• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০১৯, ০৯:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৮, ২০১৯, ০৯:৪৬ পিএম

জাতীয় শোকসভার আলোচনায় ইসি সচিব

‘আঁতাতকারী ছিল বলেই তাদের চোখে পানি ছিল না‍‍`

‘আঁতাতকারী ছিল বলেই তাদের চোখে পানি ছিল না‍‍`
জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন। এক সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারী প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে (যেটা পরে আর হয়নি) বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যও লিখে দিয়েছিলেন।

সেদিনের স্মৃতিচারণায় মাহবুব তালুকদার বলেন, বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আমি বঙ্গভবনে যাই। খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব নিয়েছেন। আমাকে ভাষণ লিখে দেয়ার জন্য বলা হয়। গিয়ে দেখি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য বসে আছেন আমার সাবেক বস, রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। তার সঙ্গে আরও অনেকে যারা মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে বসে আছেন, সকলেই আওয়ামী লীগের লোকজন। আমি ভাবতে পারি না, কী করে তারা এটা করতে পারছেন! তাদের কারো চোখে পানি নেই।

মাহবুব তালুকদারের এই ‘ভুল’ ধরিয়ে দেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. আলমগীর। তিনি বঙ্গবন্ধুর এই সহকারী প্রেস সেক্রেটারির উদ্দেশে পরবর্তী বক্তা হিসেবে বলেন, স্যার তারা ছিল আঁতাতকারী। এজন্যই তারা মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে পেরেছেন। তারা আঁতাতকারী ছিল বলেই তাদের চোখে পানি ছিল না।

মো. আলমগীর বলেন, অনেকেই বলেন, একদল বিপথগামী সেনা সদস্য এই কাজ করেছে। কী করে এটা সম্ভব! তাদের দিয়ে করানো হয়েছে এই জঘন্য কাজ। তাদের পেছনে ছিল অন্য কেউ। সে সময়কার সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) অফিসারদের অনেকেই আঁতাত করেছেন।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেলে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটারিয়ামে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুব তালকুদার বলেন, এক দিক দিয়ে আমি ভাগ্যবান। আরেক দিক দিয়ে আমি দুর্ভাগা। ভাগ্যবান এইজন্য যে, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। আর দুর্ভাগা এজন্য যে, তাকে এইভাবে হারিয়েছি। তিনি বেঁচে থাকলে আজকের বাংলাদেশ সত্যি সোনার বাংলা হয়ে যেত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্য আজকে বুক ফুলিয়ে বাঁচি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবিনেট সেক্রেটারি করার জন্য কোনো কর্মকর্তা পাচ্ছিলেন না। উপ-সচিবকে তখন কেবিনেট সেক্রেটারি বানাতে হয়েছিল। কেননা, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের বৈষ্যমের মধ্যে রেখেছিল।

বঙ্গবন্ধু না থাকলে দেশ স্বাধীন হতো না। আর দেশ স্বাধীন না হলে আজ আমি নির্বাচন কমিশনার হতে পারতাম না। পাকিস্তানের অধীনে থাকলে আমি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হতে পারতাম কিনা সন্দেহ হয়।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব সুদৃঢ় করার সুযোগ তাকে দেয়া হয়নি। বিশ্ববাসী যেখানে তাকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ তাকে নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত! আমরা কী তাকে ধারণ করতে পেরেছি? আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি। তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে অনন্য স্থান পেত।

তিনি বলেন, আমাদের শিশুকে জানাতে হবে প্রকৃত নেতা কে? প্রকৃত ইতিহাস তাদের মাঝে বিলি করে দিতে হবে। অন্যথায় আগামীর পথ মসৃণ হবে না।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, একজন মিলিটারি লিডার হিসেবে বলছি, বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্যারিশম্যাটিক লিডার। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি একাধারে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে যুদ্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন। আবার একই ভাষণে অবরোধের ডাক দিয়ে বলেছেন, গরীব দুঃখীদের যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্য রিকশা চলবে। কাজেই তিনি সবকিছু নিয়ে ভাবতেন। তিনি শুধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিই নন, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনে ১৩ বছর জেল খেটেছেন। কত ত্যাগ তিতিক্ষা করছেন। কারণ স্বাধীনতা তার স্বপ্ন ছিল। তিনি একটি পতাকা আমাদের দিয়েছেন। কাজেই যার যার অবস্থান থেকে নিজের দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করতে হবে। তাহলেই তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, স্বাধীনতার পরের প্রজন্ম যখন বুঝতে শুরু করেছে, তখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ২১ বছর তাদের প্রকৃত ইতিহার জানতে দেয়া হয়নি। এখন সময় এসেছে। তাই বর্তমান প্রজন্মের মাঝে প্রকৃত ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান, মো. আবদুল বাতেন, মোস্তফা ফারুক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এইচএস/বিএস