• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০১৯, ০৯:৩০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৬, ২০১৯, ০৯:৩০ এএম

চামড়া কারসাজিতে কপাল পুড়লো দুঃস্থ এতিমদের 

চামড়া কারসাজিতে কপাল পুড়লো দুঃস্থ এতিমদের 
মূল্য না পেয়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখেন কোরবানির পশুর চামড়া

প্রতি বছর কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আসতো এতিমখানায়। এই সিংহভাগ আয়ের অর্থ থেকে এতিমখানা কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের খাবার থেকে শুরু করে অধিকাংশ সামগ্রী কেনা হতো।শুধু তাই নয় এতিমখানার অর্থের প্রধান অংশ আসতো কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে। তবে এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম এতটাই নিম্নমুখী যে, কাঙ্ক্ষিত অর্থ উপার্জন তো দূরের কথা, চামড়া সংগ্রহ করতে গিয়ে যে ব্যয় হয়েছে তাও উঠে আসেনি। এ কারণে চলতি অর্থবছরে তহবিল সংকটে পড়বে এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। যার ফলে চামড়া নিয়ে কারসাজির কারণে কপাল পুড়লো এতিমদের। 

পুরান ঢাকার বকসি বাজার রোডের আল মুমতাজ নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং নাজিম উদ্দিন রোডের বড় মসজিদ সংলগ্ন কওমী মাদ্রাসা এবং এতিমখানার শিক্ষকরা বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে কওমি মাদ্রাসা এবং এতিমখানাগুলোর ছাত্রদের লেখাপড়া, থাকা-খাওয়ার ব্যয় নির্বাহ করা হতো। কিন্তু এ বছর পশুর চামড়া থেকে অর্থ উপার্জন একদম হয়নি। উল্টো চামড়া সংগ্রহ করতে গিয়ে তহবিলের টাকা গচ্চা গেছে। এবার কি ভাবে ছাত্রদের খাওয়া-পড়া চলবে এনিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। 

এবিষয়ে হাফেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও তার মাদ্রাসায় তিন শতাধিক গরুর চামড়া দান করেছেন এলাকার মানুষ। তবে ঈদের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ক্রেতা চামড়া কিনতে আসেননি। শেষ পর্যন্ত অনেক কম দামে এক ক্রেতার কাছে চামড়াগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এসব চামড়া সংগ্রহ করতেই ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত প্রচার, চামড়া সংগ্রহসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চামড়ার দরপতনের কারণে ২০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছরে মাদ্রাসার এতিমখানার চালাতে হিমশিম খেতে হবে।
পাশাপাশি কারী হেদায়েতুল্লাহ জানান, এবার তাদের মাদ্রাসায় ১ হাজার বেশি পশুর চামড়া এসেছে। সিলেটের এক ব্যবসায়ীর কাছে ১৩০ টাকা দরে বাকিতে এসব চামড়া বিক্রি করা হয়েছে। চামড়া সংগ্রহে তাদের যে ব্যয় হয়েছে তাও উঠবে না।

মাদ্রাসা ও এতিমখানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়ার নজিরবিহীন মূল্য কমে যাওয়ায় এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে দেশের বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এতিমখানা ও মাদ্রাসার খরচের একটি বড় অংশের যোগান আসে ঈদুল আজহায় পাওয়া চামড়া বিক্রি করে। এবার চামড়ার দাম না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।

মাদ্রাসা ও এতিমখানার কর্মকর্তারা বলেন, চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকার হক থেকে গরিব এবং অসহায়দের বঞ্চিত করা সিন্ডিকেটকে ভেঙে দিতে হবে। কেননা, পশুর চামড়া বিক্রি করে এতিম, গরিব এবং অসহায়দের কাজেই লাগানো হয়। চামড়া শিল্পের ক্ষতি মানে তাদের ক্ষতি। চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে এতিম, দুঃস্থ শিক্ষার্থী, ও অসহায়দেও ভাগ্য নষ্ট হয়েছে। 
সারাদেশে  ঈদুল আজহায় চামড়ার নজিরবিহীন দরপতন হয়েছে। ন্যায্য মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেক চামড়া বিক্রেতা এবং বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চামড়া রাস্তায়, ডাস্টবিনে, মাটিতে পুতে রেখে  প্রতিবাদ করেছেন।

অন্য বছর যে চামড়া বিক্রি হতো হাজার টাকায়, এবার তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ১০০ টাকায়। এ কারণে কেউ কেউ বিপাকে পড়ে নাম মাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি করলেও অনেকে চামড়া ডাস্টবিনে কিংবা সড়কে ফেলে চলে যান।

এদিকে  দাম কম হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় ফেলে রাখা চামড়া পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ায় রাতেই সেগুলো অপসারণ করে সিটি করপোরেশন। ভালো দাম না পাওয়ায় বিক্রেতারা চামড়া রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যান। সেগুলো থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় অপসারণ করে ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হয়েছে বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। 

এইচএম/বিএস 
 

আরও পড়ুন