• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ১০:১৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ০১:৩৭ পিএম

সীমান্ত ও বিমানবন্দরে সতর্কতা 

আতঙ্কে বন্ধ হচ্ছে সারাদেশের ক্যাসিনো 

আতঙ্কে বন্ধ হচ্ছে সারাদেশের ক্যাসিনো 
মতিঝিলের ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবে র‌্যাবের অভিযান - ছবি : জাগরণ
দেশ ছাড়ার চেষ্টায় জুয়ার ব্যবসায়ীরা   

রাজধানীর অভিজাত বিভিন্ন এলাকায় ৬০টি ক্যাসিনোসহ সারাদেশে দুই শতাধিক ক্যাসিনো বা জুয়ার ক্লাব রয়েছে। এসব ক্লাবের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিন শতাধিক ব্যবসায়ী। খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ক্লাব পরিচালনায় উচ্চ পদে রয়েছেন এসব অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত অনেক ব্যক্তি। বৈধ-অবৈধ অস্ত্র ও বডিগার্ড নিয়ে চলাফেরা করেন তারা। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মন্ত্রীর মতো প্রটোকল নিয়ে চলাফেরার কারণে এদের দাপটে তটস্থ থাকে লোকজন। এদের সিংহভাগই বিদেশে গড়ে তুলেছেন সেকেন্ড হোম। সম্প্রতি অভিযানের মুখে অধিকাংশ ক্যাসিনো বন্ধ করে গ্রেফতার এড়াতে এখন তারা পালাচ্ছেন। অনেকে দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে পালানোরও পথ খুঁজছেন।  

ক্যাসিনো বা উচ্চ পর্যায়ের জুয়ার ব্যবসায়ীদের পাকড়াও অভিযান চলমান রয়েছে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ নামধারী ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ধরতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরইমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তিনি রিমান্ডে রয়েছেন। মতিঝিলের ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্স ক্লাব এবং বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্যাসিনোয় অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ২০১ জন আটক হয়েছেন। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) গ্রেফতার হয়েছেন যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম ও তার ৭ দেহরক্ষীকে। অভিযানে বিপুল পরিমাণ টাকা, মাদক, অস্ত্র, গুলি ও ডলার জব্দ করা হয়েছে। 

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কলাবাগান ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্লাব কর্মকর্তা ও কৃষক লীগের নেতা শফিকুল ইসলাম ফিরোজসহ ৫ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। ক্লাব থেকে একটি অস্ত্র, টাকা ও জুয়ার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে শুক্রবার রাতে ধানমণ্ডি ক্লাব, এলিফেন্ট রোডের এজাক্স ক্লাব ও ক্যাসিনো শেড বন্ধ থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার জন্য সিলগালা করা হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই অধিকাংশ ক্যাসিনো ব্যবসায়ীরা ক্লাব বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন। অনেকে গ্রেফতার এড়াতে বিদেশে পালানোর সুযোগ খুঁজছেন। এ কারণে দেশের প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সীমান্তে ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। 
গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, এরইমধ্যে রাজধানীর ২৫টি ক্যাসিনোর তালিকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রয়েছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক ক্যাসিনো রয়েছে। এছাড়া গাজীপুরের টঙ্গী ও চট্টগ্রাম শহরের ২টি জুয়ার আসরে পুলিশ হানা দিয়ে বেশ কিছু জুয়াড়ী ও মদ্যপায়ীকে আটক করেছে। তবে ক্যাসিনোর কোনো সরঞ্জাম সেখানে পায়নি। 
  
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ডিএমপিও ক্যাসিনো ও জুয়ার আসর বিরোধী অভিযান জোরদার করবে। রাজধানীতে বড় ধরনের অন্তত একশো ক্যাসিনো বা জুয়ার আসর রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৬০টি যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত যুবলীগ নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতাদের সংখ্যা সবচেয়ে কম। 

র‌্যাবের অনুসন্ধান সূত্র জানায়, রাজধানীর বহুতল ভবনের ছাদগুলোয় গড়ে তোলা হয়েছে ক্যাসিনো। গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমণ্ডিসহ অভিজাত এলাকায় গেস্ট হাউজের নামে অবৈধ ক্যাসিনো চলে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের একজন কর্মকর্তার একাধিক গেস্ট হাউজ রয়েছে গুলশান এলাকায়। রাত হলেই জমে ওঠে ক্যাসিনোগুলো। দেশের বিভিন্ন এলাকার ধনাঢ্য জুয়াড়ীরা ভিড় করেন সেখানে। জুয়াড়িদের পাশে বসে সঙ্গ দেন সুন্দরী তরুণীরা। সেখানে অবারিত মদ্যপান চলে। 

ক্যাসিনোর টাকার ভাগ কে কে নিতেন তাদের নাম আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বলেছেন গ্রেফতার যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। গত বুধবার রাতে গ্রেফতারের পর র‌্যাব হেফাজতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ক্যাসিনো বাণিজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর আরও বহু তথ্য দিয়েছেন। এই টাকার ভাগ পেতেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, এসি, রাজনৈতিক নেতা, ওয়ার্ড কমিশনার, সাংবাদিক ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা। 

অভিযোগ পাওয়া গেছে, আমেরিকা, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় রয়েছে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের বিলাসবহুল সেকেন্ড হোম। অনেকের স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার-পরিজন সেখানে থাকেন। কোটি কোটি ডলারও তারা সেখানে পাচার করছেন। গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। তাদেরও তালিকা রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। 

এইচ এম/ এফসি

আরও পড়ুন