• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯, ১০:৪৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯, ১০:৪৬ এএম

জামায়াত-শিবিরের ক্ষোভ  

জঙ্গিদের বোমা হামলার টার্গেট পুলিশ : মনিরুল ইসলাম

জঙ্গিদের বোমা হামলার টার্গেট পুলিশ : মনিরুল ইসলাম
সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম

নব্য জেএমবির নামে জামায়াত-শিবিরের লোকজনই পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে। বলে জানিয়েছেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম। 

রাজধানীর পল্টন,খামারবাড়ি, গুলিস্থান ও সর্বশেষ সায়েন্সল্যাব এলাকায় পুলিশের ওপর চালানো হয় বোমা হামলা। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিককের করা এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম এ কথা বলেন।

পুলিশের এই কর্মককর্তা বলেন, পুলিশকে টার্গেট করার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এক ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা দেখেছেন। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে এবং বিচারের দাবিতে যখন গণজাগরণ মঞ্চের উত্থান হয়। তখন থেকেই জঙ্গিবাদের বিস্তার হতে শুরু হয়, ব্লগার হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মানেই নাস্তিক এরকম আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেশবাসীকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধে জড়িত দলই লাভবান হয়েছে মন্তব্য করে মনিরুল ইসলাম বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত একেবারে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই প্রেক্ষাপট থেকে আমরা দেখেছি গণজাগরণ মঞ্চের পরও এই জঙ্গি তৎপরতা অব্যাহত ছিল এবং এক পর্যায়ে হলি আর্টিজানের ঘটনা সংঘটিত হয়।

তিনি বলেন, হলি আর্টিজান ঘটনার সময় আমরা দেখিছি  শুধু জামায়াতুল মুজাহিদিনের মতো একটি অংশ যারা নব্য জেএমবি হিসেবেই পরবর্তীতে হলি আর্টিজানের ঘটনা এবং এর আগের আরও কিছু ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল।

সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যখন শুরু হয়, তখন তারা যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, সেটার প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা দেখেছে পুলিশকে। তারা নৈরাজ্য যাতে তৈরি হতে না পারে, তা প্রতিহত করেছে পুলিশ। পুলিশ জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে, জানমাল ও সরকারি সম্পত্তির নিরাপত্তার স্বার্থে আইন প্রয়োগ করেছে। এটি তাদের বিপক্ষে গেছে। ফলে সেদিক থেকে পুলিশের প্রতি তাদের একটি ক্ষোভ রয়েছে। এ ক্ষোভ থেকেই জামায়াত- শিবিরের লোকজন পুলিশের উপর বোমা হামলা চালাচ্ছে। 

তিনি বলেন, তারা মনে করে তারা যখনই সংগঠিত হতে চেয়েছে, পুলিশের কারণে পারেনি। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে এটাই স্বাভাবিক। এই কাজটাকে তারা মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে পুলিশের প্রতি তাদের সাংগঠনিক যে ক্ষোভ ছিল সেটাকে তারা কাজে লাগাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, গত কয়েক মাসে চার-পাঁচটি ঘটনার বাইরে আগের সব সন্ত্রাসী ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং অধিকাংশ মামলার চার্জশিট হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু মামলার বিচার হয়েছে, কিছু বিচারাধীন রয়েছে। সে কারণে পুলিশের প্রতি তাদের প্রচন্ড একটা ক্ষোভ আছে। তিনি জানান, নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই গ্রেফতার হয়েছে, কেউ কেউ পুলিশি অভিযানে নিহত হয়েছে ও আত্মাহুতি দিতে বাধ্য হয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, জেএমবি ছিল মূলত জামায়াত-শিবিরের সাবেক নেতাকর্মীদের তৈরি একটি জঙ্গিবাদী সংগঠন। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী বা সাবেক নেতাকর্মী জেএমবিতে জড়িত হয়েছে। ২০১৬ সালের পরেও যারা জড়িত হচ্ছে তাদের মধ্যে অনলাইন অ্যাকটিভিস্টই বেশি। কারণ, হলি আর্টিজানের পরে তাদের যে সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল, তাতে সাবেক শিবির ছাড়াও আরও কিছু তরুণ যোগ দেয়, যারা মিসগাইডেট হয়েছিল। অনলাইন প্রচারণার ল্যাংগুয়েজ এবং ছাত্রশিবিরের ব্যবহৃত কিছু ট্রেডমার্ক ল্যাংগুয়েজ এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় যারা ধরা পড়ছে তারাও দেখা গেছে শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিল। এমনও কেউ কেউ আছে, ছাত্রশিবিরের নেতা হিসেবে ১৫-১৬টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সে এই জঙ্গি গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়ে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে। এরকম কিছু লোককে চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, কিছুদিন আগে রাজধানীর দুটি পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রাখা হয়েছিল, সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। সর্বশেষ গত পরশু (৩১ আগস্ট) সায়েন্সল্যাবের ঘটনা থেকে এখন পর্যন্ত যতটুকু তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে তাতে পুলিশই মূলত এর টার্গেট ছিল।

এইচ এম/বিএস 
 

আরও পড়ুন