• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯, ০৫:৩৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯, ০৫:৩৬ পিএম

পুলিশের হেল্প লাইন -৯৯৯ 

৯ মাসে ঠেকালো ১৭৬ জনের আত্মহত্যা

৯ মাসে ঠেকালো ১৭৬ জনের আত্মহত্যা
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯

আজ ১০ সেপ্টেম্বর।বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। পুলিশ জাতীয় সেবা জরুরি এ হেল্প লাইনের-৯৯৯ মাধ্যমে গত ৯ মাসে মোট ১৭৬ জনকে আত্মহত্যা বা প্রানবধের মতো জঘন্য কাজ থেকে রক্ষা করেছে। পুলিশ সদর দফতর জাতীয় সেবা দান সেলের তথ্য থেকে জানা গেছে।
 
জাতীয় জরুরি সেবা বিভাগের পুলিশ সুপার মো.তবারক উল্লাহ বলেন, ৯৯৯ যেহেতু জাতীয় জরুরি সেবা দানে কাজ করে সেক্ষেত্রে সব ধরনের কল আমাদের এখানে আসে। আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছে এমন ফোন কোনো কোনো দিন একাধিকবার পেয়ে থাকি। তবে গত ৯ মাসে ৯৯৯-এ কলের মাধ্যমে ১৭৬ জনের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয় পুলিশ।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (আইএএসপি)। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য লেটস ওয়ার্কটুগেদার ফর প্রিভেন্ট সুইসাইড বা আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি একসঙ্গে।

অপরদিকে দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। পুলিশ সদর দফতর ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। যা গড়ে প্রতিদিন দাঁড়ায় ৩১ জন। ২০১৭ সালেও ১১ হাজার ৯৫ জনের আত্মহত্যার তথ্য দেয় পুলিশ সদর দফতর। 

পুলিশ সদর দফতরের রেকর্ড অনুযায়ী জানা যায়, সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট। পুলিশের হেল্প লাইনের অর্থাৎ ৯৯৯-এ কল। কলার বরিশালের উজিরপুরের নওশীন আফরোজ। নওশীন নিজের সমস্যায় নয়, ভাইয়ের সমস্যার জন্য ফোন করেছেন।

কলার নওশীন জানান, তার ভাই নওশাদ হাসান হিমু (২৮) মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা হাউজিংয়ে অবস্থান করছেন। তাকে ফোন করে জানিয়েছেন, তিনি আর মানসিক চাপ নিতে পারছেনা, তিনি আত্মহত্যা করবেন। তাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়।

ঠিক সে মুহূর্তে নওশীন ৯৯৯-কল করে ভাইকে বাঁচানোর জন্য পুলিশি সহায়তা চাইলেন। তাৎক্ষণিক পুলিশের সেবা থেকে নওশীনকে মোহাম্মদপুর থানার ডিউটি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হলো। এরপর মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইউসুফ আলী ঘটনাস্থলে রওনা দেন। এসআই ৯৯৯-সেবাকে জানান, আত্মহত্যার চেষ্টাকারী হিমুকে তার ফ্ল্যাট থেকে বুঝিয়ে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে রেখে তার কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং তার অভিভাবকদের কাছে ন্যস্ত করা হয় তার ভাইকে। 
এমন ভাবেই জাতীয় জরুরি সেবা সেন্টার ৯৯৯-এ এমন ঘটনা এখন নিয়মিত। গত ৯ মাসে ১৭৬ জনকে আত্মহত্যার চেষ্টা থেকে বের করে আনা হয়। এরমধ্যে কাউকে কাউকে বুঝিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। 
 
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরীক্ষা ও প্রেমে ব্যর্থতা, বেকারত্ব, অস্থিরতা, মাদকাসক্তিসহ নানাকারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানা গেছে, পৃথিবীতে যত মানুষ আত্মহত্যা করেছে তার মধ্যে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বাংলাদেশি। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রতি লাখে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ এভাবে নিজের জীবন নিজেই বিলিয়ে দিচ্ছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশর অবস্থান বিশ্বে দশম। আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। বয়সের কারণে তারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ। মানসিক আঘাত পেলে যুক্তির চেয়ে বেশি আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন তারা।

এবিষয়ে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনতাসীর মারুফ বলেন, আত্মহত্যার ঘটনা যে হারে বাড়ছে তাতে পারিবারিক সচেতনতা জরুরি। তা নাহলে এই সংখ্যা বেড়েই চলবে। তিনি বলেন, পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, প্রেমে ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক ক্ষতি, মা-বাবার ওপর অভিমান এবং মানসিক চাপে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা যাদের কম তারাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। তাদের ঝুঁকি কমাতে পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের বিকল্প নেই।  

এব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে, তারা একদিনের সিদ্ধান্তে জীবন নিয়ে এমন ঝুঁকি নেয় না। তাদের মস্তিষ্কে অনেক দিন ধরে এই সব বিষয় ঘোরাফেরা করে। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি পরিবেশই মানুষের মস্তিষ্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আমাদের এই জায়গা থেকে বের হতে হলে সুস্থ ও মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেককেই তার আবেগ প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

এইচএম/বিএস