• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯, ১২:২৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯, ১২:২৫ পিএম

মিথ্যা তথ্য দিয়ে ক্যাসোনি সামগ্রী আমদানি 

পাঁচ আমদানিকারককে শুল্ক গোয়েন্দার জিজ্ঞাসাবাদ 

পাঁচ আমদানিকারককে শুল্ক গোয়েন্দার জিজ্ঞাসাবাদ 
ক্যাসিনো সামগ্রী

ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তথ্য গোপন এবং মিথ্যা ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি দেশে ক্যাসিনোর মতো কোটি টাকার জুয়ার আসরকে আরো প্রসারিত করতে একটি চক্র কাজ করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানিকারক কোম্পানির স্বত্বাধিকারীদের জিজ্ঞাসাবদ শুরু করেছে শুল্ক ও গোয়েন্দারা। 

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সিএন্ডএফ এজেন্ট বেত্রাবতি ট্রেডের মালিক আশরাফুল ইসলামকে শুল্ক গোয়েন্দা একটানা চার ঘণ্টা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক কোম্পানির ৫ মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। 

শুল্ক ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানিকারকদের মধ্যে ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বরে এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স জুতার সরঞ্জাম ও মোবাইল যন্ত্রপাতির ঘোষণা দিয়ে ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে একটি বড় চালান ছাড় করায়। কিন্তু গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে ক্যাসিনো চিপস ও রেসিং কার্ড এসেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ওই চালানে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আনা হয়েছিল বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, একই ভাবে ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে ন্যানাথ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার মাদার বোর্ড ঘোষণা দিয়ে, এ থ্রি ট্রিড ইন্টারন্যাশনাল ২০১৭ সালের আগস্টে জন্মদিনের সরঞ্জাম, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বি পেপার মিলস লিমিটেড ফার্নিচার ঘোষণা দিয়ে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেইম, ক্যাসিনো ওয়ার গেইম টেবিল ইত্যাদি সরঞ্জাম আমদানি করে বলে প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে শুল্ক ও গোয়েন্দার হাতে।

শুল্ক ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে মোট পাঁচটি আমদানিকারকের হাত ধরে আসা এসব চালানের তথ্য বিশ্লেষণ করে ওই তথ্য-প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত এই ধরনের সরঞ্জামের আমদানিকারক হচ্ছে এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স, ন্যানাথ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ, বি পেপার মিলস লিমিটেড ও এ থ্রি ট্রিড ইন্টারন্যাশনাল।

ধারণা করা হচ্ছে, ক্যাসিনোতে জুয়ায় ব্যবহৃত প্রতিটি মেশিন ও সরঞ্জামের দাম প্রায় কয়েক লাখ টাকা থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত। যেখানে বে-নামে এসব সরঞ্জাম এনে সরকারের বিপুল পরিমান টাকার শুল্ককর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনোর মেশিনসহ খেলার বেশিরভাগ সামগ্রী চীন থেকে আমদানি হয়েছে। অর্থপাচারও হয়েছে। একই সঙ্গে ক্যাসিনোতে জুয়ায় টাকা লগ্নিকারী ব্যক্তিদের আয়কর ফাইল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনে আরো বেশি কিছু আমদানিকারকদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে শুল্ক গোয়েন্দার একাধিক টিম। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তথ্য যাচাই করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়া ক্যাসিনো থেকে এসব মেশিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিভাবে এসব মেশিন আমদানি করেছে তা খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা।

প্রসঙ্গত, ঢাকায় ক্যাসিনোতে জুয়ার আসরের নির্মূলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে। গত কয়েকদিনে অনেকগুলো ক্লাবে অভিযান চালিয়ে সেখানে ক্যাসিনোর সন্ধান পেয়েছে তারা। প্রতিটি ক্যাসিনোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাসিনোর দামি মেশিন ও খেলার সামগ্রীর সন্ধান পায়। এসব মেশিন সঠিকভাবে শুল্ককর পরিশোধ করে আমদানি হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ওই প্রশ্নের জবাব দিতে এনবিআর যাচাই বাছাই শুরু করেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.সহিদুল ইসলাম বলেন, কখনো জুতার সরঞ্জাম, কখনো কম্পিউটার এবং মোবাইল পার্টস, আবার কখনো ফার্নিচার। এসব নামে বে নামে দেশে বিভিন্ন সময়ে আমদানি হয়েছে ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত ডিজিটাল জুয়ার সরঞ্জাম। আবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতির সুযোগ নিয়ে সরাসরি ক্যাসিনোর নামে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেইম, ক্যাসিনো ওয়ার গেইম টেবিল ইত্যাদি সরঞ্জাম আমদানি করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তথ্য পেয়েছে।
 
শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সিএন্ডএফ এজেন্ট বেত্রাবতি ট্রেডের মালিক আশরাফুল ইসলাম ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি করে। সোমবার শুল্ক গোয়েন্দারা আশরাফুল ইসলামকে একটানা চার ঘণ্টা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। 

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি অনুসারে এসব পণ্য নিষিদ্ধ কিংবা নিয়ন্ত্রিত তালিকাভুক্ত নয়। আমি আইন-কানুন অনুসরণ করেই আমদানিকারদের পক্ষে যথাযথ শুল্ক ও কর দিয়ে সরঞ্জামগুলো ছাড় করেছি। কোনো অনিয়ম বা মিথ্যা ঘোষণা ছিল না।

এইচ এম/বিএস 
 

আরও পড়ুন