• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০১৯, ০৯:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৩, ২০১৯, ০৯:৫৯ পিএম

পিছিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সম্মেলন!

পিছিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সম্মেলন!

পিছিয়ে যেতে পারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। আগামী অক্টোররে এ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা এক থেকে দুই মাস পিছিয়ে যেতে পারে বলেই দলীয় সূত্র জানাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এখন পর্যন্ত আগামী অক্টোবরে সম্মেলন হবে- এটা ভেবে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন বেশি দূর না এগিয়ে যাওয়ায় হয়তো কেন্দ্রীয় সম্মেলন আরও এক থেকে দুই মাস পিছিয়ে যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই এই সম্মেলন আগামী বছরে যাবে না। কারণ আগামী বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী তথা মুজিব বর্ষ। এ কারণে এ বছরের মধ্যেই সম্মেলন শেষ হবে। তবে হয়তো সেখানে একটু এদিক-ওদিক হতে পারে। 

নেতারা বলছেন, দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগেই জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নেতৃত্বে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সস্প্রতি দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছে। কারণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন প্রস্তুতির কার্যক্রম স্থগিত রেখে বন্যা ও ডেঙ্গু মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে।  

আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, চলতি মাস শোকের মাস, আগস্টের পর আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন নিয়ে আমাদের নেত্রীর (দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলোচনা হবে। সেসময়ই আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হবে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান ও ভারত সফরের কথা রয়েছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই ঠিক করা হবে আওয়ামী লীগের দলীয় সম্মেলন তারিখ।      

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সেই অনুযায়ী অক্টোবরেই দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর জাতীয় সম্মেলনের আগেই উপজেলা ও জেলা শাখার সম্মেলন সম্পন্ন করা নির্দেশনা রয়েছে দলীয় হাইকমান্ডের। আগামী অক্টোবার নাগাদ দেশের অধিকাংশ জেলা ও উপজেলার সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন করার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোকে অগ্রধিকার দেয়া হচ্ছে। তবে সব জেলা সম্মেলনগুলো সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব না-ও হতে পারে। এটা অক্টোবরের মধ্যে সম্ভব হবে।
 
জানা গেছে, সাধারণত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূল তথা ইউনিয়ন, থানা, জেলা পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে এবার সারা দেশে ভয়াবহ ডেঙ্গু ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। এর ফলে জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলের সম্মেলন সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
  
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক দৈনিক জাগরণকে বলেন, যেসব উপজেলা কমিটি ৩ বছরের অধিক সময় হয়েছে সেগুলোর কাউন্সিল সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা প্রায় শেষ করে নিয়ে আসব। এছাড়া জেলা কাউন্সিল যেগুলো অনেকদিন হয়ে গেছে, সেগুলো করার জন্যও নেত্রী এরইমধ্যে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই প্রায় উপজেলা ও জেলা সম্মেলনগুলো শেষ হয়ে যাবে। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে চলতি বছরের মার্চে ৮ বিভাগে ৮টি সাংগঠনিক টিম গঠন করে আওয়ামী লীগ। পরে এই টিম বিভিন্ন বিভাগে সাংগঠনিক সফর করে। সাংগঠনিক সফর থেকে বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠানের নির্দেশনাও দেয়া হয়। কিন্তু রমজান মাসে সফর বন্ধ হয়ে যায়, যা পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হয়নি। এখনও পর্যন্ত হাতে গোনা দুএকটি উপজেলা ও ইউনিয়ন ছাড়া কোথাও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। গত কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর ওই ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে শুধু একটিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের মধ্যেই বেশিরভাগ জেলার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর বেশিরভাগ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে সময় লেগেছিল এক-দেড় বছর। আর উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোর অবস্থা আরও করুণ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ প্রায় ফুরিয়ে আসায় নতুন কাউন্সিলের তোড়জোড় শুরু হলেও এখনও সাংগঠনিক জেলাগুলোয় সম্মেলন করতে পারেনি দলটি। তবে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই জেলাগুলোর সম্মেলন হয়ে যাবে- এ কথায় এখনও অনড় রয়েছেন দলের অনেক নেতা।

উল্লেখ্য, গত মার্চে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের ওই বৈঠকের পর দলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও সংগঠনের জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে দেশব্যাপী সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে ৮টি টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দলের উপদেষ্টামণ্ডলী, সভাপতিমণ্ডলী এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত এই টিমসমূহ ৮টি সাংগঠনিক বিভাগের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ ও গতিশীল করবে।

এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় সম্মেলনকে ঘিরে এরইমধ্যেই দলের মধ্যে এক ধরনের মনতাত্ত্বিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের অন্তত হাফ ডজন নেতা তাদের কর্মকাণ্ডে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও সারা দেশের নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে দলীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের পর মাঠে আরও সক্রিয় হবে।

এএইচএস/একেএস/ এফসি

আরও পড়ুন