষকে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। ১৯৭৫ সালে যেই রক্তাক্ত আগস্টে এক ঘোর অমানিশায় নিক্ষেপ করা হয়েছিল জাতিকে, হত্যা করা হয়েছিল জাতির জনককে আর সেই সঙ্গে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে। সুদীর্ঘ ৪৪ বছরের পথ পরিক্রমায় সেই রক্তাক্ত আগস্টের ঋণশোধের উপলক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। দৃঢ় কণ্ঠে যে আস্থার কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু, তার সেই কথাই যেন আজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সর্বত্র। আজ সারা বিশ্ব জানান দিচ্ছে, বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা যায়নি।

তথ্যসূত্র সহায়ক- রয়টার্স, বিবিসি, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, দ্য ইকোনমিক টাইমস, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অফিশিয়াল ওয়েব সাইট, আইএমএফ ওয়েব সাইট

এসকে

আরও পড়ুন